কলকাতা, 14 এপ্রিল : জীবনে খেলার বাইরে তাকানোর সময় পাননি । জীবনের গতিপথের বেশিটাই শুধু অনুশীলন আর ম্যাচ-টুর্নামেন্টে অতিক্রান্ত করেছেন তাঁরা । কিন্তু কোভিড-19 ভাইরাস এক নতুন শিক্ষা দিয়ে গেল । যা ওঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিল জীবন সম্পর্কে । অনিন্দিতা চক্রবর্তী, দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌমা দাস, বাংলার ক্রীড়া দুনিয়ার তিন "সুপার মম" লকডাউনের জেরে ঘরবন্দী । এই সময় খেলার বাইরে ঘরকন্নার কাজে হাত পাকাচ্ছেন । তিনজনই বলছেন ঘরবন্দী একটা অন্য শিক্ষা দিয়ে গেল ।
অনিন্দিতা চক্রবর্তী । নিবাস হুগলির হিন্দমোটরে । টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে তার সোনালি বিকেল অস্তমিত । তবে ব্যাট তুলে রাখেননি । বরং 35 পেরোলেও খেলার পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে মন দিয়েছেন । বর্তমানে ঘরবন্দী । মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে লকডাউন কাটাচ্ছেন । অনিন্দিতা জানান, "আমরা তিনজন নিজের নিজের দুনিয়ায় সারাবছর ব্যস্ত থাকি । এতটা দীর্ঘ সময় আমরা তিনজন কখনও একসঙ্গে কাটাইনি " । নিয়মিত রাজ্যস্তরের টুর্নামেন্ট গুলিতে অংশ নেন । লকডাউনে খেলা বন্ধ । নিজের অ্যাকাডেমীর শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়েছেন । তবে অনলাইনে পরামর্শ দিচ্ছেন । অনিন্দিতা বলেন "এইসময় বোর্ডে খেলার সুযোগ নেই । তাই আমার ছাত্র-ছাত্রীদের শ্যাডো প্র্যাকটিস করতে বলেছি । ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে বলেছি । আরও মানসিক জোর বাড়াতে ভার্চুয়াল ম্যাচ খেলার কথা বলছি । অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ওপেনিং ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেডেনও এই ভিজুয়ালাইজিং পদ্ধতিতে অনুশীলন করতেন । এই পদ্ধতিতে অনুমান ক্ষমতা বাড়ে । প্রতিপক্ষের কৌশল কল্পনা করে ম্যাচ রিডিং সহজ করে । সেটা এইসময় ছাত্র-ছত্রীদের করতে বলেছি । "
লকডাউনের পরে মরশুমের হাল কী দাড়াবে । কটা টুর্নামেন্ট খেলা হবে জানেন না । তবে সময় পেলেই শিক্ষার্থীদের মতো নিজেকেও তৈরি রাখছেন । ঘরের কাজ সামলে সেভাবে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করতে পারছেন না । তাই সময় পেলেই নিজেকে মগ্ন রাখছেন মানসিক প্রস্তুতিতে ৷
রান্নাঘরের কাজ সামলাতে গিয়ে মুশকিলে পড়েছেন অনিন্দিতা । তিনি বেলেছেন "খেলার সময় নুডলস বানিয়ে খেয়েছি । ভাত ডাল আলু একসঙ্গে সেদ্ধ করেও খেয়েছি । কিন্তু নিয়ম করে রান্না সামলাতে হয়নি । এখন লকডাউনের জেরে বাড়ির রান্নাও কাজের লোক আসছে না । ফলে সবকিছু সামলাতে হচ্ছে । তবে এই সময়টা উপভোগ করছি । বাড়িতে থেকে রান্নাটা শিখেছি । সেই সঙ্গে ঘরকন্নার কাজে হাত পাকিয়ে ফেলেছি ৷"
অন্যদিকে, কয়েকমাস আগে মা হয়েছেন মৌমা দাস । ছোটো মেয়েকে নিয়ে কাটছে সময় । কার্যত নিশ্বাস ফেলার সময় নেই । কমনওয়েলথে পদক জয়ী ঠিক করেছেন বোর্ডে ফিরবেন । তার আগে এখন মেয়ের দেখাশোনাতেই মনোনিবেশ করেছেন মৌমা । লকডাউনে বাইরে বেরোনোর সুযোগ নেই । ফলে মেয়ের সঙ্গে আনন্দ করে সময় কাটছে তাঁর । এই কাজে পাশে পেয়েছেন স্বামীকেও । এতদিন ব্যস্ততার জেরে যে সব কাজ করতে পারেননি সেই সব কাজই এখন উপভোগ করছেন মৌমা ৷
তিরন্দাজী থেকে অবসর নিয়ে এখন নতুনদের তৈরি করার কাজে ব্যস্ত দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় । বছর দুয়েক আগে ছেলের মা হয়েছেন । ফলে ছোট্ট ছেলের দেখাশোনার দায়িত্ব সামলাতে হয় তাঁকে। লকডাউনে অন্যদের মত তিনিও ঘরবন্দী । ঘরকন্নার কাজ সামলে বাইরের কাজ করার অভিজ্ঞতা নতুন নয় । তবে এই লকডাউনের অভিজ্ঞতা নতুন । পরিবারের সঙ্গে সময় কাটছে । যা ব্যস্ততার ফলে সম্ভব হয়নি । তাই লকডাউনে ঘরের কাজে হাত পাকাচ্ছেন "সুপার মম" দোলাও ।