টোকিয়ো, 7 অগস্ট : পরীক্ষার আগে বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের পইপই করে বলে দেন, প্রথম তিনের মধ্যে থাকতে হবে ৷ ক্লাসের প্রথম তিনজনের যে মর্যাদা তা ফোর্থ স্টুডেন্টের নেই ৷ পড়াশোনা হোক বা খেলাধুলো, চতুর্থ কেউ হতে চায় না ৷ খেলাধুলোর জগতে চতুর্থ হওয়া মানে পদকের খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসা ৷ যে যন্ত্রণা সহ্য করতে চায় না কেউ ৷ তা স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতা হোক বা অলিম্পিকসের মঞ্চ ৷ কিন্তু চাইলেই সব পাওয়া যায় না ৷ তাই সেরাটা দিয়েও অনেক সময় সাফল্য ধরা দেয় না ৷
বলা বাহুল্য, অলিম্পিকসের মঞ্চে যত না সাফল্য পেয়েছে ভারত তার চেয়ে বেশি হৃদয় ভেঙেছে দেশবাসীর ৷ অলিম্পিকসে অংশ নেওয়াটা যেকোনও খেলোয়াড়ের কাছে গর্বের ৷ সারা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করে পদক জেতার মাধুর্যই আলাদা ৷ তবে পদকই সবসময় প্রতিভার পরিচয় নয় সেই প্রমাণও মিলেছে ৷ অতীতে ভারতীয় অ্যাথলিটদের মধ্যে অনেকেই পদক জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেও অল্পের জন্য মেডেল পাননি ৷ চতুর্থ হয়ে একটুর জন্য পদক হাতছাড়া করার যন্ত্রণা সহ্য করেছেন দেশের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ৷ আজকের অদিতি অশোক থেকে অতীতের মিলখা সিং, বাংলার শুটার জয়দীপ কর্মকরারা এই যন্ত্রণা পেয়েছেন ৷
মিলখা সিং
100 বছরে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ভারতের ঝুলিতে পদক আসেনি ৷ 1960 সালের রোম অলিম্পিকসেই সেই আক্ষেপ পুষিয়ে দিতে পারতেন ফ্লাইং শিখ নামে পরিচিত প্রয়াত কিংবদন্তি স্প্রিন্টার মিলখা সিং ৷ দুরন্ত ফর্মে থাকা মিলখা 400 মিটারের ফাইনালে পদক জয়ের প্রবল দাবিদার ছিলেন ৷ দৌড় সেভাবেই শুরু করেছিলেন ৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী একটা ভেবে গতি কমিয়ে দেন ৷ মুহূর্তের ভুলে তাঁকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যালকম স্পেন্স ৷ কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ব্রোঞ্জ পদক হাতছাড়া হয়ে যায় মিলখার ৷ এরপর আরও তিনটে অলিম্পিকসে অংশ নিলেও পদক জিততে পারেননি ৷ রোম অলিম্পিকসের 400 মিটারে চতুর্থ হয়ে পদক হাতছাড়া করার আফসোসটা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত থেকে গিয়েছিল এই কিংবদন্তি স্প্রিন্টারের ৷
পিটি উষা
'পায়োলি এক্সপ্রেস' নামে পরিচিত পিটি উষা'র একটা সময় ঘরে ঘরে পরিচিত ছিল ৷ 1984 সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকসের 400 মিটার হার্ডলসে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করেন তিনি ৷ রোমানিয়ার ক্রিশ্চিনা কেজোকারুর পিছনে চতুর্থ স্থানে শেষ করেন ৷ অলিম্পিকসের পারফরম্যান্সে পিটি উষা হয়ত পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু পদক না জিততে পারার আফসোসটা রয়েই গিয়েছে ৷
জয়দীপ কর্মকার
বাংলার শুটার জয়দীপ কর্মকারও ফোর্থ ক্লাবের মেম্বার ৷ 2012 লন্ডন অলিম্পিকসে 50 মিটার প্রোন রাইফেলের ফাইনালে উঠেছিলেন জয়দীপ ৷ তাঁকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল তামাম ভারতবাসী ৷ কিন্তু ভাগ্যের ফেরে পোডিয়াম ফিনিশ করতে পারেননি জয়দীপ ৷ তৃতীয় স্থানে থাকা স্লোভানিয়ার রাজমন্ড দেবেভেকের থেকে মাত্র 1.9 পয়েন্টের ফারাকে চতুর্থ হন জয়দীপ ৷
লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতি
নিঃসন্দেহে টেনিসে ভারতের সেরা ডাবলস জুটি লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতি ৷ 2004 এথেন্স অলিম্পিকসে এই জুটি ব্রোঞ্জ পদকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল ৷ কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার জুটি মারিও অ্যানসিস এবং ইভান জুবিসিস 6-7 6-4 14-16 ব্যবধানে হারিয়ে দেয় ভারতীয় জুটিকে ৷ এথেন্স থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় লি-হেশ জুটিকে ৷
সানিয়া মির্জা ও রোহন বোপান্না
টেনিসে রিও অলিম্পিকসে পদক জয়ের বড় আশা ছিলেন সানিয়া মির্জা এবং রোহন বোপান্না ৷ নিজের নিজের ডাবলস ম্যাচে দুজনই তাড়াতাড়ি ছিটকে যান ৷ কিন্তু মিক্সড ডাবলসে পদক জেতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ৷ তবে চেক রিপাবলিক জুটির বিরুদ্ধে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে সেরাটা জিতে পারেনি সানিয়া-রোহন জুটি ৷ 1-6 5-7 ব্যবধানে হেরে যান সানিয়ারা ৷
দীপা কর্মকার
এই অভিজ্ঞতা একেবারে টাটকা ৷ রিও অলিম্পিকসে দেশবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন বাঙালি জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার ৷ সিমোন বাইলসের মতো বিশ্বের সেরা জিমন্যাস্টদের সঙ্গে ভল্ট ইভেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নেন ৷ ফাইনালে সবমিলিয়ে দীপার স্কোর দাঁড়ায় 15.066 ৷ মাত্র 0.150 পয়েন্টের জন্য ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করেছিলেন তিনি ৷
অভিনব বিন্দ্রা
দেশের একমাত্র সোনাজয়ী অ্যাথলিটও চতুর্থ হওয়ার দুঃখ পেয়েছেন ৷ 2008 সালে বেজিং অলিম্পিকসে 10 মিটার এয়ার রাইফেল শুটিং ইভেন্টে সোনা জিতে ইতিহাস গড়েন অভিনব বিন্দ্রা ৷ আটবছর পর কেরিয়ারের শেষ তথা 2016 সালে রিও অলিম্পিকসে কেরিয়ারের দ্বিতীয় অলিম্পিকস পদক জয়ের দোরগোড়ায় পৌছে গিয়েছিলেন অভিনব ৷ কিন্তু 10 মিটার এয়ার রাইফেলের ফাইনালে চতুর্থ হয়ে ব্রোঞ্জ হাতছাড়া করেন ৷
মহিলা হকি দল
টোকিয়োয় ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল মেয়েদের সামনে ৷ প্রথমবার অলিম্পিকসের সেমিফাইনালে উঠে পদক জেতার আশাও জোগাচ্ছিল রানি রামপালের দল ৷ ব্রোঞ্জ পদক জয়ের ম্যাচে গ্রেট ব্রিটেনের কাছে 4-3 গোলে হেরে যাওয়ায় খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে রানিদের ৷ রানি রামপাল সহ মহিলা হকি দলের 11 জন খেলোয়াড়, কুস্তিগীর দীপক পুনিয়া, গল্ফার অদিতি অশোকরা এই ফোর্থ ক্লাবের তালিকার নতুন সদস্য ৷