ETV Bharat / sports

আন্তর্জাতিক নারী দিবস: মণিপুরের ভূমিকন্যার 'ম্যাগনিফিশিয়েন্ট মেরি' হওয়ার গল্প

আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের আগে জেনে নিন দেশের সবচেয়ে সফল মহিলা বক্সার মেরি কমের জীবন সংগ্রাম ৷

mary kom
মেরি কম
author img

By

Published : Mar 1, 2020, 2:23 PM IST

Updated : Mar 4, 2020, 8:11 AM IST

মেরি কমের গল্প

ভাবলে বিস্ময় জাগে যে, সেই মেয়েটি আদপে ঠিক কেমন ছিল । যে নিজের স্বপ্নের খোঁজে রোজ বাড়ি থেকে বেরোত, কীভাবে সে জীবনের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করত, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করত আর কীভাবেই বা সব বিদ্বেষ–বৈষম্যের পাহাড় জোরালো একটা পাঞ্চে গুঁড়িয়ে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিত । বর্তমানে তিনি একজন সহধর্মিণী, যিনি নিজের স্বামীকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন । আবার পাশাপাশি তিনি একজন মা-ও । তবু তিনি যতবার বক্সিং রিংয়ে নামবেন, ততবারই তেরঙার জয় হবে । বক্সিং গ্লাভস হাতে তাঁকে দেশের জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক অংশই আর্দশ হিসাবে মানে ।

নারী দিবস উপলক্ষে আসুন, আমরা সকলে এই মহিলা বক্সারের জীবনযাত্রার দিকে একবার ফিরে তাকাই ৷ তাঁর কৃতিত্বের জয়ধ্বনি দিই ৷ মেরি কম পদ্মবিভূষণ সম্মানের যোগ্য প্রাপক । একইসঙ্গে আবার ‘চতুর্ভূজাকৃতি গোলক’ তথা বক্সিং রিংয়ের আটবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও ৷

মণিপুরের বাসিন্দা মেরি কমের জন্ম চূড়চন্দপুরে জেলায় 1983 সালের 1 মার্চ । তাঁর বাবা-মা ছিলেন কৃষক। মেরির আসল নাম মাঙ্গতে চুগনিচুং মেরি কম । যদিও অনুরাগীদের কাছে তিনি পরিচিত এমসি মেরি কম নামেই । রাজ্যসভার সদস্য মেরি আজ নিজেকে সমাজের যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে প্রচুর বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়েছে । অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ।

মেরি কমের উত্থানের কাহিনী

কঠোর সংগ্রামকে পালটেছেন বিজয়গাথায়

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে যেতেন মেরি কম । তাঁদের চাষের কাজে সাহায্য করতেন । কিন্তু তখন থেকেই বক্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ৷ যার কারণ তাঁর শৈশবের আইডল, দিনকো সিং। দিনকোর কাছে বক্সিং শেখার ইচ্ছা ছিল মেরির, আর তিনি সে ইচ্ছা পূরণও করেছিলেন । পরীক্ষায় কোনওদিনই শীর্ষ স্থান অধিকার করতে পারেননি মেরি কারণ তাঁর সমস্ত মনোযোগ আর আগ্রহ ছিল খেলাধূলার প্রতি । 37 বছর বয়সি দেশের সেরা মহিলা বক্সার তখন ভাবতেও পারেননি যে একদিকে বক্সিং নিয়ে পরিবারের আপত্তি এবং অন্যদিকে পিঠে পাহাড়প্রমাণ আর্থিক অনটনের বোঝা সামলে উঠে কোনওদিন এই উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন । তেজিয়ান, একগুঁয়ে সেই বছর পনেরোর মেয়েটি হাতে বক্সিং গ্লাভস পরে নিজের ইচ্ছাপূরণের যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ পরবর্তীকালে অনেক পরে পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়ায় ৷ শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালে তাঁর আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর কেরিয়ারের সূচনা হয়।

mary kom
অনুশীলনে ব্যস্ত

সুপারওম্যান মেরি কম, যিনি একজন সুপার মম-ও বটে

সমস্ত সফল মহিলাদের নেপথ্যে একজন পুরুষ থাকলে মেরির ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে স্বামী ওনলার ( ফুটবল খেলোয়াড়)৷ ২০০৫ সালে মেরি এবং ওনলার বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন । কিন্তু দু’জনের বিয়ে নিয়ে মেরির কোচ অসন্তুষ্ট ছিলেন ৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল বিয়ের পর মেরি বক্সিং ছেড়ে দেবেন । অথচ যত সময় এগিয়েছে বক্সিংয়ে সফল হওয়ার প্রতি মেরির সংকল্প এবং প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়েছে ৷

বিয়ের দু’বছর পর মেরি দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। এর পরই ওনলার বাড়ির কাজকর্ম সামলানোর ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নেন আর মেরি শুরু করে দেন রিংয়ে ফেরার লড়াই ৷ দুই সন্তানের মা, মেরির কামব্যাক ম্যাচ দেখে মনে হয়েছিল যেন এতদিন তিনি রিংয়েই ছিলেন, অন্য কোথাও যাননি । দুর্ধর্ষ সেই কামব্যাক ম্যাচেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ সোনার মেডেল জিতে নেন মেরি । তাঁকে ‘সুপার মম’ বলে অভিহিত করার একটা বড় কারণ এই যে, মা হওয়ার পরই তাঁর খেলোয়াড় জীবনের বেশিরভাগ সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।

mary kom
পরিবারের সঙ্গে মেরি

জিতেছেন একের পর এক যুদ্ধ

37 বছর বয়সি মেরি কম চতুর্থ ক্রীড়াবিদ এবং মহিলা হিসাবে প্রথম ক্রীড়াবিদ যিনি পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন । গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ (2007), ক্রিকেটের ভগবান সচিন তেন্ডুলকর (2008) এবং কিংবদন্তি পর্বতারোহী স্যার এডমন্ড হিলারি পরে পদ্ম বিভূষণ সম্মান পান তিনি ।

কেরিয়ার জুড়ে শুধুই সম্মান

মেরি কম হলেন সেই প্রথম বক্সার (পুরুষ বা মহিলা) যিনি আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পদক জিতেছেন ৷ 2012 লন্ডন অলিম্পিকসের জন্য মহিলা হিসাবে প্রথম মনোনয়ন ছিল মেরি কমেরই নামে ৷ সেবার দেশের হয়ে ব্রোঞ্জ পদকও পেয়েছিলেন তিনি । প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার যিনি এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন । 2014 সালের এশিয়ান গেমসেও সোনা জেতেন মণিপুরের বক্সার ৷

মেরি কমের গল্প

ভাবলে বিস্ময় জাগে যে, সেই মেয়েটি আদপে ঠিক কেমন ছিল । যে নিজের স্বপ্নের খোঁজে রোজ বাড়ি থেকে বেরোত, কীভাবে সে জীবনের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করত, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করত আর কীভাবেই বা সব বিদ্বেষ–বৈষম্যের পাহাড় জোরালো একটা পাঞ্চে গুঁড়িয়ে একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিত । বর্তমানে তিনি একজন সহধর্মিণী, যিনি নিজের স্বামীকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসেন, সমর্থন করেন । আবার পাশাপাশি তিনি একজন মা-ও । তবু তিনি যতবার বক্সিং রিংয়ে নামবেন, ততবারই তেরঙার জয় হবে । বক্সিং গ্লাভস হাতে তাঁকে দেশের জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক অংশই আর্দশ হিসাবে মানে ।

নারী দিবস উপলক্ষে আসুন, আমরা সকলে এই মহিলা বক্সারের জীবনযাত্রার দিকে একবার ফিরে তাকাই ৷ তাঁর কৃতিত্বের জয়ধ্বনি দিই ৷ মেরি কম পদ্মবিভূষণ সম্মানের যোগ্য প্রাপক । একইসঙ্গে আবার ‘চতুর্ভূজাকৃতি গোলক’ তথা বক্সিং রিংয়ের আটবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও ৷

মণিপুরের বাসিন্দা মেরি কমের জন্ম চূড়চন্দপুরে জেলায় 1983 সালের 1 মার্চ । তাঁর বাবা-মা ছিলেন কৃষক। মেরির আসল নাম মাঙ্গতে চুগনিচুং মেরি কম । যদিও অনুরাগীদের কাছে তিনি পরিচিত এমসি মেরি কম নামেই । রাজ্যসভার সদস্য মেরি আজ নিজেকে সমাজের যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে প্রচুর বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আসতে হয়েছে । অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে ।

মেরি কমের উত্থানের কাহিনী

কঠোর সংগ্রামকে পালটেছেন বিজয়গাথায়

ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে যেতেন মেরি কম । তাঁদের চাষের কাজে সাহায্য করতেন । কিন্তু তখন থেকেই বক্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ৷ যার কারণ তাঁর শৈশবের আইডল, দিনকো সিং। দিনকোর কাছে বক্সিং শেখার ইচ্ছা ছিল মেরির, আর তিনি সে ইচ্ছা পূরণও করেছিলেন । পরীক্ষায় কোনওদিনই শীর্ষ স্থান অধিকার করতে পারেননি মেরি কারণ তাঁর সমস্ত মনোযোগ আর আগ্রহ ছিল খেলাধূলার প্রতি । 37 বছর বয়সি দেশের সেরা মহিলা বক্সার তখন ভাবতেও পারেননি যে একদিকে বক্সিং নিয়ে পরিবারের আপত্তি এবং অন্যদিকে পিঠে পাহাড়প্রমাণ আর্থিক অনটনের বোঝা সামলে উঠে কোনওদিন এই উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন । তেজিয়ান, একগুঁয়ে সেই বছর পনেরোর মেয়েটি হাতে বক্সিং গ্লাভস পরে নিজের ইচ্ছাপূরণের যাত্রা শুরু করেছিলেন ৷ পরবর্তীকালে অনেক পরে পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়ায় ৷ শেষ পর্যন্ত ২০০১ সালে তাঁর আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর কেরিয়ারের সূচনা হয়।

mary kom
অনুশীলনে ব্যস্ত

সুপারওম্যান মেরি কম, যিনি একজন সুপার মম-ও বটে

সমস্ত সফল মহিলাদের নেপথ্যে একজন পুরুষ থাকলে মেরির ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে স্বামী ওনলার ( ফুটবল খেলোয়াড়)৷ ২০০৫ সালে মেরি এবং ওনলার বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন । কিন্তু দু’জনের বিয়ে নিয়ে মেরির কোচ অসন্তুষ্ট ছিলেন ৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল বিয়ের পর মেরি বক্সিং ছেড়ে দেবেন । অথচ যত সময় এগিয়েছে বক্সিংয়ে সফল হওয়ার প্রতি মেরির সংকল্প এবং প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়েছে ৷

বিয়ের দু’বছর পর মেরি দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। এর পরই ওনলার বাড়ির কাজকর্ম সামলানোর ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নেন আর মেরি শুরু করে দেন রিংয়ে ফেরার লড়াই ৷ দুই সন্তানের মা, মেরির কামব্যাক ম্যাচ দেখে মনে হয়েছিল যেন এতদিন তিনি রিংয়েই ছিলেন, অন্য কোথাও যাননি । দুর্ধর্ষ সেই কামব্যাক ম্যাচেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ সোনার মেডেল জিতে নেন মেরি । তাঁকে ‘সুপার মম’ বলে অভিহিত করার একটা বড় কারণ এই যে, মা হওয়ার পরই তাঁর খেলোয়াড় জীবনের বেশিরভাগ সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।

mary kom
পরিবারের সঙ্গে মেরি

জিতেছেন একের পর এক যুদ্ধ

37 বছর বয়সি মেরি কম চতুর্থ ক্রীড়াবিদ এবং মহিলা হিসাবে প্রথম ক্রীড়াবিদ যিনি পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন । গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বনাথন আনন্দ (2007), ক্রিকেটের ভগবান সচিন তেন্ডুলকর (2008) এবং কিংবদন্তি পর্বতারোহী স্যার এডমন্ড হিলারি পরে পদ্ম বিভূষণ সম্মান পান তিনি ।

কেরিয়ার জুড়ে শুধুই সম্মান

মেরি কম হলেন সেই প্রথম বক্সার (পুরুষ বা মহিলা) যিনি আটবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পদক জিতেছেন ৷ 2012 লন্ডন অলিম্পিকসের জন্য মহিলা হিসাবে প্রথম মনোনয়ন ছিল মেরি কমেরই নামে ৷ সেবার দেশের হয়ে ব্রোঞ্জ পদকও পেয়েছিলেন তিনি । প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার যিনি এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন । 2014 সালের এশিয়ান গেমসেও সোনা জেতেন মণিপুরের বক্সার ৷

Last Updated : Mar 4, 2020, 8:11 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.