কলকাতা, 24 জুন: মাত্র 13 বছর বয়সে আর্জেন্তিনা থেকে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনায় এসেছিলেন লিওনেল মেসি ৷ সেই সময় আর দশটা কিশোরের মতো শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি তার ৷ অন্তত বিশ্বস্তরের ফুটবলার হিসেবে ৷ তখন 13 বছরের বিস্ময় বালকের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহন করেছিল লা মাসিয়ার এই ক্লাব ৷ তার প্রতিদান যে মেসি আগামিদিনে ছত্রে ছত্রে ফিরিয়ে দেবেন, হয়তো ভাবেনি কাতালান ক্লাবটি ৷ সময়ের বিবর্তনে সেদিনের ওয়ান্ডার কিড আজ বিশ্ব ফুটবলের জাদুকর ৷ তিনি আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি অধিনায়ক লিওনেল মেসি ৷ শনিবার 36 বছরের জন্মদিন ৷ যদিও আজ আর ছোটবেলার ক্লাবে নেই তিনি, তবু মেসি আর আর্জেন্তিনা সারাজীবন একে অপরের পরিপূরক হয়েই রয়ে যাবে ৷
বার্সেলোনায় আসার প্রায় 3 বছর পর 2004 সালে বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক করেছিলেন লিও মেসি ৷ তার আগে পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের নজর থেকে মেসিকে আড়াল করে রেখেছিল বার্সা কর্তৃপক্ষ ৷ ধীরে ধীরে ভবিষ্যতের মহাতারকাকে বড় করছিল তারা ৷ 2004 সালের 17 অক্টোবর এস্প্যানিয়লের বিরুদ্ধে বার্সার হয়ে অভিষেক করেন তিনি ৷ প্রথম আবির্ভাবে নিজের ফুটবল কৌশলের কিছুটা প্রদর্শন করেছিলেন ৷ তবে সে সময় রোনাল্ডিনহোর মতো তারকাদের সামনে তেমন গুরুত্ব পাননি 16 বছরের কিশোর ৷
এরপর 2005 সাল আর্জেন্তিনার জার্সিতে প্রথম ফিফা টুর্নামেন্ট জয় ৷ অনূর্ধ্ব-20 বিশ্বকাপ জেতান আর্জেন্তিনাকে ৷ ওই বছরেই অগস্টে আর্জেন্তিনার জার্সিতেও আত্মপ্রকাশ করেন লিও মেসি ৷ আর্জেন্তাইন বিস্ময় বালককে নিয়ে তখন আলোচনা সর্বত্র ৷ 2006 সালে সবচেয়ে কম বয়সি ফুটবলার হিসেবে আর্জেন্তিনার জার্সিতে বিশ্বকাপ অভিষেক হয় লিও-র ৷ দিয়েগো মারাদোনার কোচিংয়ে সেই অভিষেক খুব একটা সুখকর হয়নি তাঁর ৷ তবে তিনি যে ফুটবল বিশ্বে আলোড়ন তুলতে চলেছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ৷
তবে, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সফর তাঁর শুরু হয়েছিল 2007 সালে ৷ এল ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে প্রথম হ্যাটট্রিক করে ৷ বিশ্ব ফুটবলকে তাঁর আবির্ভাবের বার্তা দিয়েছিলেন সেই ম্যাচে ৷ 2004 সাল থেকে 2021 সাল পর্যন্ত লিওনেল আন্দ্রেস মেসি বার্সেলোনার হয়ে শুধু খেলেননি ৷ ক্লাবের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ৷ একটি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ 672টি গোল করা একমাত্র ফুটবলার তিনিই ৷
আরও পড়ুন: ম-এ মেসি, ম-এ ম্যাজিক ! বেজিং মাতিয়ে অজিদের উড়িয়ে দিল লা অ্যালবিসেলেস্তে
শুধু তাই নয়, বার্সেলোনার সঙ্গে 17 বছরের সফরে 10টি লা লিগা খেতাব জিতিয়েছেন মেসি ৷ সেই সঙ্গে 4টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, 7টি কোপা দেল রে, 8টি সুপার দে এসপানা, 3টি ক্লাব ওয়াল্ড কাপ ও 3টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতেছেন বার্সেলোনাকে ৷ 2021 সালে বার্সেলোনা তাদের আর্থিক সমস্যার কারণে লিওনেল মেসিকে বিপুল ট্রান্সফার মানির বদলে ফ্রান্সের লিগ ওয়ানের ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের কাছে বিক্রি করেন ৷ চোখের জলে নিজের ক্লাবকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি ৷
পিএসজি-তে 3 বছরের চুক্তিতে গেলেও 2 বছর সেখানে কাটিয়ে মেসির বর্তমান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার ৷ সেখানে ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে দেখা যাবে মেসিকে ৷ তবে বার্সেলোনার জার্সিতে মেসি যেমন ক্লাবকে একাধিক খেতাব জিতিয়েছেন ৷ তেমনি ব্যক্তিগত সাফল্যও কম নয় ৷ 7 বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী একমাত্র ফুটবলার ৷ বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে এতবার এই সাফল্য কেউ লাভ করেনি ৷ 2টি ফিফা দ্য বেস্ট সম্মান, 6 বার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট এবং 2বার বিশ্বকাপের মঞ্চে গোল্ডেন বুট জিতেছেন লিওনেল মেসি ৷
আরও পড়ুন: কেরিয়ারের 800তম গোল, মেসি ম্যানিয়ায় ভাসল 'লা অ্যালবিসেলেস্তে'
আর্জেন্তিনার জার্সিতে কেরিয়ারের শুরুতে ও মধ্য গগনে তেমন সাফল্য আসেনি মেসির ৷ 2014 সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠলেও জার্মানির বিরুদ্ধে 1-0 গোলে হারতে হয়েছিল ৷ যদিও মাঝে 2008 বেজিং অলিম্পিকসে সোনাজয়ী লা-আলবিসেলেস্তে'র সদস্য হয়েছিলেন তিনি ৷ তবে, ফিফা খেতাব না-জেতার গ্লানি মিটে গিয়েছে বিগত 5 বছরে ৷ 2021 সালে প্রথমবার কোপা আমেরিকা দিয়ে সেই না জেতার অপেক্ষার সমাপ্তি হয় ৷ এরপর 2022 সালে ফাইনালিসিমা ট্রফি জেতেন আর্জেন্তিনার অধিনায়ক ৷
আরও পড়ুন: বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে লরিয়াস স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ড জিতলেন মেসি
আর 2022 সালের 18 ডিসেম্বর লিওনেল মেসি তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করেন ৷ অধিনায়ক হিসেবে কাতার বিশ্বকাপ জেতেন তিনি ৷ তবে, এখনও ফুটবল মাঠে নিজের 100 শতাংশ দিয়ে চলেছেন তিনি ৷ বিশ্বজুড়ে তাঁর কয়েকশো কোটি অনুরাগীদের বিশ্বাস 2026 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় যৌথভাবে আয়োজিত বিশ্বকাপেও দেখা যাবে একবিংশ শতাব্দীর এই মহাতারকাকে ৷