তারাপীঠ, 21 জুন: প্রত্যেক বছরের মতো এবারেও তারাপীঠে পালিত হল রথযাত্রা ৷ তবে সেই রথে ছিল না বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ । কারণ, তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা । ভক্ত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন । সেই পিতলের রথেই মঙ্গলবারও মা তারাকে বসিয়ে ঘোরানো হয় । প্রতি বছরের মতো মা তারার রথযাত্রা দেখতে উপচে পড়ে ভিড় । বহু মানুষ তাঁদের পরিবারের মঙ্গল কামনার জন্য এখানে আসেন দর্শন করতে ৷ হাজার হাজার ভক্তদের মধ্যে মণ্ডা, মিঠাই বিতরণ করা হয়।
কলকাতার ইসকন, হুগলির মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রায় বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে পরিক্রমা করেন । ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথ । কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা । তারাপীঠের রথযাত্রা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ কেউই সঠিক জানে না ৷ তবে মন্দিরের সেবায়েত সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠে রথের প্রচলন করেছিলেন । মা তারার জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি পিতলের রথ । সেই রথেই আজও মা তারা গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে তারাপীঠে ঘোরেন। মা তারার রথ রাখার জন্য ঘরও তৈরি করা হয়েছিল । জানা গিয়েছে, যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়।
সারা বছর ওই ঘরেই পিতলের রথকে রাখা হয় । রথের ঘরটি তৈরি করেছিলেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধু খাঁ। সেই বহু প্রাচীন রীতি মেনে মঙ্গলবার বিকেলে মা তারাকে ওই রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠে। বেলা 3টে নাগাদ মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। তারপরই হাজার হাজার মায়ের ভক্ত রথের রশিতে টান দেয় ।
আরও পড়ুন: পুরী থেকে আগত সেবায়েতের হাতেই কলকাতায় রান্না হল জগন্নাথের বিশেষ ভোগ
তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, "রথ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা আর আজ বলা সম্ভব নয় । রীতি মেনে প্রতি বছরের মতো আজও মা তারা রথে চেপে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করেছেন। সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয় মা তারাকে।" রথ থেকেই ভক্তদের উদ্দেশে প্যাঁড়া, বাতাসা, মণ্ডা বিতরণ করা হয় । সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় । কারণ কথিত আছে, এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না । সেই বিশ্বাসে প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার হাজার ভক্ত ভিড় জমিয়েছিলেন তারাপীঠে ।