বীরভূম, 10 এপ্রিল: দেউচা-পাচামিতে কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ রুখতে রাজভবন অভিযান শুরু করল আদিবাসীরা ৷ তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই জমি বাঁচাতে এ দিন মথুরাপাহাড়ি থেকে এই অভিযান শুরু করলেন খনি বিরোধী আদিবাসী সমাজের নাগরিকের একাংশ ৷ 14 এপ্রিল তাঁরা কলকাতায় গিয়ে পৌঁছবেন ৷ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দাবিপত্র তুলে দেবেন দেউচা-পাচামির আদিবাসী নেতারা ৷
আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনি হতে চলেছে বীরভূমের দেউচা-পাচামি ৷ এই দেউচা-পাচামি হল বীরভূমের মহম্মদবাজার হরিণ সিং কোল ব্লক ৷ 3400 একর জমি নিয়ে 1178 মিলিয়ন হেক্টর কয়লা ব্লক রয়েছে ৷ 1148 মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট শিলা জমা রয়েছে ৷ এই 3400 একরের মধ্যে 1 হাজার একর সরকারি জমি ৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এই এলাকায় 12টি গ্রামে 4314টি বাড়িতে কমপক্ষে 21 হাজার মানুষ বসবাস করেন ৷ যার মধ্যে 3600 জন তফসিলি জাতিভুক্ত এবং 9034 জন তফসিলি উপজাতিভুক্ত ৷
দেউচা-পাচামিতে 35 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ এর মধ্যে 10 হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজে খরচ করা হবে ৷ এমনটাই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, বিষয় হল এই খোলা মুখ কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য এত মানুষের বসতি অন্যত্র সরাতে হবে ৷ পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হবে ৷ বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে ৷
তাই প্রথম থেকেই জমি না দিতে চেয়ে খনি বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেউচা-পাচামির বাসিন্দারা ৷ যাদের মধ্যে অধিকাংশ আদিবাসী মানুষজন ৷ তাঁদের স্পষ্ট অভিযোগ, এই প্রজন্ম না হয় জমি দিয়ে সরকারের কাছে অর্থ ও চাকরি পাবে ৷ পরবর্তী প্রজন্মের কী হবে ? দেউচা-পাচামি বাসিন্দাদের দাবি, জল, জঙ্গল, জমির অধিকার আদিবাসীদের ৷ সেই সাংবিধানিক অধিকার তাঁদের দিতে হবে ৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদের অভিযোগ তোলা হয়েছে ৷ সংবিধান অনুযায়ী, গ্রামসভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিও তুলেছে আদিবাসী এই সমাজ ৷ কয়লা খনির বিরুদ্ধে সরব বাসিন্দারা এই সকল দাবিতে এ দিন রাজভবন অভিযান শুরু করেছে ৷
আরও পড়ুন: দেউচায় খনি চাই ! মুখ্যমন্ত্রীর আগমনে 'বহিরাগত'দের হাতে ধরানো হল ব্যানার
তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে দেউচা-পাচামির মথুরাপাহাড়ি গ্রাম থেকে শুরু হয়েছে রাজভবন অভিযান ৷ সিউড়ি শহরে এসে জেলাশাসক বিধান রায়কে একটি ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন তাঁরা ৷ 11 এপ্রিল তাঁরা বোলপুরে পৌঁছে রাত্রিবাস করবেন ৷ পরের দিন বর্ধমান, অশোকনগর হয়ে 14 এপ্রিল কলকাতা পৌঁছাবেন ৷ আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে জমায়েত করবেন খোলামুখ কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী আদিবাসী মানুষজন ৷ পরে তাঁদের নেতারা দাবিপত্র নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করবেন ৷