বাঁকুড়া, 30 জুলাই : ফুসফুসের অপারেশনের জন্য নেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ৷ তা সত্ত্বেও জটিল অস্ত্রোপচার করে রোগীকে বাঁচালেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ।
মর্জিনা বিবি ৷ বাড়ি বাঁকুড়ার সানাবাঁধে ৷ 9 মাস ধরে পেটে যন্ত্রণা এবং কাশিতে ভুগছিলেন । চলতি মাসের 15 তারিখ বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয় । সেই সময় তাঁর পেটের ডানদিকের উপরের অংশে এবং বুকের ডানদিকে ব্যথা ছিল ৷ প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধপত্র দেওয়া হয় ৷ কিন্তু তাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি ৷ এরপরই চিকিৎসকদের পরামর্শে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হয় ৷ রিপোর্টে দেখা যায় যকৃতে এবং ফুসফুসের ডানদিকে সিস্ট রয়েছে । সিটি স্ক্যান করার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন সেগুলি আসলে হাইডাটিড সিস্ট (Hydatid cyst) ৷
কিন্তু কী এই হাইডাটিড সিস্ট ?
হাসপাতালের চিকিৎসক উৎপল দে বলেন, কুকুরের শরীরে যে ফিতাকৃমি থাকে তেমনই ফিতাকৃমি মর্জিনা বিবির শরীরে প্রবেশ করেছে ৷ খাবার অথবা অন্য কোনও মাধ্যমে শরীরে ঢুকে গিয়ে সিস্টের আকার ধারণ করেছে । শুধু তাই নয়, এই সিস্টের ভিতরেও একই সঙ্গে অসংখ্য সিস্ট তৈরি হয় । মর্জিনা বিবির যে সিস্টগুলি বের করা হয়েছে তার ভেতরে হাজারের বেশি সিস্ট মিলেছে বলেও জানান চিকিৎসকরা । এগুলি এক ধরনের টক্সিক ফ্লুইড সম্পন্ন সিস্ট যা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে স্তব্ধ করে দিতে পারে ৷ যার ফলে যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে রোগীর ৷
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওথোরাসিক সার্জারির জন্য নির্দিষ্ট কোনও বিভাগ নেই ৷ ফুসফুসের অপারেশনের জন্য এই বিভাগটি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ৷ কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল ৷ আর্থিক সামর্থ্যও তেমন ছিল না ৷ তবে হাসপাতালে দক্ষ চিকিৎসক এবং আধুনিক মেশিনপত্র থাকায় জটিল এই অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেওয়া হয় ৷ 24 তারিখ অপারেশন করা হয় ৷ চিকিৎসক উৎপল দে-র নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল এই অপারেশন করেন ৷ 4 ঘণ্টার চেষ্টায় যকৃত এবং ফুসফুস থেকে সিস্টগুলো বার করা হয় ৷ অস্ত্রোপচারের পর রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ৷
রোগীর আত্মীয় আনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁদের কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা ছিল না ৷ অস্ত্রোপচারের পর রোগী এখন ভালো আছে ৷ স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করছে ৷