নলহাটি, 2 অগস্ট: উপনয়ন একটি সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৈদিক ও শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান । এর মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বী বালকেরা পৈতে ধারণ করে থাকে । পৈতের আরেক নাম 'যজ্ঞপরীত' বা 'প্রতিজ্ঞা সূত্র' । এই অনুষ্ঠানে তিনটি আলাদা আলাদা সুতো গিট দিয়ে বেঁধে তৈরি হয় পৈতে । পাশাপাশি সনাতনী প্রায় প্রতিটি পুজোয় প্রয়োজন পৈতে । সেই পৈতে তৈরি করে গ্রামে সমৃদ্ধি ফেরাচ্ছেন বীরভূমের নলহাটি 2 নম্বর ব্লকের শীতলগ্রামের বাসিন্দা শঙ্কর মহারাজ । তাঁর কাছে কাজ করে বহু গৃহবধূ আজ স্বচ্ছলভাবে সংসার চালাতে পারছেন । গ্রামের মধ্যে যেন ছোটখাটো শিল্প গড়ে ফেলেছেন তিনি । তবে কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি (Housewives earns making sacred threads in Nalhati Birbhum) ।
ছোট থেকে বাবাকে বাড়িতে পৈতে তৈরি করতে দেখেছেন শঙ্কর মহারাজ । 1987, সে সময় তিনি মাধ্যমিকের ছাত্র । এই কাজে হাতেখড়ি তাঁর । প্রথম দিকে জমি বন্ধক দিয়ে পৈতে তৈরির কাজ আরম্ভ করেন । পরে ব্যবসা লাভের মুখ দেখায় সেই জমি ফিরিয়ে নেন । শুধু যে নিজের পরিবারে সমৃদ্ধি ফিরেছে, তাই নয়, গ্রামের বেশ কিছু পরিবারে তিনি কর্মসংস্থান গড়ে দিয়েছেন ।
শঙ্কর মহারাজের ব্যবসায় এখন টাকার মুখ দেখছে গ্রামও । শঙ্কর জানান, কলকাতা থেকে সুতো কিনে এনে বাড়িতে পৈতে তৈরি করেন । মোট 42 রকমের পৈতে তৈরি হয় শঙ্করের মিনি ইন্ডাস্ট্রিতে । সব থেকে বেশি হয় সাদা পৈতে । এছাড়া নীল, হলুদ রঙের পৈতেও তৈরি করা হয় ।
আরও পড়ুন: বেকারত্বের জ্বালা ! 'টেনশন দেবতা'র আরাধনায় যুবকরা
গ্রামের পৈতে মহাজন আরও জানান, শ্রাবণ মাসে গ্রহরাজ বা শনিপুজোয় নীল পৈতে লাগে । এছাড়া হিন্দিভাষীদের মধ্যে হলুদ পৈতের চাহিদা বেশি । তিনি বলেন, "কলকাতা থেকে সুতো নিয়ে এসে বাড়িতে সাবু ও অ্যারারুট ময়দা দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পরে রোদে শুকোতে হয় । এরপর বিভিন্ন প্রকার পৈতে তৈরি করা হয় ।" এতে গ্রামের বেশ কিছু গৃহবধূ সামিল হয়েছেন । তাঁদের অনেকেই প্রতিদিন 150-500 টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন । সেই পৈতে প্যাকেটজাত হয়ে চলে যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে । তবে সরকার একটু সহযোগিতা করলে ব্যবসা আরও বাড়াতে পারতাম ।
পৈতে তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শীতলগ্রামের গৃহবধূ রাখি সূত্রধর, বাসনা মণ্ডলরা । তাঁরা বলেন, "স্বামীর একার আয়ে সংসারে সংকুলান হয় না । তারপরেই আমরা এখানে পৈতে তৈরিতে হাত লাগায় । পৈতে তৈরি করে আমরা যা পারিশ্রমিক পাই, তাতে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা থেকে নিজেদের হাতখরচা হয়ে যায় । আমরা কেউ 10 বছর, কেউবা 15 বছর ধরে পৈতে তৈরির কাজ করছি ।"
আরও পড়ুন: মালদায় সিল্ক পার্ক তৈরি হলেও ব্রাত্য চাষিরা, সরকারি উদ্যোগ ঘিরে উঠছে প্রশ্ন