বাঁকুড়া , 10 মার্চ : বাঁকুড়ার প্রাচীনতম গ্রাম কেঞ্জাকুড়া । জেলার অর্থনীতির মূল কেন্দ্র এই গ্রাম । হাতে বোনা তাঁতের শাড়ি, গামছা তৈরি হত । বাজারও বেশ ভালোই ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে বাজার ছেয়ে যায় পাওয়ার লুমের তৈরি গামছা ও চাদরে । তাঁতে বোনা গামছার তুলনায় দামও অনেক কম । তাই বাজারে চাহিদা বাড়ছে পাওয়ার লুমের । ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁকুড়ার বিখ্যাত তাঁতের গামছা । ক্ষতি হচ্ছে তাঁত শিল্পীদের ।
বাঁকুড়ার ছাতনা থানার জনবহুল গ্রাম কেঞ্জাকুড়ার বর্তমান জনসংখ্যা 50 হাজার । এর আগে প্রায় 600 থেকে 700 টি পরিবারে তাঁতের ব্যবসা করত ৷ কিন্তু এখন সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে । কারণ পাওয়ার লুম । বিশেষত, বিহারের গয়া থেকে পাওয়ার লুমের গামছা আসছে বাজারে । দাম মাত্র 30 টাকা । অন্যদিকে , 70 থেকে 80 টাকা দামের তাঁতের গামছা বিক্রি হচ্ছে না স্থানীয় বাজারে । এই অবস্থায় উৎপাদন করার পরেও বাজার মিলছে না তাঁতের গামছার । একাধিকবার শিল্পীরা দরবার করেছে প্রশাসন তথা সরকারের কাছে । এক সময় তাদের সোসাইটি তৈরি হয়েছিল । তবে এখন আর সেই সোসাইটিও নেই ।
মিনু দাস । 40 বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন । একসময় তাঁত বুনে মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছেন তিনি । তবে আজ তাঁত শিল্পের এতটাই ক্ষীণ অবস্থা যে ভালো করে দু'বেলা খেতেও পারছেন না অর্থাভাবে । এক জোড়া গামছা বুনতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা । এই গামছা তৈরি করে মজুরি পান মাত্র 40 টাকা । সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলে দিনের শেষে 100 থেকে 125 টাকা কোনওমতে রোজগার করা সম্ভব হয় । কিন্তু বর্তমান বাজারে এই সামান্য অর্থে সংসার চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠছে । তাই তার আবেদন, সরকারি অনুদানের ।
শিবপ্রসাদ দাস জানান , তাঁরা পরিশ্রম করতে রাজি কিন্তু এই গামছার বাজার কোথায় । তাই সরকার উদ্যোগী হয়ে যদি এই গামছা রপ্তানির ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে অনেকটা সমস্যা মিটবে । বিষ্ণুপুর বালুচরী তাঁত নিয়ে সরকারিভাবে অনেক কিছু করা হলেও ব্রাত্য এখনও কেঞ্জাকুড়া ও এখানকার তাঁত শিল্প । একদিকে উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার তৈরি করা, অন্যদিকে এই সমস্ত শিল্পীদের নতুন প্রযুক্তি ও বাজারের চাহিদা সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তাঁরা অনেকটাই উপকৃত হবেন বলছেন শিল্পীরা ।
যদিও এই হতাশার মধ্যে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পেয়েছেন স্থানীয় এক শিল্পী বুদ্ধদেব বিট । বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী শহরে তাঁর যাতায়াত আত্মীয়তার সূত্রে । সেখানে তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের কাছ থেকে রেশমের সুতো ও প্রযুক্তি নিয়ে এসে বাড়িতে বসিয়েছেন রেশম হস্তচালিত তাঁত । এর জন্য 15 হাজার টাকা খরচ হয়েছে তাঁর । তবে এতে খানিকটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তিনি । রেশম তাঁতে সারা দিনে 300 থেকে 400 টাকা রোজগার হয় তাঁর । রোজগার আরও খানিকটা বেশি হওয়া সম্ভব যদি প্রয়োজনীয় সুতো স্থানীয় বাজারে তারা সহজে পান । অন্যান্য শিল্পীদের ক্ষেত্রেও যদি এ ধরনের রেশম তাঁতের ব্যবস্থা করা যায় , তাহলে সেটাও তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট সহযোগী হবে ।
অবশ্য এই সমস্যার সমাধান করতে কিছুটা হলেও তৎপর হয়েছেন বাঁকুড়ার বর্তমান সাংসদ সুভাষ সরকার । সংসদ ভবনে তিনি সরব হয়েছেন তাঁতিদের দুরবস্থার কথা নিয়ে । তাঁতিদের উন্নয়নের জন্য টেক্সটাইল কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য । পাশাপাশি মার্কেটের সঙ্গে কীভাবে এই সমস্ত শিল্পীদের যোগ করা যায় সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি ।