ETV Bharat / sports

Syed Nayeemuddin : কলকাতা ছাড়ছেন না, অ্যাকাডেমি গড়তে লটারির টিকিট কাটেন; জানালেন সৈয়দ নঈমুদ্দিন

কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না, জানালেন কিংবদন্তী ফুটবলার তথা প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক ও কোচ সৈয়দ নঈমুদ্দিন (Former Indian Football Coach Syed Nayeemuddin is Not Leaving Kolkata) ৷ তবে, স্বপ্ন ভারতের সেরা ফুটবলারদের তৈরি করা আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য ৷ তাই একটি অ্যাকাডেমি তৈরির ইচ্ছে রয়েছে ৷ তার জন্য টাকা জোগাড় করতে লটারির টিকিট কাটেন নিয়মিত ৷

Former Indian Football Coach Syed Nayeemuddin is Not Leaving Kolkata
Former Indian Football Coach Syed Nayeemuddin is Not Leaving Kolkata
author img

By

Published : Jun 12, 2022, 4:45 PM IST

কলকাতা, 12 জুন : শ্রান্ত-নঈম, কিছুটা দিগভ্রান্তও বটে ৷ যখন জানতে চাওয়া হল “আপনি না কি বাংলা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ?” দ্রোণাচার্য কোচ সৈয়দ নঈমুদ্দিন এক লহমায় কড়া ট্যাকেলে যাবতীয় ধন্দ উড়িয়ে দিলেন ৷ জানালেন, এটা তাঁর কর্মভূমি ৷ ছাড়লে সবাইকে জানিয়ে ছাড়বেন (Former Indian Football Coach Syed Nayeemuddin is Not Leaving Kolkata) ৷ সেই সিগনেচার স্টাইল ! চোখে কালো চশমা। সত্তরোর্ধ্ব চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেননি একফোঁটাও । সাদা জামা সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট । আর আজও সঙ্গী সেই নর্মদা স্কুটার ৷ গত কুড়ি বছর ধরে ৷

সৈয়দ নঈমুদ্দিনকে দেখলে সকলেই চিনতে পারবেন একলহমায় ৷ কলকাতার তিন বড় ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন । ভারতীয় টিমে কোচিং করিয়েছেন একাধিকবার । একটা সময় ফুটবলাররা তাঁকে দেখলেই অন্য দরজা দিয়ে পালাতেন ৷ শৃঙ্খলা তাঁর জীবনের শেষ কথা । তিনি মানতেন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ৷ সেখানে কোনও আপোস নয়। তাঁর ভয়ে ফুটবলাররা চুলের স্টাইল করতেন না ৷ বড় চুল তিনি দেখতে পারতেন না ৷ তিনি দলে থাকা মানে নাপিত ডেকে বড় চুলের ফুটবলারদের চুল কাটিয়ে দিতেন ৷ ফলে এ সব নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। নানান বিতর্কে ময়দানকে সরগরম করে রাখতে পারতেন সৈয়দ নঈমুদ্দিন ৷

ফুটবলারদের যেমন খাটাতেন, তেমনি গলাও ফাটাতেন তাঁদের হয়ে ৷ ফুটবলারদের ভালে হোটেলে রাখা, ভালে খাবার দেওয়া, ট্যাঙ্কের জলের বদলে ফুটবলারদের জন্য মিনারেল ওয়াটারের প্রচলন তিনিই শুরু করেছিলেন ময়দানে ৷ কেন ক্লাব সময় মত ফুটবলারদের টাকা মেটাবে না ? প্রকাশ্যে বলতে দ্বিধা করতেন না ৷ অনুশীলনের পরে ফুটবলাদের খাবারের মেনু কী হবে ? তা তিনি ঠিক করে দিতেন ৷ খেলোয়াড়দের জন্য ফলের রস চালু করেছিলেন তিনি ৷ আচমকাই ফুটবলারদের মেসে হাজির হয়ে দেখে নিতেন হাল-চাল ৷

নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও মমতা দেখাননি । সাউথ ক্লাবে টেনিস ম্যাচে হারের পর ছেলেকে সকলের সামনে বেত মেরেছিলেন ৷ আর অনুশীলনে ? নিজের স্কুটারের পিছনে ছেলেকে দৌড় করাতেন ৷ সাউথ ক্লাব থেকে শুরু হয়ে শেষ হত পাম অ্যাভিনিউতে ৷ সত্তরোর্ধ্ব সেই মানুষটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল কয়েকদিন আগে সল্টলেক স্টেডিয়ামে ৷ এশিয়ান কাপে ভারতের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন ৷ কিন্তু, সাড়ে আটটায় ম্যাচ শুনে তিনি ম্যাচ না দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ সঙ্গে সেই নর্মদা স্কুটার ৷ মুখের হাসি অমলিন ৷ কিন্তু, হৃদয়ে বড্ড যন্ত্রণা ৷ কোভিডে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর, তাঁর যাবতীয় শক্তি যেন নিঃশেষ ৷ তবে, মুখে বলছেন, ‘‘আরে বয়সটা ফ্যাক্টর নয় ৷ ফ্যাক্টরটা মন ৷’’

দীর্ঘনিঃশ্বাসের পর দীর্ঘনিঃশ্বাস ৷ আর কলকাতাকে ভাল লাগছে না সৈয়দ নঈমুদ্দিনের ! ফিরে যেতে চান সেই হায়দরাবাদে ৷ অতীতে বহুবার বাংলা ছাড়তে চেয়েছিলেন ৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নঈমুউদ্দিনের বাঙালি স্ত্রী ৷ এ বার যেন মনস্থ করেই ফেলেছেন আর নয় বাংলায় ৷ এ বার বাড়ি ফেরার পালা ৷ বাইপাসের ধারের ফ্ল্যাটে বিবাহিত মেয়ের সঙ্গে থাকেন নঈম ৷ সেখানে কেমন যেন বাঁধো বাঁধো ঠেকছে ৷ দুই ছেলেই আমেরিকা প্রবাসী ৷

নঈমুদ্দিন জানান, ‘‘ছেলে-মেয়েরা অনেক করছে ৷ কিন্তু, আমার আর ভালে লাগছে না ৷ ওদের তো জীবন পড়ে আছে ৷ আমাকে নিয়ে থাকলে চলবে !’’ যুবভারতীতে এই কথা বলার চব্বিশ ঘণ্টা পর তাঁর সঙ্গে ফের যোগাযোগ করা হয় ৷ এ বার তাঁর জবাব, “বাংলা ছাড়ব কেন ? জ্যোতিষ গুহ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন ৷ তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছি ৷ তিন বড় ক্লাবের সঙ্গে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে যুক্ত থেকেছি ৷ বাংলা এবং ভারতীয় দলের কোচ হয়েছি ৷ এখানকার মানুষের ভালবাসা পেয়েছি ৷ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী সবসময় খোঁজ নেন ৷ সব ধরনের সম্মানে সম্মানিত করেছেন ৷ আমার বাংলা ছাড়ার খবর ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছেও গিয়েছে ৷ আমাকে তিনি বললেন, ইচ্ছে হলে হায়দরাবাদ ঘুরে আসুন ৷ কিন্তু, বাংলা ছেড়ে যাওয়া চলবে না ৷ আমিও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না ৷ যদি যাই তাহলে সাংবাদিক সম্মেলন করেই যাব ৷ চুপি চুপি যাব না ৷”

আরও পড়ুন : AFC Asian Cup qualifier: আত্মবিশ্বাসী তবে আত্মতুষ্ট নয়, আফগান ম্যাচে শূন্য থেকে শুরু করতে চান স্টিমাচ

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি যেন অন্য মানুষ ৷ একটা সময়ে বিদেশের খেলার খবর রাখতেন ৷ কিন্তু, এখন খবর রাখেন লটারির টিকিটের । নিজের মুখেই বললেন, ‘‘11 জুন খেলা আছে ৷ 500 টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি ৷ জিতলেই দু’কোটি টাকা পাব ৷ কিন্তু, লাগছে কই ৷’’ অবাক লাগে এই মানুষটার কথা শুনলে ৷ তাঁর জীবনের টাকার এখন এতটাই প্রয়োজন !

হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এখন ভারতীয় কোচ কত পান ? আমাকে তো দশ হাজার টাকার বেশি কেউই দেয়নি ৷’’ সত্যিই তো, এখন বিদেশী কোচদের বেতন মাসে এক কোটির কাছাকাছি ৷ তা আইএসএল এর ক্লাব হোক, অথবা ভারতীয় দল ৷ কটাক্ষের সুরে বললেন, “আরে আমি যা সাফল্য পেয়েছি, তাতে ইউরোপে থাকলে পঞ্চাশ কোটি ডলার থাকত ৷ আমি লটারির টিকিট কাটি ছেলে মেয়েদের জন্য ৷ ওদের জন্য কিছু দিয়ে যেতে পারলে ভাল লাগবে ৷ আর এই টাকায় ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলতে চাই ৷ ভারতীয়দের মধ্যে থেকে সেরা ফুটবলার তৈরি করা যায় তা দেখিয়ে দিতাম ৷” শ্রান্ত দ্রোণাচার্যের গলায় দিগভ্রান্ততার সুর ৷

আরও পড়ুন : AFC Asian Qualifier : সুনীল-সামাদের জোড়া ফলায় 'কাবুল জয়' ভারতের

দ্রোণাচার্য পুরস্কার পেয়েছেন। খেলেছেন মাথা উঁচু করে ৷ 1970 সালে ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে শেষ ব্রোঞ্জ পদকটি এসেছিল তাঁরই অধিনায়কত্বে ৷ কোচিংও করিয়েছেন দাপটের সঙ্গে ৷ একটা সময় কলকাতার কোনও ক্লাব তাঁকে নিতে রাজি হয়নি ৷ ফুটবলারদের একাংশের অভিযোগ ছিল, তিনি ফুটবলারদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন ৷ তার পরে তিনি চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে ৷ কলকাতার দুই প্রধানকে অনেক ট্রফি দিয়েছেন ৷ কিন্তু, দুই ক্লাব থেকে তাঁর বিদায় চরম লজ্জার মধ্যে দিয়ে হয়েছিল ৷ সে সব লিখে বিতর্ক আর বাড়ানোর ইচ্ছে নেই ৷ কারণ তাঁদের অনেকেই আজ প্রয়াত ৷

তবুও, বাংলার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা একেবারে অন্যরকম ৷ জানালেন, ‘‘সেই 64 সালে জ্যোতিষ গুহ (ইস্টবেঙ্গলের ডাক সাইটে প্রয়াত সচিব) আমাকে বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন ৷ বাংলা আমাকে সব দিয়েছে ৷ হায়দরাবাদে থাকলে কে চিনত আমায় !’’ বাকিটা যেন অন্তরাত্মার দিকে ঠেলে দিলেন ৷ তার পরে স্কুটারে স্টার্ট দিলেন ৷ 20 বছরের সঙ্গী স্কুটার একাবারে স্টার্ট নেয় না ৷ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমার স্কুটারেরও বয়স হয়ে গিয়েছে ৷ হায়দরাবাদে চলে গেলে ওকেও নিয়ে যাব সঙ্গে করে ৷’’

কলকাতা, 12 জুন : শ্রান্ত-নঈম, কিছুটা দিগভ্রান্তও বটে ৷ যখন জানতে চাওয়া হল “আপনি না কি বাংলা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ?” দ্রোণাচার্য কোচ সৈয়দ নঈমুদ্দিন এক লহমায় কড়া ট্যাকেলে যাবতীয় ধন্দ উড়িয়ে দিলেন ৷ জানালেন, এটা তাঁর কর্মভূমি ৷ ছাড়লে সবাইকে জানিয়ে ছাড়বেন (Former Indian Football Coach Syed Nayeemuddin is Not Leaving Kolkata) ৷ সেই সিগনেচার স্টাইল ! চোখে কালো চশমা। সত্তরোর্ধ্ব চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেননি একফোঁটাও । সাদা জামা সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট । আর আজও সঙ্গী সেই নর্মদা স্কুটার ৷ গত কুড়ি বছর ধরে ৷

সৈয়দ নঈমুদ্দিনকে দেখলে সকলেই চিনতে পারবেন একলহমায় ৷ কলকাতার তিন বড় ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন । ভারতীয় টিমে কোচিং করিয়েছেন একাধিকবার । একটা সময় ফুটবলাররা তাঁকে দেখলেই অন্য দরজা দিয়ে পালাতেন ৷ শৃঙ্খলা তাঁর জীবনের শেষ কথা । তিনি মানতেন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ৷ সেখানে কোনও আপোস নয়। তাঁর ভয়ে ফুটবলাররা চুলের স্টাইল করতেন না ৷ বড় চুল তিনি দেখতে পারতেন না ৷ তিনি দলে থাকা মানে নাপিত ডেকে বড় চুলের ফুটবলারদের চুল কাটিয়ে দিতেন ৷ ফলে এ সব নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। নানান বিতর্কে ময়দানকে সরগরম করে রাখতে পারতেন সৈয়দ নঈমুদ্দিন ৷

ফুটবলারদের যেমন খাটাতেন, তেমনি গলাও ফাটাতেন তাঁদের হয়ে ৷ ফুটবলারদের ভালে হোটেলে রাখা, ভালে খাবার দেওয়া, ট্যাঙ্কের জলের বদলে ফুটবলারদের জন্য মিনারেল ওয়াটারের প্রচলন তিনিই শুরু করেছিলেন ময়দানে ৷ কেন ক্লাব সময় মত ফুটবলারদের টাকা মেটাবে না ? প্রকাশ্যে বলতে দ্বিধা করতেন না ৷ অনুশীলনের পরে ফুটবলাদের খাবারের মেনু কী হবে ? তা তিনি ঠিক করে দিতেন ৷ খেলোয়াড়দের জন্য ফলের রস চালু করেছিলেন তিনি ৷ আচমকাই ফুটবলারদের মেসে হাজির হয়ে দেখে নিতেন হাল-চাল ৷

নিজের সন্তানের ক্ষেত্রেও মমতা দেখাননি । সাউথ ক্লাবে টেনিস ম্যাচে হারের পর ছেলেকে সকলের সামনে বেত মেরেছিলেন ৷ আর অনুশীলনে ? নিজের স্কুটারের পিছনে ছেলেকে দৌড় করাতেন ৷ সাউথ ক্লাব থেকে শুরু হয়ে শেষ হত পাম অ্যাভিনিউতে ৷ সত্তরোর্ধ্ব সেই মানুষটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল কয়েকদিন আগে সল্টলেক স্টেডিয়ামে ৷ এশিয়ান কাপে ভারতের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন ৷ কিন্তু, সাড়ে আটটায় ম্যাচ শুনে তিনি ম্যাচ না দেখে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷ সঙ্গে সেই নর্মদা স্কুটার ৷ মুখের হাসি অমলিন ৷ কিন্তু, হৃদয়ে বড্ড যন্ত্রণা ৷ কোভিডে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর, তাঁর যাবতীয় শক্তি যেন নিঃশেষ ৷ তবে, মুখে বলছেন, ‘‘আরে বয়সটা ফ্যাক্টর নয় ৷ ফ্যাক্টরটা মন ৷’’

দীর্ঘনিঃশ্বাসের পর দীর্ঘনিঃশ্বাস ৷ আর কলকাতাকে ভাল লাগছে না সৈয়দ নঈমুদ্দিনের ! ফিরে যেতে চান সেই হায়দরাবাদে ৷ অতীতে বহুবার বাংলা ছাড়তে চেয়েছিলেন ৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নঈমুউদ্দিনের বাঙালি স্ত্রী ৷ এ বার যেন মনস্থ করেই ফেলেছেন আর নয় বাংলায় ৷ এ বার বাড়ি ফেরার পালা ৷ বাইপাসের ধারের ফ্ল্যাটে বিবাহিত মেয়ের সঙ্গে থাকেন নঈম ৷ সেখানে কেমন যেন বাঁধো বাঁধো ঠেকছে ৷ দুই ছেলেই আমেরিকা প্রবাসী ৷

নঈমুদ্দিন জানান, ‘‘ছেলে-মেয়েরা অনেক করছে ৷ কিন্তু, আমার আর ভালে লাগছে না ৷ ওদের তো জীবন পড়ে আছে ৷ আমাকে নিয়ে থাকলে চলবে !’’ যুবভারতীতে এই কথা বলার চব্বিশ ঘণ্টা পর তাঁর সঙ্গে ফের যোগাযোগ করা হয় ৷ এ বার তাঁর জবাব, “বাংলা ছাড়ব কেন ? জ্যোতিষ গুহ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন ৷ তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছি ৷ তিন বড় ক্লাবের সঙ্গে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে যুক্ত থেকেছি ৷ বাংলা এবং ভারতীয় দলের কোচ হয়েছি ৷ এখানকার মানুষের ভালবাসা পেয়েছি ৷ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী সবসময় খোঁজ নেন ৷ সব ধরনের সম্মানে সম্মানিত করেছেন ৷ আমার বাংলা ছাড়ার খবর ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছেও গিয়েছে ৷ আমাকে তিনি বললেন, ইচ্ছে হলে হায়দরাবাদ ঘুরে আসুন ৷ কিন্তু, বাংলা ছেড়ে যাওয়া চলবে না ৷ আমিও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না ৷ যদি যাই তাহলে সাংবাদিক সম্মেলন করেই যাব ৷ চুপি চুপি যাব না ৷”

আরও পড়ুন : AFC Asian Cup qualifier: আত্মবিশ্বাসী তবে আত্মতুষ্ট নয়, আফগান ম্যাচে শূন্য থেকে শুরু করতে চান স্টিমাচ

জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি যেন অন্য মানুষ ৷ একটা সময়ে বিদেশের খেলার খবর রাখতেন ৷ কিন্তু, এখন খবর রাখেন লটারির টিকিটের । নিজের মুখেই বললেন, ‘‘11 জুন খেলা আছে ৷ 500 টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি ৷ জিতলেই দু’কোটি টাকা পাব ৷ কিন্তু, লাগছে কই ৷’’ অবাক লাগে এই মানুষটার কথা শুনলে ৷ তাঁর জীবনের টাকার এখন এতটাই প্রয়োজন !

হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এখন ভারতীয় কোচ কত পান ? আমাকে তো দশ হাজার টাকার বেশি কেউই দেয়নি ৷’’ সত্যিই তো, এখন বিদেশী কোচদের বেতন মাসে এক কোটির কাছাকাছি ৷ তা আইএসএল এর ক্লাব হোক, অথবা ভারতীয় দল ৷ কটাক্ষের সুরে বললেন, “আরে আমি যা সাফল্য পেয়েছি, তাতে ইউরোপে থাকলে পঞ্চাশ কোটি ডলার থাকত ৷ আমি লটারির টিকিট কাটি ছেলে মেয়েদের জন্য ৷ ওদের জন্য কিছু দিয়ে যেতে পারলে ভাল লাগবে ৷ আর এই টাকায় ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলতে চাই ৷ ভারতীয়দের মধ্যে থেকে সেরা ফুটবলার তৈরি করা যায় তা দেখিয়ে দিতাম ৷” শ্রান্ত দ্রোণাচার্যের গলায় দিগভ্রান্ততার সুর ৷

আরও পড়ুন : AFC Asian Qualifier : সুনীল-সামাদের জোড়া ফলায় 'কাবুল জয়' ভারতের

দ্রোণাচার্য পুরস্কার পেয়েছেন। খেলেছেন মাথা উঁচু করে ৷ 1970 সালে ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে শেষ ব্রোঞ্জ পদকটি এসেছিল তাঁরই অধিনায়কত্বে ৷ কোচিংও করিয়েছেন দাপটের সঙ্গে ৷ একটা সময় কলকাতার কোনও ক্লাব তাঁকে নিতে রাজি হয়নি ৷ ফুটবলারদের একাংশের অভিযোগ ছিল, তিনি ফুটবলারদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন ৷ তার পরে তিনি চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে ৷ কলকাতার দুই প্রধানকে অনেক ট্রফি দিয়েছেন ৷ কিন্তু, দুই ক্লাব থেকে তাঁর বিদায় চরম লজ্জার মধ্যে দিয়ে হয়েছিল ৷ সে সব লিখে বিতর্ক আর বাড়ানোর ইচ্ছে নেই ৷ কারণ তাঁদের অনেকেই আজ প্রয়াত ৷

তবুও, বাংলার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা একেবারে অন্যরকম ৷ জানালেন, ‘‘সেই 64 সালে জ্যোতিষ গুহ (ইস্টবেঙ্গলের ডাক সাইটে প্রয়াত সচিব) আমাকে বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন ৷ বাংলা আমাকে সব দিয়েছে ৷ হায়দরাবাদে থাকলে কে চিনত আমায় !’’ বাকিটা যেন অন্তরাত্মার দিকে ঠেলে দিলেন ৷ তার পরে স্কুটারে স্টার্ট দিলেন ৷ 20 বছরের সঙ্গী স্কুটার একাবারে স্টার্ট নেয় না ৷ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমার স্কুটারেরও বয়স হয়ে গিয়েছে ৷ হায়দরাবাদে চলে গেলে ওকেও নিয়ে যাব সঙ্গে করে ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.