বাঁকুড়া, 20 এপ্রিল: কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই সময় বেঁচে থাকলে হয়তো প্রকৃতির এই শুষ্কতার রূপ নিয়ে একটা প্রবন্ধ বাঁধতেন বা জীবনানন্দ দাস বেঁচে থাকলে কয়েকটা অ্যানালজি উঠে আসত এই শুষ্কতা থেকে । না, এটা রাজস্থানের কোনও জলশূন্য মহল্লার কথা নয়, এ হল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের প্রান্তিক জেলা বাঁকুড়ার কথা ।
দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় মানুষের লড়াই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সঙ্গে জলের জন্য । জলাভাব এই জেলার ইতিহাসে কোনও নতুন অধ্যায় নয় । এখনও মানুষের অভিযোগ শহর জলশূন্য । শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের নলগুলি শুকনো আর জল এলেও তা মানুষের রোজকার প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয় । বাচ্চাদের চোখ-মুখের ছবিও এদিন ধরা পড়েছে লেন্সে ৷ তারাও তৃষ্ণার্ত কাকের মতো তাকিয়ে আছে এক ফোঁটা জলের জন্য । শহরের অলিগলি ঘুরে একই চিত্র উঠে এল বারবার, কানে শোনা গেল শুধু মানুষের অভিযোগ আর কোলাহল । এক ফোঁটা জলের জন্য এলাকাবাসীকে বারবার এই প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহ উপেক্ষা করে ছুটে যেতে হচ্ছে দূর-দুরান্তে । একাধিকবার প্রশাসনিক স্তরে জানিয়েও মেলেনি কোনও সুরাহা ।
রাজনৈতিক নিয়মে বিরোধীরাও এই সুযোগকে হাতিয়ার করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিক্ষোভ খাড়া করেছে ৷ তারা ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে শাসকদলের বিরুদ্ধে । বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের জল প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে নিজের আখের গুছিয়েছে শাসকদল, তাদের ডাকাত বলতেও পিছপা হয়নি বিরোধী শিবির ।
শাসকদলও রাজনৈতিক নিয়মে এটাকে বিরোধীদের অপপ্রচারের আখ্যা দিচ্ছে বারংবার । তাদের দাবি, শহরের প্রতিটি কোণায় সুষ্ঠুভাবে জলের সরবরাহ বজায় রাখার জন্য জলের স্রোতে কিছুটা লাগাম টানলেও, মানুষকে সমস্যা তারা ফেলতে চায়নি । বরং পরবর্তীতে জলের সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য তাদের তরফে নেওয়া হচ্ছে একাধিক পদক্ষেপ ।
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেও দিনের শেষে পানীয় জলের অভাবের ঐতিহ্য আজও বজায় আছে শহরে । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা এই সমস্যা থেকে অব্যাহতির ।
আরও পড়ুন : ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু মারনাই গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা থেকেই যায়