শান্তিনিকেতন, 18 সেপ্টেম্বর : নাম না করে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) ‘বাহুবলী’ বলে তোপ দাগলেন বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati University) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakrabarty) ৷ সূত্রের খবর, গত 16 সেপ্টেম্বর বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, আধিকারিকদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন উপাচার্য ৷ সেখানেই কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যে চৌকিদার ঘুমোচ্ছে, তাঁকে কিছু বললেই সে বাহুবলীর কাছে চলে যাবে ৷ আর বাহুবলী বলবে আমি পাগল ৷’’ প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে পাগল বলে সম্বোধন করেছিলেন অনুব্রত ৷ ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান, অনুব্রতর সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই তাঁকে নিশানা করেছেন উপাচার্য ৷
আরও পড়ুন : Visva-Bharati : এনআইআরএফ ব়্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতীর মান কমায় নিজেদের গাফিলতি স্বীকার উপাচার্যের
ভার্চুয়াল বৈঠকের যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে বারবার নিজের অসহায়তা ও দুঃখের কথা বলতে শোনা গিয়েছে ৷ বৈঠকের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট, ইদানীংকালে চুরির ঘটনা বেড়েছে বিশ্বভারতী চত্বরে ৷ উপাচার্যের কথা থেকেই জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন বিভাগের দামি সামগ্রী, শৌচালয়ের দামি জিনিসপত্র লোপাট হয়ে যাচ্ছে ৷ উপাচার্যের দাবি, এই চুরি আটকানো নিরাপত্তারক্ষীদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ কারণ, তাঁরা অনেকেই তাঁদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করেন না ৷ কিন্তু, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেই তাঁরা স্থানীয় ‘বাহুবলী’র কাছে চলে যান ৷
উপাচার্যের আক্ষেপ, লোকে তাঁকে যা খুশি তাই বলে, কিন্তু কেউ তার প্রতিবাদ করেন না ৷ এমনকী, যে অধ্যাপক ও আধিকারিকরা সামনে তাঁকে সম্মান দেখান, তাঁরাও তাঁর খোঁজ নেন না ৷ বৈঠকে কয়েকজনের নাম করে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, শিক্ষক দিবসে তাঁদের কাছ থেকে কোনও শুভেচ্ছাবার্তা পাননি তিনি ৷ এমনকী, টানা 11 দিন তিনি গৃহবন্দি হয়ে থাকলেও কেউ তাঁর খোঁজ নেননি ৷ বরং বিক্ষোভকারীরাই তাঁর জন্য ফুল রেখে গিয়েছেন !
উপাচার্যের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব বিভাগীয় অধ্যাপক, আধিকারিক ও ছাত্রছাত্রীদেরই নিতে হবে ৷ তা না হলে চুরি ঠেকানো সম্ভব নয় ৷ তাঁর আক্ষেপ, তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করা হলেও কিছু করতে পারেন না তিনি ৷ কারণ, সেই নিরাপত্তারক্ষীরা ভয়ে কোনও অভিযোগই দায়ের করতে চান না ৷ মুখে কিছু না বললেও, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথাই বলতে চেয়েছেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷ উপাচার্যের বার্তা, ভিতরের লোকের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে কখনও এভাবে ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে চুরি সম্ভব নয় ৷ নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে কার্যত অধ্যাপক, আধিকারিকদেরই ‘চোর’ বলে তোপ দাগেন তিনি ৷ তাঁর যুক্তি, এইসব চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক, আধিকারিকরা নিজেদের দায় অস্বীকার করতে পারেন না ৷
স্বাভাবিকভাবেই ভার্চুয়াল বৈঠকের এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক ৷ প্রশ্ন উঠছে উপাচার্যের আচরণ ও ভাষা নিয়ে ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, তিনি যখন চুরি নিয়ে একের পর এক তোপ দাগছেন, তাতে যদি কোনও ভুল বা অসঙ্গতি থাকে, বাকিরা কেন তার প্রতিবাদ করলেন না ? কেনই বা উপাচার্যের সঙ্গে সব কথায় সহমত পোষণ করলেন তাঁরা ? এর উত্তর আপাতত অধরা ৷ প্রসঙ্গত, ইটিভি ভারত এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ৷