বীরভূম, 7 জানুয়ারি: গরু ও কয়লাপাচার নিয়ে সিবিআই ও ইডি-র তদন্তের মাঝেই বীরভূম জেলা জুড়ে রমরমিয়ে বেআইনি বালির কারবার অভিযোগ উঠেছে (Illegal Sand Mining from Ajay River in Birbhum) ৷ বিশেষ করে বীরভূমের ইলামবাজার, জয়দেব, সেনকাপুর, নানুর, লাভপুর এলাকায় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য তুঙ্গে ৷ প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা কার্যত উপেক্ষা করে অজয় নদ থেকে আর্থ মুভার, হাইড্রা মেশিন নামিয়ে চলছে বালি তোলার কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ নাকের ডগায় চুরি করা বালিপাচার হচ্ছে বীরভূম ও দুই বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ৷ কিন্তু, প্রশাসনের তরফে সেদিকে কোনও নজর দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
এই প্রসঙ্গে বিজেপির তরফে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে ৷ দাবি করা হয়েছে, তোলাবাজির টাকা পেয়ে প্রশাসন তৃণমূলের বালি মাফিয়াদের ছাড় দিয়েছে ৷ বিজেপির সাংগঠিক জেলা বোলপুরের সদস্য কাঞ্চন ঘোষ বলেন, "দানবের মত মেশিন নামিয়ে নদী থেকে বালি তুলছে ৷ এতে নদীর ক্ষতি হচ্ছে ৷ এগুলো দেখার কথা প্রশাসনের ৷ সেই প্রশাসনই তোলার টাকা নিয়ে ছাড় দিচ্ছে ৷ তৃণমূলের বালি মাফিয়ারা ছাড়পত্র পাচ্ছে বালির তোলায় ৷’’
গরুপাচার মামলায় সিবিআই ও ইডি যৌথভাবে তদন্ত করছে ৷ যার জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেন ৷ একইভাবে কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। যার যোগও বীরভূমে রয়েছে বলে অভিযোগ ৷ এরই মাঝে এই জেলায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বালির কারবার ৷ বীরভূম ও বর্ধমানের মাঝে বয়ে চলা অজয় নদে একাধিক বালির ঘাট রয়েছে ৷ সেই বালিঘাটগুলি থেকে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ অজয় নদের জয়দেব, ইলামবাজার, সেনকাপুর, শিমূলিয়া, নানুর প্রভৃতি এলাকায় বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য তুঙ্গে ৷
প্রসঙ্গত, নদী বক্ষ থেকে আর্থ মুভার, হাইড্রা প্রভৃতি মেশিন নামিয়ে বালি তোলার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকে ৷ কারণ, মেশিন দিয়ে বালি তুললে নদীর গতিপথ বদলাতে পারে ৷ যাতে ক্ষতি হয় নদীর পাড় সংলগ্ন চাষ যোগ্য জমি ও বসতির ৷ কিন্তু, প্রশাসনকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অজয় নদের ইলামবাজার ও সেনকাপুরে দেখা গেল প্রকাশ্যে মেশিন নামিয়ে চলছে বালি তোলার কাজ ৷ একেবারে অজয় নদের মাঝখান থেকে বালি তোলা হচ্ছে ৷ অভিযোগ সেই বালি বীরভূম-সহ দুই বর্ধমান জেলায় পাচার করা হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: দিনের আলোয় মহানন্দার চর থেকে বালি চুরি মাফিয়াদের
আর এই দেদার বালি পাচারের ঘটনায় প্রশাসনের কোনও নজর নেই বলে অভিযোগ। এমনকি, এই বালিঘাটগুলি থেকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে রাজস্ব জমা পড়ে কিনা, তারও সদুত্তর নেই কারও কাছে ৷ বালির ঘাটে কর্মরত কর্মীদের প্রশ্ন করা হলে, তারা 'কিছুই জানি না' বলে এড়িয়ে যান ৷ রাজ্যের মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, ‘‘বিরোধীদের মিথ্যা অভিযোগ ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ আছে, কোনরকম বেআইনি কাজ করা যাবে না ৷ সেই নিয়ে প্রশাসনও কাজ করছে। তারপরেও যদি হয়, পুলিশ-প্রশাসনকে বলব দেখে নেওয়ার জন্য ৷’’