আলিপুরদুয়ার, 5 ডিসেম্বর: কুমারগ্রাম থেকে বক্সা পাহাড়ের গ্রাম । প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় সাধারণ মানুষকে সরকারি পরিষেবা পৌছে দিতে ছুটে যাচ্ছেন জেলাশাসক । সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই লক্ষ্য তাঁর । কখনও নৌকা করে কুমারগ্রাম ব্লকের মুসলিমের চর, কখনও বা বক্সা পাহাড়ের চুনাভাটি গ্রামে ট্রেকিং করে শীতবস্ত্র নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা (Alipurduar District Magistrate)। জেলাশাসককে পেয়ে আপ্লুত এলাকার মানুষজনও ।
এমনও কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে কোনওদিন কোনও জেলাশাসক যাননি । সেই সমস্ত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন সুরেন্দ্রকুমার মিনা । শুধু পরিষেবা প্রদানই নয়, এলাকাবাসী যাতে নিরাপদে, ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারেন সেই চেষ্টাও করছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক ৷ হাতি উপদ্রুত এলাকা নুরপুর গ্রামে মানুষ যাতে হাতির হানা থেকে মুক্তি পায় এবং স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে সেই কারণে মৌমাছি চাষেরও ব্যবস্থা করেছেন তিনি । বক্সা পাহাড়ের দুর্গম চুনাভাটি গ্রাম । যেখানে আগে কোনও আমলা সেই ভাবে যাননি বললেই চলে । যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেও সারাদিন লেগে যাবে এই ভেবে পিছিয়ে গিয়েছেন অনেকে ৷ সেখানেও ভোর পাঁচটায় সানতালাবাড়ি থেকে ট্রেকিং শুরু করে পৌঁছে গিয়েছেন সুরেন্দ্রকুমার মিনা ৷ সেখানে সরকারি পরিষেবা দিয়ে ফের আলিপুরদুয়ারে নেমে এসে অফিসও করেছেন তিনি । চুনাভাটি ডুকপাদের গ্রামে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প করেছেন তিনি । সুরেন্দ্র কুমার মিনার আগে কোন জেলাশাসককে এইভাবে পায়নি ওই এলাকার মানুষ (Alipurduar District Magistrate reaches remote areas to provide govt aide) ।
আরও পড়ুন: ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে বাড়ল আসন সংখ্যা, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ কমিশনের
চুনাভাটি গ্রামের 65টি পরিবারকে শীতবস্ত্র দিয়ে এসেছেন তিনি ৷ চুনাভাটি স্কুলের স্মার্ট ক্লাসের জন্য কম্পিউটার দিয়ে এসেছেন । এলাকায় স্কুল বাড়ি নির্মাণ, স্মার্ট কোচিং ক্লাস থেকে শুরু করে সব পরিষেবা যে দেওয়া সম্ভব সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন সুরেন্দ্রকুমার মিনা (Surendra Kumar Meena)। তাঁর এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে জেলাশাসক বলেন, "সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই আমার কাজ । সরকার আমাকে জেলার উন্নয়নের কাজে পাঠিয়েছে । জেলার মানুষের মুখে হাসি দেখলেই আমার ভালো লাগে । আমাকে তাই জেলার মানুষের জন্য কাজ করতেই হবে । জেলার প্রতিটি মানুষ যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান সেটা দেখা আমার কাজ । তাই আমি চেষ্টা করি প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছতে । যেখানে মানুষ কম যান সেখানে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াই আমার লক্ষ্য । আমরা সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত বক্সা পাহাড়ের চুনাভাটি গ্রামে গিয়েছিলাম ৷ এটি একটি পাহাড়ি গ্রাম, এখানে ডুকপা উপজাতির বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বাসস্থান । পাহাড় থেকে নেমে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না । তাই তাঁদের গ্রামে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য শিবির করা । এমনকি শীতবস্ত্র প্রদান করে এসেছি । খুব খুশি হয়েছেন এলাকার মানুষজন । সমতল থেকে বক্সা পাহাড়ের চুনাভাটি গ্রামে পৌঁছতে আমার পুরো দলকে 65 মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বক্সা পাহাড়ে ট্রেক করতে হয়েছে ।"
আরও পড়ুন: ঠেলতে ঠেলতে সদ্যোজাতকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মা, মানবিক হাতির ভিডিয়ো ভাইরাল ঝাড়গ্রামে
শুধু তাই নয় কুমারগ্রাম ব্লকের মুসলিম গ্রাম । যেখানে কোনও যোগাযোগ এর ব্যবস্থা নেই । যেখানে নৌকায় করে সংকোশ নদী পেরিয়ে যেতে হয় । সেখানেও কুমার গ্রামের বিডিওকে নিয়ে সরকারি পরিষেবা নিয়ে পৌছে গিয়েছেন জেলাশাসক । বক্সার বাসিন্দা ইন্দ্রশঙ্কর থাপা বলেন, "জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা ভগবান তুল্য মানুষ । তিনি আমাদের বক্সা পাহাড়ের মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন । আগে আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবা তেমন পেতাম না এখন তা পাচ্ছি । শীতবস্ত্র পর্যন্ত এনে হাতে তুল দিয়েছেন পাহাড়ের মানুষদের । আগে আমরা ভাবতাম সরকারি পরিষেবা হয়ত আমাদের জন্য নয় । কিন্তু এখন আমরা আগের থেকে অনেক ভালো পরিষেবা পাচ্ছি । এমন জেলাশাসক থাকলে আমাদের উপকার হয় ।"