ETV Bharat / state

ক্ষুদিরামের জন্য নয় বাঁকুড়ার এই গ্রামের পরিচয় মাওবাদী তাণ্ডবে ! - ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ক্ষুদিরাম বসুর পা পড়ত এই গ্রামে ৷ কিন্তু, পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই গ্রামের নাম ৷

ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তি
author img

By

Published : Aug 11, 2019, 12:02 AM IST

Updated : Aug 11, 2019, 12:16 AM IST

বারিকুল, 11 অগাস্ট : জায়গাটা এখনও বাঁধানো ৷ রয়েছে ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তি ৷ সেখান থেকে মেরেকেটে 500 মিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এক গুহা ৷ এককালে যেখানে অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে পা পড়ত ক্ষুদিরাম বসুর ৷ কিন্তু, ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়নি সেই কাহিনী ৷ যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন অসংখ্য বিপ্লবী, সেই এলাকাই আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ৷ পুলিশ-মাওবাদী সংঘর্ষে ঝরেছে রক্ত ৷ কিন্তু, অন্তরালে থেকে গেছে সেখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ৷ বরং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব সংকটের মুখে সেই গুহাও ৷

বাঁকুড়া জেলার একেবারে দক্ষিণে বারিকুল থানার ছেঁদাপাথর গ্রাম । বাঁকুড়া সদর থেকে দূরত্ব প্রায় 80 কিলোমিটার ৷ পাথুরে অঞ্চল ৷ চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা ৷ স্বাধীনতার ইতিহাসে সেভাবে ঠাঁই না পেলেও বাঁকুড়ার এই গ্রামের একটি গুহা কীভাবে বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা হয়ে উঠেছিল? উত্তরটা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে ঠিক 116 বছর ৷

Khudiram Bose
জঙ্গলঘেরা রাস্তা

অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্তর্গত মুগবেড়িয়া ৷ সেখানকার জমিদার ছিলেন দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধি ৷ বরাবরই স্বদেশি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন ৷ 1903 সালে মেদিনীপুরে আসেন ভগিনী নিবেদিতা ৷ দেশের জন্য অনুশীলন সমিতিতে যোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন ৷ কিন্তু, প্রথমে তাঁর অনুরোধ মানা হয়নি ৷ পরে সুযোগ মেলে যোগ দেওয়ার ৷ ইতিমধ্যে 1905 সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন ৷ আরও জোরদার হয়ে ওঠে স্বদেশি আন্দোলন ৷ ঘরে ঘরে তখন স্বদেশি ভাবধারার বিস্তার ঘটছে ৷ দেশের জন্য এগিয়ে আসছেন অসংখ্য যুবক ৷ তাঁদের দমন করতে তৎপর ছিল ইংরেজরা ৷ তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন গোপন আস্তানা, লোকচক্ষুর আড়ালে নিরাপদ জায়গার ৷ কিন্তু, মেদিনীপুরে ইংরেজ পুলিশের রক্তচক্ষু এড়িয়ে কোথায় বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে? 1906 সালে উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব পান দিগম্বরবাবু ৷ যোগাযোগ করেন পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অম্বিকানগরের জমিদার রাইচরণ ধবলদেবের সঙ্গে । রাইচরণবাবুও বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুব্ধ ছিলেন ৷ তাঁর সাহায্যে অম্বিকানগরের কাছে সাদা পাথর জঙ্গলে গুহার মধ্যে গড়ে তোলা হয় প্রশিক্ষণ শিবির ৷ দৈর্ঘ প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার ৷ বৈপ্লবিক আন্দোলনের রেশ বাঁকুড়ায় পড়লেও জেলাটি ইংরেজদের বিশেষ নজরে ছিল না ৷ এটাকেই হাতিয়ার করেন বিপ্লবীরা ৷ নিরিবিলি জঙ্গলের মধ্যে পাথরের গুহায় চলত অস্ত্র প্রশিক্ষণ ৷ শেখানো হত বোমা বাঁধার কৌশল ৷ অনুশীলন সমিতির সদস্য হওয়ার সুবাদে আস্তানায় আসতেন ক্ষুদিরাম বসুও ৷ আলোচনা করতেন অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে ৷ 1907 সালের নভেম্বর মাস থেকে 1908 সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই গোপন আস্তানায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলেছিল ৷

Khudiram Bose
এখানে বসে আলোচনা করতেন বিপ্লবীরা

সেই গুহার বর্তমানে কী অবস্থা তা দেখতে যাওয়া হয় ছেঁদাপাথর গ্রামে ৷ বিপ্লবীরা যেখানে বসে আলোচনা করতেন সেটিকে বাঁধানো হয়েছে ৷ গড়া হয়েছে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তি ৷ সেখান থেকে 500 মিটার দূরেই রয়েছে গুহাটি ৷ তবে, এখন সেটিকে পাথর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষুদিরাম মাহাত বলেন, "ক্ষুদিরাম বসু বঙ্গভঙ্গের সময় এখানে আসতেন ৷ আত্মগোপন করতেন ৷ তবে ভিতরে কী রয়েছে তা পরিষ্কার নয় ৷ 10-12 ফুট নিচে পাথর বসানো রয়েছে ৷ সেখানে কোনও কিছু আঘাত করলে আওয়াজ হয় ৷ গুহাটি গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উলফার্নের খনির কাছে উঠেছে ৷" জঙ্গলটি এখন "ক্ষুদিরামের আশ্রয়" হিসেবে পরিচিত ৷ ছেঁদাপাথর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মানস মুখার্জি বলেন, "স্কুলে এসে শুনেছিলাম, এখানে ক্ষুদিরাম বসু আসতেন ৷ গুহার মধ্যে বিভিন্নরকম বৈপ্লবিক কাজ চলত ৷"

Khudiram Bose
এখানেই ছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা

বাঁকুড়ার জেলাশাসক ডাঃ উমাশঙ্কর এস বলেন, "এলাকাটিকে জনপ্রিয় বানানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি ৷ স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব আমরা রাজ্য সরকারকে দেব ৷" তিনি আরও জানান, ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ও বলিদান দিবস স্মরণ করে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় ৷ কিন্তু, তা সীমিত রয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে ৷ ছড়িয়ে পড়েনি রাজ্যের অন্য প্রান্তে ৷ ঠাঁই পায়নি ইতিহাস বইয়ের পাতাতেও ৷ তাই স্বদেশি আন্দোলনের সাক্ষ্য বহন করা এই গ্রামকে (বিশেষত বারিকুল থানা) আজ মানুষ জানে মাওবাদী আর যৌথবাহিনীর সংঘাতের কারণে ৷ সত্যিই, বিচিত্র এক দেশ !

দেখুন ভিডিয়ো

বারিকুল, 11 অগাস্ট : জায়গাটা এখনও বাঁধানো ৷ রয়েছে ক্ষুদিরামের আবক্ষ মূর্তি ৷ সেখান থেকে মেরেকেটে 500 মিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এক গুহা ৷ এককালে যেখানে অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে পা পড়ত ক্ষুদিরাম বসুর ৷ কিন্তু, ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়নি সেই কাহিনী ৷ যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন অসংখ্য বিপ্লবী, সেই এলাকাই আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে ৷ পুলিশ-মাওবাদী সংঘর্ষে ঝরেছে রক্ত ৷ কিন্তু, অন্তরালে থেকে গেছে সেখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ৷ বরং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব সংকটের মুখে সেই গুহাও ৷

বাঁকুড়া জেলার একেবারে দক্ষিণে বারিকুল থানার ছেঁদাপাথর গ্রাম । বাঁকুড়া সদর থেকে দূরত্ব প্রায় 80 কিলোমিটার ৷ পাথুরে অঞ্চল ৷ চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা ৷ স্বাধীনতার ইতিহাসে সেভাবে ঠাঁই না পেলেও বাঁকুড়ার এই গ্রামের একটি গুহা কীভাবে বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা হয়ে উঠেছিল? উত্তরটা জানতে পিছিয়ে যেতে হবে ঠিক 116 বছর ৷

Khudiram Bose
জঙ্গলঘেরা রাস্তা

অবিভক্ত মেদিনীপুরের অন্তর্গত মুগবেড়িয়া ৷ সেখানকার জমিদার ছিলেন দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধি ৷ বরাবরই স্বদেশি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন ৷ 1903 সালে মেদিনীপুরে আসেন ভগিনী নিবেদিতা ৷ দেশের জন্য অনুশীলন সমিতিতে যোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন ৷ কিন্তু, প্রথমে তাঁর অনুরোধ মানা হয়নি ৷ পরে সুযোগ মেলে যোগ দেওয়ার ৷ ইতিমধ্যে 1905 সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করেন লর্ড কার্জন ৷ আরও জোরদার হয়ে ওঠে স্বদেশি আন্দোলন ৷ ঘরে ঘরে তখন স্বদেশি ভাবধারার বিস্তার ঘটছে ৷ দেশের জন্য এগিয়ে আসছেন অসংখ্য যুবক ৷ তাঁদের দমন করতে তৎপর ছিল ইংরেজরা ৷ তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন গোপন আস্তানা, লোকচক্ষুর আড়ালে নিরাপদ জায়গার ৷ কিন্তু, মেদিনীপুরে ইংরেজ পুলিশের রক্তচক্ষু এড়িয়ে কোথায় বিপ্লবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে? 1906 সালে উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব পান দিগম্বরবাবু ৷ যোগাযোগ করেন পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অম্বিকানগরের জমিদার রাইচরণ ধবলদেবের সঙ্গে । রাইচরণবাবুও বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুব্ধ ছিলেন ৷ তাঁর সাহায্যে অম্বিকানগরের কাছে সাদা পাথর জঙ্গলে গুহার মধ্যে গড়ে তোলা হয় প্রশিক্ষণ শিবির ৷ দৈর্ঘ প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার ৷ বৈপ্লবিক আন্দোলনের রেশ বাঁকুড়ায় পড়লেও জেলাটি ইংরেজদের বিশেষ নজরে ছিল না ৷ এটাকেই হাতিয়ার করেন বিপ্লবীরা ৷ নিরিবিলি জঙ্গলের মধ্যে পাথরের গুহায় চলত অস্ত্র প্রশিক্ষণ ৷ শেখানো হত বোমা বাঁধার কৌশল ৷ অনুশীলন সমিতির সদস্য হওয়ার সুবাদে আস্তানায় আসতেন ক্ষুদিরাম বসুও ৷ আলোচনা করতেন অন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে ৷ 1907 সালের নভেম্বর মাস থেকে 1908 সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই গোপন আস্তানায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলেছিল ৷

Khudiram Bose
এখানে বসে আলোচনা করতেন বিপ্লবীরা

সেই গুহার বর্তমানে কী অবস্থা তা দেখতে যাওয়া হয় ছেঁদাপাথর গ্রামে ৷ বিপ্লবীরা যেখানে বসে আলোচনা করতেন সেটিকে বাঁধানো হয়েছে ৷ গড়া হয়েছে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তি ৷ সেখান থেকে 500 মিটার দূরেই রয়েছে গুহাটি ৷ তবে, এখন সেটিকে পাথর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষুদিরাম মাহাত বলেন, "ক্ষুদিরাম বসু বঙ্গভঙ্গের সময় এখানে আসতেন ৷ আত্মগোপন করতেন ৷ তবে ভিতরে কী রয়েছে তা পরিষ্কার নয় ৷ 10-12 ফুট নিচে পাথর বসানো রয়েছে ৷ সেখানে কোনও কিছু আঘাত করলে আওয়াজ হয় ৷ গুহাটি গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উলফার্নের খনির কাছে উঠেছে ৷" জঙ্গলটি এখন "ক্ষুদিরামের আশ্রয়" হিসেবে পরিচিত ৷ ছেঁদাপাথর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মানস মুখার্জি বলেন, "স্কুলে এসে শুনেছিলাম, এখানে ক্ষুদিরাম বসু আসতেন ৷ গুহার মধ্যে বিভিন্নরকম বৈপ্লবিক কাজ চলত ৷"

Khudiram Bose
এখানেই ছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা

বাঁকুড়ার জেলাশাসক ডাঃ উমাশঙ্কর এস বলেন, "এলাকাটিকে জনপ্রিয় বানানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি ৷ স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব আমরা রাজ্য সরকারকে দেব ৷" তিনি আরও জানান, ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ও বলিদান দিবস স্মরণ করে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় ৷ কিন্তু, তা সীমিত রয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে ৷ ছড়িয়ে পড়েনি রাজ্যের অন্য প্রান্তে ৷ ঠাঁই পায়নি ইতিহাস বইয়ের পাতাতেও ৷ তাই স্বদেশি আন্দোলনের সাক্ষ্য বহন করা এই গ্রামকে (বিশেষত বারিকুল থানা) আজ মানুষ জানে মাওবাদী আর যৌথবাহিনীর সংঘাতের কারণে ৷ সত্যিই, বিচিত্র এক দেশ !

দেখুন ভিডিয়ো
Intro:ভারতের স্বাধীনতার চরমপন্থী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহলের। বিপ্লবীদের বোমা বানানো থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র শিক্ষার গোপন আস্তানা গড়ে উঠেছিল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে।


Body:ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষত চরমপন্থী আন্দোলনের কিশোর শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর নাম প্রায় প্রত্যেকেই জানেন। এই ক্ষুদিরাম বসুর বৈপ্লবিক কাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে।
বাঁকুড়া জেলার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বারিকুল থানার ছেঁদাপাথর গ্রাম। বাঁকুড়া সদর শহর থেকে প্রায় 80 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রাম ।বিগত দিনে রাজ্যের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে এই জঙ্গলমহলের এলাকায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মাওবাদী আর যৌথবাহিনীর সংঘাতের কারণে। হয়তো সেই কারণে জঙ্গলমহলের এই বারিকুল থানার নাম শিরোনামে এসেছে একাধিকবার। তবে বারিকুল থানার এই এলাকার একটি বৈপ্লবিক ইতিহাস রয়েছে যা কালের গতিতে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
সময়টা ছিল 1907 সালের নভেম্বর মাস। বাঁকুড়ার প্রতিবেশী জেলা অবিভক্ত মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়া জমিদার ছিলেন সেই সময় দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধি। যিনি 1903 সালে মেদিনীপুরে ভগ্নি নিবেদিতা যখন আসেন তখন অনুশীলন সমিতি তে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যদিও প্রথম দিকে তার আবেদন গ্রাহ্য হয়নি তবে পরে তাকে যুক্ত করা হয় অনুশীলন সমিতির সঙ্গে।
মেদিনীপুরের হবিবপুর 1889 সালে ক্ষুদিরাম বসু জন্ম নেন। মা মারা যাবার পর ক্ষুদিরাম পরবর্তীকালে কাঁথি চলে আসেন এবং সেখানে তিনি হাজার 900 1 থেকে 1904 সাল পর্যন্ত তমলুক হ্যামিলটন স্কুলে পড়াশোনা করেন। এই সময় তিনি অনুশীলন সমিতি তে যোগ দেন।
অনুশীলন সমিতি তে আসার সুবাদে তার সাথে যোগাযোগ হয় মুগবেড়িয়া তৎকালীন জমিদার দিগম্বর নন্দ বিদ্যানিধির সঙ্গে।
1906 সালে দিগম্বর বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অনুশীলন সমিতির প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে।
সেটা এমন একটা সময় ছিল যখন গোটা মেদিনীপুর ছিল স্বদেশী আন্দোলনে এবং বৈপ্লবিক কার্যকলাপে উত্তাল। কাজী মেদিনীপুরে কোনরকম অস্ত্রশিক্ষা করার কোন রকম সুযোগ ছিল না। অথচ অবিভক্ত মেদিনীপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়া সেই অর্থে ইংরেজদের খুব একটা কুনজরে ছিল না। দিগম্বর বাবু যোগাযোগ করেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অম্বিকানগর এর জমিদার আরো এক বিপ্লবী রাইচরণ ধবল দেব এর সঙ্গে।
সিদ্ধান্ত হয় রাইচরণ ধবল দেব এর সহযোগিতা নিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অনুশীলন সমিতির গোপন আস্তানা এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
সেই সময় অম্বিকানগর এর নিকটস্থ সাদা পাথর জঙ্গলে একটি মাটির নিচে পাথর বেষ্টিত গুহা তৈরি করা হয়। এবং সেই গুহাতে পিস্তল চালানো এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ ও অভ্যাস চালানো হয়।
1907 সালের নভেম্বর মাস থেকে 1908 সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলেছিল এই গোপন আস্তানায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বোমা বাজার কার্যকলাপ। এখানে ক্ষুদিরাম বসু ছাড়াও তৎকালীন অনুশীলন সমিতির অনেক বিপ্লবী হাজির হতেন।
পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম বসু প্রফুল্ল চাকীর সঙ্গে ইংরেজ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড কে গুপ্ত হত্যা করার জন্য পাড়ি দেন মোজাফফরপুর। তাদের এই মিশন বি ফল হয় ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম বসু এবং তার ফাঁসি হয় 11 ই অগস্ট হাজার 1908 সালে।
ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম দিবস এবং আত্ম বলিদান দিবস কে স্মরণ করতে বর্তমান বারিকুল থানার সাদা পাথর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় জেলা পুলিশের তরফে।
কালির গতিতে সেই সমস্ত নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল আজও সাক্ষ্য বহন করছে চরমপন্থী আন্দোলনের একটি বিশেষ অধ্যায়ের দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল।


Conclusion:বাইট: মানস মুখার্জি, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ছেঁদাপাথর উচ্চ বিদ্যালয়
বাইট: ক্ষুদিরাম মাহাতো, বাসিন্দা ছেঁদাপাথর
বাইট: ডক্টর উমাশঙ্কর এস, জেলাশাসক বাঁকুড়া
Last Updated : Aug 11, 2019, 12:16 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.