কলকাতা, 18 জুলাই: কম সময়ে যে ক’জন খেলোয়াড় বাংলার ফুটবল দুনিয়ায় ছাপ ফেলতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে স্বপন সেনগুপ্ত অন্যতম ৷ 1968 সাল থেকে কলকাতার ক্লাব ফুটবলে খেললেও, বড় দলের জার্সি পরেছিলেন সাতের দশকের গোড়ায় ৷ চারবছর লাল হলুদ জার্সিতে খেলছেন এবং ইস্টবেঙ্গলের সেই 'সোনালি সত্তরের' অন্যতম উজ্জ্বল মুখ তিনি ৷ 1973 সালে লাল-হলুদের ক্যাপ্টেন আর্মব্যান্ড পরার কৃতিত্ব অর্জন করা মানুষটি এ বছরের ইস্টবেঙ্গলের জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত হবেন (East Bengal Gives Lifetime Achievement Award to Former Footballer and Captain Swapan Sengupta) ৷ স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছিল ব্যারাকপুরের বাসিন্দা স্বপন সেনগুপ্তর কথায় ৷
'সোনালি সত্তর' মানেই বাঙালির ফুটবল আবেগের সোনাঝরা বিকেল ৷ মাঠ ভরা দর্শক, ফুটবলারদের স্কিল ও শক্তির মিশেলে ছিল আর্ন্তজাতিক ফুটবলে ভারতীয় স্বাদ। তথাকথিত ছোট দলের ফুটবলাররাও তিন প্রধানকে হামেশাই টেক্কা দিত। আর এখানেই নিজের জাত আলাদা করে চিনিয়ে ছিলেন স্বপন সেনগুপ্ত ৷ তাঁর দুরন্ত স্কিল সেই সময়ের বয়সভিত্তিক ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল ৷
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“আমি বল নিয়ে দারুণ ডজ করতে পারতাম ৷ আমার স্কিল দেখতে মাঠে ভিড় জমত ৷ মাঠের মধ্যে আমার ওই ছটফটে স্কিল দেখে সতীর্থরা মজা করে চিংড়ি বলে ডাকত ৷ সেই নামটা কলকাতা ময়দানেও চালু হয়ে গিয়েছিল ৷ আমার খেলার ধরনে একটা ইউটিলিটি ফুটবলের ছোঁয়া ছিল। আমাকে নজর বন্দি করা খুব একটা সহজ হত না ৷”
ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে জীবনকৃতি সম্মান প্রাপ্তি তাঁর কাছে পরম পাওয়া ৷ নিজের ফুটবলার জীবনের ডাউন মেমোরি লেনে হাঁটলে তৃপ্তবোধ করেন ৷ তিনি বলেন, “আমার খেলোয়াড় জীবনে এতো ভালো ম্যাচ রয়েছে এবং তার সংখ্যা এতটাই বেশি যে তার মধ্যে কোনও একটি বিশেষ ম্যাচ বেছে নেওয়া কঠিন। 1970 সালের পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলা বা লিগ শিল্ড, ডুরাণ্ড, রোভার্স সহ-ঘরোয়া টুর্নামেন্টে আমি যত গোল করিয়েছি, তা যদি নিজে করতাম তাহলে স্কোরার তালিকায় অনেক উপরের দিকে থাকত আমার নাম ৷”
আরও পড়ুন: Durand Cup 2022: ডার্বিতেই কি ডুরান্ড কাপের বোধন ?
একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “একটি ম্যাচে আমি অরুণ ঘোষকে মাটিতে ছিটকে ফেলে দিয়েছিলাম ৷ আমার স্কিলের সামনে সেদিন বেসামাল হয়ে গিয়েছিলেন অরুণদা ৷ তারপর তিনি অবসর নিয়ে নেন ৷ প্রদীপদাকে অরুণদা বলেছিলেন, আমার স্কিলের সামনে নাস্তানাবুদ হয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় তাঁর সম্মানে লেগেছে ৷ তাই অবসর নিয়ে নিলেন ৷’’
1973 সালে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পরের অধ্যায় নিয়ে তিনি বলেন, “ একে সিনিয়র এবং জুনিয়রের বোঝাপড়া তার সঙ্গে কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি- মাঠে বিস্ফোরণ ঘটাতে সাহায্য করেছিল আমাদের ৷ কাজল মুখোপাধ্যায়ের মতো সিনিয়রা আমাদের উৎসাহ দিতেন ৷ আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল ৷" তাঁর স্মৃতিতে উঠে আসেন সুভাষ ভৌমিকও ৷ তিনি বলেন, "সুভাষের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব সেই স্কুল ফুটবল থেকে ৷ 1972 সালে মোহনবাগান যখন সুভাষকে ছেড়ে দিল তখন প্রদীপ দা আর ফুটবল সচিব মণি শ্রীমানি ওকে নেওয়ার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন ৷ আমি সম্মতি জানিয়েছিলাম ৷ ওর জন্য আমি রাইট আউট ছেড়ে লেফট আউটে সরে গিয়েছিলাম ৷”