আলিপুরদুয়ার, 21 জুন: একই পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের উত্তর চিকলিগুড়ির পালপাড়া গ্রামের ঘটনা। জানা গিয়েছে, চারজনের মধ্যে 3 জনের দেহ উদ্ধার হয় রায়ডাক নদী থেকে। অপর একজনের দেহ উদ্ধার হয় রেললাইনের ধার থেকে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, গৃহকর্তা পিঙ্কু পাল ঘুমের মধ্যেই তাঁর দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে তিন জনের দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এরপর ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয় পিঙ্কু নিজেও। শামুকতলা রোড স্টেশনের কাছে পিঙ্কু পালের দেহ উদ্ধার হয়।
ছেলে, ছেলের বউ, দুই নাতনির দেহ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন 75 বছরের বৃদ্ধ ঠাকুরদাস পাল। বয়সের ভারে নিজের দেহে শক্তি হারিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে একসাথে চার জনের মৃত্যু যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। বৃদ্ধের আর্থিক অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে একটি মৃতদেহ সৎকার করার মতো আর্থিক ক্ষমতা তাঁর নেই।
অন্যদিকে তাঁর বিপাক আরো বাড়িয়েছে সরকারি আইনকানুন। মৃত দুই জনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কোচবিহার হাসপাতালে। অন্য দুই জনের দেহ আলিপুরদুয়ার মর্গে। কোচবিহার থেকে তিনি কীভাবে মৃতদেহগুলি আনবেন, আর আলিপুরদুয়ার থেকেই তিনি কীভাবে দেহগুলো গ্রামে নিয়ে আসবেন তার কোনও উত্তর নেই বৃদ্ধের কাছে।
তবে, চারজনের দেহ নিয়ে চরম বিপাকে পড়া বৃদ্ধকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন গ্রামের কিছু মানুষ। সমব্যথী প্রকল্পে চার মৃতদেহের জন্য ঠাকুরদাসবাবুকে আট হাজার টাকা দিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত কাজল দত্ত।
এলাকার যুবকরাও বাড়ি বাড়ি থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিছু টাকা দিচ্ছেন ঠাকুরদাসবাবুকে।
তবে মৃতদেহ ময়নাতদন্ত নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে আলিপুরদুয়ারে। কারণ আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে থাকা পায়েলের মৃতদেহে ইতিমধ্যেই পচন ধরেছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পচা দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়না। পচা মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় শিলিগুড়ি কিংবা কোচবিহার জেলা হাসপাতালে। সেই কারণেই ঠিক কবে হবে চার দেহের সৎকার তা নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুপ দাস বলেন, “গ্রামপঞ্চায়ত প্রধান এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত বিষয়টি দেখছে। ওই বৃদ্ধের যাতে কোন অসুবিধা না হয় তা দেখতে বলেছি।” অনুপ বাবু জানান, স্থানীয় BDO অফিস থেকেও বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে।
আলিপুরদুয়ার SDPO কুতুবুদ্দিন খান বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্ত করে বৃদ্ধের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। ওই বৃদ্ধের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা আমাদের তরফ থেকে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, লকডাউনের জেরে চরম আর্থিক অনটনে অবসাদগ্রস্ত হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন পিঙ্কু পাল।