রামপুরহাট, 6 মে : কথায় আছে, সোনার গয়নার প্রতি মহিলাদের আকর্ষণ বরাবরের ৷ কিন্তু পড়ে পাওয়া ছ'ভরি গয়না পেয়েও তা প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করলেন না এক মহিলা (Human Interest Story) ৷ চতুর্দিকে অসততার বিষাক্ত বাষ্পের মধ্যে এক ঝলক সততার ছবি উঠে এল বীরভূমে (Story of Honesty about Gold Recovery in Birbhum) ৷ ঘটনাস্থল বীরভূমের রামপুরহাট থানার হরিওকা গ্রাম (Rampurhat News) ৷
বিয়েবাড়ি-সহ গ্রামের নানা অনুষ্ঠানে পড়বেন বলে লকার থেকে সোনার গয়না বের করে বাড়িতে আনেন হরিওকা গ্রামের বাসিন্দা অপর্ণা মণ্ডল ৷ অনুষ্ঠান মিটতেই তড়িঘড়ি খড়গপুরে কর্মরত ছেলের কাছে চলে যেতে হয় তাঁকে ৷ যাওয়ার আগে কত্তাকে বলে যান, চালের বস্তায় গয়নাগুলো রেখে গেলাম ৷ তুমি সময় করে লকারে দিয়ে এস ৷
এরপর 20 দিন কেটে গিয়েছে ৷ গিন্নির কথা ভুলে গিয়ে গয়না-সহ সেই চালের বস্তা আড়তদারের কাছে বিক্রি করে দেন অপর্ণাদেবীর স্বামী কুমুদরঞ্জন মণ্ডল ৷ প্রায় এক মাস পর বাড়ি ফিরে এসে ভিখারিকে চাল দিতে গিয়ে অপর্ণাদেবী দেখেন চালের বস্তা নেই ৷ স্বামীকে জিজ্ঞাসা করতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর ৷ তাঁর বড় সখের গয়না এভাবে চলে গেল ৷ হা-হুতাশের সঙ্গে চলতে থাকে স্বামীর উপর চোখা চোখা বাক্যবাণ ৷
আরও পড়ুন : অসুস্থ মায়ের মাথায় জলপট্টি, একরত্তি শিশুর মানবিকতায় হতবাক পথচলতি মানুষ
তবে হতদ্যোম না হয়ে খোঁজ করতে থাকেন কোন ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি হয়েছে চালের বস্তা ৷ সেই ফেরিওয়ালার খোঁজ পেয়ে খোঁজ মেলে আড়তদারেরও ৷ যেখানে ফেরিওয়ালা বিক্রি করেছেন চালের বস্তা ৷ দুপুরেই গ্রামের অদূরে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে আড়তদারের কাছে যান কত্তা-গিন্নি ৷ চালের আড়তদার বরকত আলি অবশ্য নিরাশ করেননি তাঁদের (Example of Honesty) ৷ চাল কেনার পর যা যা ঘটনা ঘটেছে, সবই খুলে বলেন তিনি ৷
সেদিন চাল আনার পরই আড়তদার বরকত আলির স্ত্রী জাহেরুন্নিশার চোখে পড়ে বস্তার ভিতরে গয়না রয়েছে ৷ সোনার গয়না বুঝতে পেরে ফেরিওয়ালার দৃষ্টি ঘোরাতে তাঁকে জাহেরুন্নিশা বলেন, "ওই গয়নাগুলো সিটি গোল্ডের ৷ ওগুলো আমায় দিয়ে দাও ৷" সেই মতো গয়নাগুলি নিজের কাছে সযত্নে রেখে দেন তিনি ৷
আরও পড়ুন : রাস্তায় কাতরাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা, সাহায্যের হাত কলকাতা পুলিশের
জাহেরুন্নিশা বলেন, "আমার বিশ্বাস ছিল যাঁর গয়না তিনি ঠিক খোঁজ করবেন ৷ সেই মতো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম ৷ স্বামী যখন ফোন করে বললেন দু'জন গয়নার খোঁজে এসেছেন এবং তাঁদের পরিস্থিতির কথা শুনে বুঝতে পারি যে সত্যিই গয়নাগুলো ওঁদের ৷ তাই পরের দিন বাড়ি ফিরে গয়নাগুলো ওঁদের হাতে তুলে দিই ৷"
সেদিন আড়তদারের স্ত্রী বাড়িতে না থাকায় গয়না ছাড়া ফিরতে হলেও গোটা ঘটনা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন অপর্ণাদেবী ৷ শুক্রবার গয়না হাতে পেয়ে তিনি বলেন, "আমার দুই ছেলে ৷ আজ থেকে বরকত আমার আরেকটা ছেলে ৷ ওঁরা যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না ৷ আমি ওকে ছেলে বলে গ্রহণ করলাম ৷"
রাজ্যজুড়ে যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে তার মধ্যে বীরভূমের এই ঘটনা প্রমাণ করে ভাল মানসিকতার মানুষ এখনও রয়েছেন (Example of Humanities Story) ৷ তাই খারাপের মধ্যেও এই সমস্ত ভাল ঘটনা নজির হয়ে থেকে যায় ৷
আরও পড়ুন : Teacher Counselling Cancer Patients : বিনা পারিশ্রমিকে ক্যানসার রোগীদের কাউন্সেলিং করছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক