রামপুরহাট, 30 ডিসেম্বর: ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নাই ছিল যথেষ্ট। তাই সাত পাঁচ না ভেবেই নিজের কর্তব্য পালন করলেন হাসপাতালের নার্স, যিনি আসলেই 'সেবিকা'। পালন করলেন নিজের ধর্ম। খিদের চোটে চিৎকার করা নবজাতককে স্তন্যপান করিয়ে তাঁকে শান্ত করলেন তিনি। ঘটনা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের।
নবজাতকটি মায়ের মারাত্মক জ্বরে আক্রান্ত। তাই শিশুর কান্নার কারণ জেনেই নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন হাসপাতালের নার্স রিয়া দাস। জানা গিয়েছে, গত দু'দিন আগে অসুস্থ অবস্থায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি হয়েছে সাতদিনের এক শিশু । এত ছোট শিশুর সঙ্গে মাও ছিলেন হাসপাতালে । তবে হঠাৎই ওই শিশুর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন । 105 জ্বর নিয়ে কাঁপতে থাকেন তিনি । বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় । এ দিকে, মায়ের দুধ না পেয়ে খিদেয় চিৎকার করতে থাকে সাতদিনের শিশুটি । খিদের যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা শিশুটির কান্না কানে আসে রিয়ার ৷ তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন ৷ তাঁর খিদে পেয়েছে বুঝতে পেরে শিশুটিকে স্তন্যপান করান ওই নার্স ৷ এরপরে পেটে ভরতেই শান্ত হয়ে যায় অসুস্থ শিশুটি ।
রামপুরহাটবাসীরা রিয়াকে নিয়ে রীতিমতো গর্ববোধ করছেন । আসলে সেবিকার পেশা যে মানুষের সেবা করাই, সেটাই প্রমাণ করলেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিয়া দাস । তাঁর বাড়ি বীরভূমের সিউড়িতে । তিনি একটি 10 মাসের শিশুকন্যার মা । প্রতিদিন প্রায় 50 কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন রিয়া । বৃহস্পতিবার তাঁর নাইট ডিউটি ছিল । সেই সময় শিশুটিকে কাঁদতে দেখেন তিনি ৷ তা শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ৷
তিনি বলেন, "ওই শিশুর মায়ের বয়সও খুব অল্প । তার উপর প্রবল জ্বরে রাতে কাঁপছিলেন । বাচ্চাটাও খুব চিৎকার করছিল । আমার মনে হল ওর খুব খিদে পেয়েছে । তাই আমি ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুধ খাওয়ালাম, মায়ের চিকিৎসাও করলাম । আসলে আমার বাড়িতেও তো ছোট বাচ্চা আছে । তাই ওদের কষ্ট বুঝতে পারি ।"
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ ঝর্ণা দাস বলেন, "নার্সিং সেবামূলক কাজ, চাকরি ঠিক নয় । এটা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন রিয়া দাস । অসুস্থ মায়ের চিন্তা ঘুচিয়ে শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে ওঁ নজির গড়ল ।" এমএসভিপি পলাশ দাসের বক্তব্য, "রিয়ার জন্য আমরা গর্বিত । মানবিকতার নজির গড়লেন তিনি । স্তন্যপান করিয়ে শিশুটির আর এক মা হয়ে উঠলেন ।"
আরও পড়ুন: