আলিপুরদুয়ার, 5 মে : দীর্ঘদিন ফাঁকাই ছিল সিংহাসন । প্রায় 25 বছর বাদে রানিসহ রাজা স্বমহিমায় ফিরছেন নিজ রাজত্বে । খাদ্য ভান্ডার থেকে শুরু করে রাজার বিচরণ ভূমি, পানীয় জলের সু-বন্দোবস্ত আগে থেকেই রাজকীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ।
প্রতিবেশী রাজ্য অসম থেকে বক্সার জঙ্গলে আসছে একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী । দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অসম বন দপ্তর বক্সার জঙ্গলে বাঘ পাঠাতে সবুজ সংকেত দিয়েছে রাজ্যকে ।
অসমের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য জানিয়েছেন, অসমের জঙ্গল থেকে পশ্চিমবঙ্গের বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে সিলমোহর দিয়েছে NTCA (National Tiger Conservation Authority) । রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার জাতীয় সম্পদ । আমাদের বাঘ পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে । ক্যাবিনেটেও এই বিল পাশ হয়েছে । এখন বাংলায় বাঘ পাঠানো শুধু সময়ের অপেক্ষা ।
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, "অসমের এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাই । আমরা কৃতজ্ঞ অসম সরকারের কাছে । বক্সা ফের তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে । ইতিমধ্যে বক্সার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গলের জন্য খাদ্য ভান্ডার, তৃণভূমি, জলাধার ও বিচরণভূমি গড়ে তোলা হয়েছে । বাঘের থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি । আমরা রাজ্যের তরফে NTCA-র কাছেও কৃতজ্ঞ । এখন NTCA সবুজ সংকেত দিলেই বাঘ নিয়ে আসব ।"
1983 সালে বক্সা টাইগার রিজ়ার্ভ দেশের 13 তম ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের মর্যাদা পায় । 760 বর্গ কিলোমিটারের এই জঙ্গলে তখন প্রচুর বাঘ ছিল । এরপর ধীরে ধীরে চোরাশিকারী ও প্রাকৃতিক কারণে লুপ্ত হতে থাকে বাঘের অস্তিত্ব । বিগত 25-30 বছরে এই রিজ়ার্ভ ফরেস্টে বাঘের দেখা মেলেনি । 2015 সালে জঙ্গলে বাঘ শুমারি হয় । তাতে মাত্র তিনটি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায় । দু'টি বাঘিনী ও একটি বাঘ থাকার অনুমান করা হয় । তবে সরাসরি দেখা না পাওয়ায় সন্দেহ প্রকাশ করে NTCA কর্তৃপক্ষ । রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয় বক্সায় যখন বাঘের দেখা মেলেনি তখন টাইগার রিজ়ার্ভের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া হবে না কেন ? এরপর রাজ্যের বনদপ্তর দেশজুড়ে বাঘের খোঁজ শুরু করে । কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের মধ্যস্থতায় বক্সার জঙ্গলে বাঘ ফিরিয়ে আনার সবুজ সংকেত দেয় NTCA ।
বক্সার জঙ্গলে বাঘ ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্যে সরকারকে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে NTCA ।
1) বক্সার ভৌগোলিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এমন রাজ্য থেকেই বাঘ আনতে হবে ।
2) বাঘেদের আদর্শ পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে ।
3) বাঘেদের খাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান এবং জলাধারের ব্যবস্থা করতে হবে ।
4) বক্সার কোর এলাকার বনবস্তিবাসীদের পুনর্বাসন দিতে হবে ।
দুই রাজ্যের বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে বক্সায় একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী আনা হচ্ছে । তবে অসমের কোন জঙ্গল থেকে এই বাঘ বক্সায় আনা হবে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি দুই রাজ্যের বনমন্ত্রী ।