বোলপুর, 20 অক্টোবর : বন্ধ হওয়ার মুখে প্রায় 200 বছরের প্রাচীন বোলপুরের সুরুল গ্রামের বাজি কারখানা । একসময় এই কারখানা থেকে রায়পুর রাজবাড়িতে বাজি যেত । কোরোনা পরিস্থিতিতে এবার বরাত আসেনি বললেই চলে । খুচরো বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রমিকরা । সামনেই দীপাবলি । তাঁদের আশার আলো দেখাতে পারবে কি আলোর উৎসব ?
গত বছর পর্যন্তও সুরুল জমিদার বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় বাজি গিয়েছে । পৌষমেলায় বাজি সরবরাহ করত এই কারখানা । গত দু'বছর তাও বন্ধ । বহুদিন আগেই বন্ধ হয়েছে শব্দবাজির বিক্রি । এবার পুজোয় এখনও বরাত মেলেনি । বোলপুরের একমাত্র বাজির কারখানাটি কার্যত ধুঁকছে, তা বলাই যায় ।
বোলপুরের একমাত্র বাজির কারখানা রয়েছে সুরুল গ্রামে । এই কারখানা প্রায় 200 বছরের পুরনো । বর্তমানে এই বাজির কারখানা প্রায় বন্ধের মুখে । কোরোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত বরাতই বাতিল হয়েছে । মেলেনি নতুন বরাতও । বাজি কারখানার মালিক চিন্ময় মালাকার বলেন, এক সময় রায়পুর রাজবাড়িতে বাজি যেত এই কারখানা থেকে । সুরুল গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে এই রাজবাড়ি । বর্তমানে রাজবাড়ির অস্তিত্বটুকু আছে মাত্র । বাজির বরাত বন্ধ হয়েছে কয়েক যুগ আগেই ।
গত বছর পর্যন্ত বাজির বরাত মিলেছে সুরুলের ছোটো ও বড় জমিদার বাড়ি থেকে । এ'বার সে বরাতও মেলেনি । পরিবেশ আদালতের রায়ে দু'বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলায় বাজি পোড়ানোর রেওয়াজ । এক সন্ধ্যায় এক লাখ টাকার বেশি বাজির বরাত মিলত সেখান থেকে । গত দু'বছর তাও বন্ধ । এখনও বরাত মেলেনি শ্রীনিকেতন মেলা, বক্রেশ্বর মেলা থেকে । সে বরাত মিলবে কি না জানেন না কেউ ।
বহুদিন আগেই শব্দ বাজিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে । শব্দবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষতির শিকার হয়েছিল সব বাজির কারখানাই । তবুও ফুলঝুরি, তুবড়ি, রং মশাল, চরকি, রকেট, তারা কাঠি, ফানুস প্রভৃতি তৈরি হচ্ছিল । এভাবেই চলছিল বাজির কারখানা । খুচরো বাজি 5 টাকা, 10 টাকা থেকে শুরু করে বড় বাজি 6000 টাকা পর্যন্ত দাম । শব্দবাজির বিক্রি না থাকলেও এই সকল বাজির বিক্রি ছিল তুঙ্গে ।
বর্তমানে কোরোনা পরিস্থিতিতে পুজো কমিটি, বিয়ে বাড়ি সহ অন্য কোনও জায়গা থেকে বরাত আসেনি । প্রতি বছর পুজোর আগে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার বাজির বরাত আসত । কাঁচামালের টাকা ও কারিগরদের মজুরি দেওয়াই দায় হয়ে উঠেছে । এবছর সবই বন্ধ । তাই এই বাজি কারখানা কার্যত ধুঁকছে ।
চিন্ময় মালাকারবাবু, "এবার একদমই বাজির বরাত নেই । মজুরি দিতে পারছি না শ্রমিকদের । কী করে কারখানা চলবে জানি না । আমাদের পাঁচ পুরুষের এই কারখানা থেকে বহু রাজবাড়ি-জমিদার বাড়িতে বাজি গিয়েছে । এ'বছর সব বন্ধ ।" মজুরির আশাও করছেন না শ্রমিকরা । সামান্য বরাত এলে কিছু টাকা পাবেন বলে আশা করছেন বিশ্বজিৎ বাগদিদের মতো কারখানার কর্মী ।