ETV Bharat / sports

প্রিয়তমা মনে রেখো...

মিলখার কাছে নির্মল ছিলেন তাঁর বড় শক্তি ৷ বহুবার জনসমক্ষে স্ত্রীর প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷ একবার বলেছিলেন, "আমি নিজে দশম পাশ ৷ তাই আমার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও তাদের মানুষ করে তুলতে নির্মলের বড় ভূমিকা রয়েছে ৷"

Milkha Singh
Milkha Singh
author img

By

Published : Jun 19, 2021, 7:31 AM IST

নয়াদিল্লি, 19 জুন : স্ত্রীর মৃত্যুর পর বেশিদিন অপেক্ষা করলেন না তিনিও ৷ তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল মিলখা ও নির্মলের ৷ দুজন একইসঙ্গে করোনার করাল গ্রাসে পড়লেন ৷ আর যাওয়ার সময়তেও মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধান ৷ স্ত্রী নির্মল কউরের মৃত্য়ুর পর গতকাল রাতে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ মিলখা সিং (Milkha Singh) ৷ তবে মিলখার জীবনে নির্মল একমাত্র প্রেম ছিলেন তা বলা যায় না ৷ জীবনের বেশ কিছু পর্যায়ে তিন নারীর প্রেমে পড়েছিলেন সুদর্শন মিলখা ৷ যদিও তাঁদের মধ্যে কেউই 'মিসেস মিলখা সিং'-এর মর্যাদা পাননি ৷

মিলখার কথায়, "প্রতিটি খেলোয়াড় বা অ্য়াথলিটের জীবনে প্রেম আসে ৷ প্রতিটি স্টেশনে আপনার জন্য একটি করে প্রেমকাহিনী অপেক্ষা করে ৷" তিনটি প্রেম ব্যর্থ হওয়ার পর জীবনের পথে নির্মলকে সঙ্গী করে এগিয়েছিলেন মিলখা ৷ যিনি নিজেও ক্রীড়াজগতের সঙ্গে যুক্ত ৷ দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল মিলখা-নির্মলের প্রেমকাহিনী (Milkha-Nirmal love story) ৷ পরে দুজনের চারহাত এক হয় ৷ দুজনে একসঙ্গে কাটিয়ে ফেলেছেন 59টি বছর ৷ প্রথম জীবনের সংগ্রাম, কেরিয়ারের উত্থানের মতো মিলখার প্রেমকাহিনীও সিনেমাকে হার মানায় ৷

সেদিন দেখা হয়েছিল...

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে 1955 সালে সুন্দরী নির্মলের সঙ্গে মিলখার প্রথম দেখা ৷ দুজন একই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে কলম্বো গিয়েছিলেন ৷ নির্মল ছিলেন মহিলা বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ৷ আর মিলখা ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স টিমের সদস্য ৷ কলম্বোয় এক ভারতীয় ব্যবসায়ী দুটো টিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ৷ সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দুজনের প্রথম দেখা ৷ সেটা ছিল লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ৷ প্রথম দেখাতেই নির্মলের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বে ফিদা হয়ে যান মিলখা ৷ আলাপও জমিয়ে ফেলেছিলেন ৷ কাগজ না থাকায় নির্মলের হাতে হোটেলের নম্বর লিখে দিয়েছিলেন মিলখা ৷ এর ঘটনার তিন বছর পর 1958 সালে ফের তাদের দেখা হয় ৷ যদিও দুজনের প্রেমকাহিনী শুরু হয় 1960 সালে ৷ সেবার দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দুজনের দেখা হয় ৷ ততদিনে মিলখার নাম দেশের ক্রীড়াজগতে ছড়িয়ে পড়েছে অলিম্পিকসে অংশ নেওয়া, এশিয়ান গেমসে সোনা জেতা হয়ে গিয়েছে ৷

পছন্দ ছিলেন না মিলখা

মিলখার অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের একা হাতে মানুষ করেছেন নির্মল কউর
মিলখার অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের একা হাতে মানুষ করেছেন নির্মল কউর

মিলখা-নির্মলের প্রেমকাহিনী নিয়ে তখন চারিদিকে চর্চা ৷ ঠিক করে নিয়েছিলেন দুজনে একসঙ্গে জীবনটা কাটাবেন ৷ কিন্তু নির্মলের পরিবারের মিলখাকে পছন্দ ছিল না ৷ আসলে নির্মল ছিলেন পঞ্জাবি ক্ষত্রী পরিবারের মেয়ে ৷ সমস্যা সমাধানে আসরে নামতে হয় তৎকালীন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং কৈরোকে ৷ তিনি দুটো পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে 1962 সালে চারহাত এক হয় নির্মল-মিলখার ৷ বিয়ের 59 বছরেও মিলখা নির্মলকে নিজের বড় শক্তি মনে করতেন ৷ মিলখা নিজে দশম পাস ছিলেন ৷ তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও স্বামীর অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের দেখভাল একা হাতে করেছেন নির্মল ৷ মিলখার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে এক মেয়ে চিকিৎসক ৷ আর ছেলে জীব মিলখা সিং তো অন্যতম সেরা গল্ফারদের মধ্যে একজন ৷

হমারি অধুরি কাহানি

এক সাক্ষাৎকারে মিলখা সিং জানিয়েছিলেন, 1956 সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন অলিম্পিকসের সময় বেটি ক্যাথওয়ার্টের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর ৷ 18 বছরের বেটির মিলখার পাগড়ি ভালো লেগে গিয়েছিল ৷ পরদিন বেটি মিলখাকে অনুরোধ করেন তাঁকেও পাগড়ি পরানোর জন্য ৷ 18 বছরের বেটির এই ব্যবহার মিলখার মন জয় করে নিয়েছিল ৷ তবে 1960 অলিম্পিকসের পর দুজনের দেখা সাক্ষাৎ কমে যায় ৷ 2006 সালে মেলবোর্নে বসেছিল কমনওয়েলথ গেমসের আসর ৷ মেলবোর্ন পৌঁছে মিলখা বেটিকে ফোন করেছিলেন ৷ মিলখা তখন জানতে পারেন, ক্যানসারে বেটির মৃত্যু হয়েছে ৷ মিলখা জানতে পেরেছিলেন, আমৃত্যু তাঁর দেওয়া পাগড়ি সামলে রেখেছিলেন বেটি ৷

মিলখা সিংয়ের প্রথম প্রেম গ্রামেরই এক মেয়ের সঙ্গে ৷ 2013 সালে এই কিংবদন্তি অ্যাথলিটের জীবন বড়পর্দায় তুলে ধরেন পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা ৷ মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অভিনেতা ফারহান আখতার ৷ ছবিতে মিলখার প্রথম প্রেম, গ্রামের মেয়েটির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর ৷

নয়াদিল্লি, 19 জুন : স্ত্রীর মৃত্যুর পর বেশিদিন অপেক্ষা করলেন না তিনিও ৷ তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল মিলখা ও নির্মলের ৷ দুজন একইসঙ্গে করোনার করাল গ্রাসে পড়লেন ৷ আর যাওয়ার সময়তেও মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধান ৷ স্ত্রী নির্মল কউরের মৃত্য়ুর পর গতকাল রাতে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন দেশের কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ মিলখা সিং (Milkha Singh) ৷ তবে মিলখার জীবনে নির্মল একমাত্র প্রেম ছিলেন তা বলা যায় না ৷ জীবনের বেশ কিছু পর্যায়ে তিন নারীর প্রেমে পড়েছিলেন সুদর্শন মিলখা ৷ যদিও তাঁদের মধ্যে কেউই 'মিসেস মিলখা সিং'-এর মর্যাদা পাননি ৷

মিলখার কথায়, "প্রতিটি খেলোয়াড় বা অ্য়াথলিটের জীবনে প্রেম আসে ৷ প্রতিটি স্টেশনে আপনার জন্য একটি করে প্রেমকাহিনী অপেক্ষা করে ৷" তিনটি প্রেম ব্যর্থ হওয়ার পর জীবনের পথে নির্মলকে সঙ্গী করে এগিয়েছিলেন মিলখা ৷ যিনি নিজেও ক্রীড়াজগতের সঙ্গে যুক্ত ৷ দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল মিলখা-নির্মলের প্রেমকাহিনী (Milkha-Nirmal love story) ৷ পরে দুজনের চারহাত এক হয় ৷ দুজনে একসঙ্গে কাটিয়ে ফেলেছেন 59টি বছর ৷ প্রথম জীবনের সংগ্রাম, কেরিয়ারের উত্থানের মতো মিলখার প্রেমকাহিনীও সিনেমাকে হার মানায় ৷

সেদিন দেখা হয়েছিল...

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে 1955 সালে সুন্দরী নির্মলের সঙ্গে মিলখার প্রথম দেখা ৷ দুজন একই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে কলম্বো গিয়েছিলেন ৷ নির্মল ছিলেন মহিলা বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ৷ আর মিলখা ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স টিমের সদস্য ৷ কলম্বোয় এক ভারতীয় ব্যবসায়ী দুটো টিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ৷ সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দুজনের প্রথম দেখা ৷ সেটা ছিল লভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ৷ প্রথম দেখাতেই নির্মলের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বে ফিদা হয়ে যান মিলখা ৷ আলাপও জমিয়ে ফেলেছিলেন ৷ কাগজ না থাকায় নির্মলের হাতে হোটেলের নম্বর লিখে দিয়েছিলেন মিলখা ৷ এর ঘটনার তিন বছর পর 1958 সালে ফের তাদের দেখা হয় ৷ যদিও দুজনের প্রেমকাহিনী শুরু হয় 1960 সালে ৷ সেবার দিল্লির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দুজনের দেখা হয় ৷ ততদিনে মিলখার নাম দেশের ক্রীড়াজগতে ছড়িয়ে পড়েছে অলিম্পিকসে অংশ নেওয়া, এশিয়ান গেমসে সোনা জেতা হয়ে গিয়েছে ৷

পছন্দ ছিলেন না মিলখা

মিলখার অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের একা হাতে মানুষ করেছেন নির্মল কউর
মিলখার অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের একা হাতে মানুষ করেছেন নির্মল কউর

মিলখা-নির্মলের প্রেমকাহিনী নিয়ে তখন চারিদিকে চর্চা ৷ ঠিক করে নিয়েছিলেন দুজনে একসঙ্গে জীবনটা কাটাবেন ৷ কিন্তু নির্মলের পরিবারের মিলখাকে পছন্দ ছিল না ৷ আসলে নির্মল ছিলেন পঞ্জাবি ক্ষত্রী পরিবারের মেয়ে ৷ সমস্যা সমাধানে আসরে নামতে হয় তৎকালীন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং কৈরোকে ৷ তিনি দুটো পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে 1962 সালে চারহাত এক হয় নির্মল-মিলখার ৷ বিয়ের 59 বছরেও মিলখা নির্মলকে নিজের বড় শক্তি মনে করতেন ৷ মিলখা নিজে দশম পাস ছিলেন ৷ তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও স্বামীর অনুপস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের দেখভাল একা হাতে করেছেন নির্মল ৷ মিলখার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে এক মেয়ে চিকিৎসক ৷ আর ছেলে জীব মিলখা সিং তো অন্যতম সেরা গল্ফারদের মধ্যে একজন ৷

হমারি অধুরি কাহানি

এক সাক্ষাৎকারে মিলখা সিং জানিয়েছিলেন, 1956 সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন অলিম্পিকসের সময় বেটি ক্যাথওয়ার্টের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর ৷ 18 বছরের বেটির মিলখার পাগড়ি ভালো লেগে গিয়েছিল ৷ পরদিন বেটি মিলখাকে অনুরোধ করেন তাঁকেও পাগড়ি পরানোর জন্য ৷ 18 বছরের বেটির এই ব্যবহার মিলখার মন জয় করে নিয়েছিল ৷ তবে 1960 অলিম্পিকসের পর দুজনের দেখা সাক্ষাৎ কমে যায় ৷ 2006 সালে মেলবোর্নে বসেছিল কমনওয়েলথ গেমসের আসর ৷ মেলবোর্ন পৌঁছে মিলখা বেটিকে ফোন করেছিলেন ৷ মিলখা তখন জানতে পারেন, ক্যানসারে বেটির মৃত্যু হয়েছে ৷ মিলখা জানতে পেরেছিলেন, আমৃত্যু তাঁর দেওয়া পাগড়ি সামলে রেখেছিলেন বেটি ৷

মিলখা সিংয়ের প্রথম প্রেম গ্রামেরই এক মেয়ের সঙ্গে ৷ 2013 সালে এই কিংবদন্তি অ্যাথলিটের জীবন বড়পর্দায় তুলে ধরেন পরিচালক রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা ৷ মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অভিনেতা ফারহান আখতার ৷ ছবিতে মিলখার প্রথম প্রেম, গ্রামের মেয়েটির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সোনম কাপুর ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.