ETV Bharat / sports

এশিয়াডে সোনা জিতেও মেলেনি "অর্জুন", হতাশ দুই বাঙালি তাসুড়ে

29 অগাস্ট ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 74 জন ক্রীড়াবিদকে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ তাঁদের মধ্যে 27 জন অ্যাথলিটকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ টিভির পর্দায় লাল ব্লেজ়ার পরিহিত ক্রীড়াবিদদের অর্জুন পুরস্কার নিতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ শিবনাথ দে সরকার, প্রণব বর্ধনের ৷

এশিয়াডে সোনা জিতেও "অর্জুন" হাতছাড়া, হতাশ দুই বাঙালি তাসুড়ে
এশিয়াডে সোনা জিতেও "অর্জুন" হাতছাড়া, হতাশ দুই বাঙালি তাসুড়ে
author img

By

Published : Aug 30, 2020, 2:18 PM IST

Updated : Aug 30, 2020, 10:08 PM IST

কলকাতা, 30 অগাস্ট: তাঁদের নিয়ে কোনও প্রত্যাশাই ছিল না ৷ কিন্তু, বছর দুয়েক আগে তাঁরাই জাকার্তা এশিয়ান গেমস থেকে সোনা এনে দিয়েছিলেন । বাংলার দুই তাসুড়ে শিবনাথ দে সরকার ও প্রণব বর্ধন ৷ তাঁদের এই সাফল্য তাস সম্পর্কে সাধারণের নাক সিঁটকানো মনোভাবকে অনেকটাই বদলাতে পেরেছিল ৷ তাই চলতি বছরে অর্জুন পুরস্কার জয়ের অন্যতম দাবিদার ছিলেন বাংলার এই দুই তাসুড়ে ৷ কিন্তু শিবনাথ-প্রণবের সাফল্য পেল না সরকারি স্বীকৃতি ৷ অর্জুন পুরস্কারের জন্য ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে দুজনের নাম পাঠিয়েছিল ব্রিজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ৷ কিন্তু অর্জুন পুরস্কার পাননি তাঁরা ৷

29 অগাস্ট ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 74 জন ক্রীড়াবিদকে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ তার মধ্যে 27 জন অ্যাথলিটকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ টিভির পর্দায় লাল ব্লেজার পরিহিত ক্রীড়াবিদদের অর্জুন পুরস্কার নিতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ শিবনাথ দে সরকার, প্রণব বর্ধনের ৷ হতাশা ঝরে পড়ছে সালকিয়ার বাসিন্দা শিবনাথ দে সরকার ওরফে কাচ্চুদার গলায় ৷ রবিবার সকালে সালকিয়ার নিজের বাড়ি থেকে তিনি বলেন, "পুরো বিষয়টি হতাশার । অ্যাসোসিয়েশন থেকে দু'জনের নাম পাঠানো হয়েছিল । তা সত্ত্বেও আমাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকল না । পুরোটাই হতাশার ।"

ক্ষোভ মিশ্রিত গলায় তিনি বলেন, "ব্রোঞ্জ জিতেও অর্জুন পুরস্কার পাচ্ছে । অথচ আমাদের দেওয়া হল না । কেন ? কী কারণে এই বঞ্চনা বুঝতে পারছি না ৷" একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, "এই সোনা জয়ের ফলে আমাদের দেশ বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে 12 থেকে 8 নম্বরে উঠে এসেছে । মানুষ তাস খেলা সম্পর্কে আগ্রহী হয়েছে । প্রণবদা (প্রণব বর্ধন) সবচেয়ে বেশি বয়সে এশিয়াডে সোনা জিতে নজির গড়েছেন । তাস খেলায় একটা আন্দোলন, নিঃশব্দ বিপ্লব হচ্ছিল সেটা ধাক্কা খেল ।"

মজার বিষয় হল, 29 অগাস্ট যেসব ক্রীড়াবিদ অর্জুন সম্মানে সম্মানিত হলেন তাদের কারও এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ের নজির নেই । আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তাদের সাফল্য নিয়েও সন্দেহ রয়েছে । বাস্কেটবল প্লেয়ার ভৃগুবংশী, ইকুয়েস্ট্রিয়ানে অজয় সাওনের সাফল্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় । খো খো খেলাটি এশিয়ান গেমসে অর্ন্তভুক্ত নয় । তবুও সারিকা কালে অর্জুন সম্মানে সম্মানিত । 2013 সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয়ী বাংলার তীরন্দাজ অতনু দাসও এবছরের অর্জুন । অথচ অর্জুন সম্মানের জন্য যে মাপকাঠি রয়েছে তার থেকে একটু বেশিই সাফল্য রয়েছে এই দুই বাঙালি তাসুড়ের । 2018 সালের এশিয়ান গেমসে সোনা ছাড়াও 2016 সালের সিওলে এশিয়া স্পেসিফিক ব্রিজ প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছিলেন এই দুই বাঙালি । 2017 সালে এশিয়া কাপে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন ।

হতাশ শিবনাথ দে সরকার
হতাশ শিবনাথ দে সরকার

শান্তশিষ্ট প্রণব বর্ধনের গলা যেন আরও শান্ত ৷ তিনি বললেন, "এটা নিয়ে আর কী বলব । কী আর বলার আছে বলুন তো । খেলোয়াড়দের ধর্ম খেলা । আমরা সেটা পালন করেছি । দেশের হয়ে এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছি । পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে গলা মিলিয়েছি । এটুকু পেয়ে আমি গর্বিত । এবার বিচারকদের বিচারের মাপকাঠি কীভাবে হয়েছে তা কী করে বলব ৷" তিনি আরও বলেন, "আমাদের রেজ়াল্ট জানতে চেয়েছিল ৷ পাঠিয়ে দিয়েছি । বিচারকরা অভিজ্ঞ । অর্জুন প্রতি বছরই দেওয়া হয় । তাই কারা যোগ্য, মাপকাঠি কী সবই ওদের জানা ।"

দিনের শেষে অর্জুন না পাওয়ার হতাশা দু'জনকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিলেও তাস খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ থামাবেন না কেউই । শিবনাথ দে সরকারের কথায়, "স্কুল-কলেজে তাস খেলা শেখানোর কাজ আমরা করে যাব । তবে সম্মানিত হলে সেই কাজে গতি আসত । অবশ্য পিছিয়ে যাচ্ছি না । বরং নিজের কাজ করার জন্য তৈরি হচ্ছি । দুঃখ নিয়েও তৈরি হচ্ছি ৷" নরেন্দর সিং ভুয়ো সার্টিফিকেট দেখিয়ে পর্বতারোহণে তেনজিং নোরগে সম্মান প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন । প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়েছে ৷ এই ঘটনা অর্জুন সম্মানের তালিকা তৈরির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে । যা নিয়ে প্রতিবাদও হচ্ছে ।

তাসের পাশা সর্বনাশা নয় ৷ বরং তাসের হাত ধরে আসতে পারে সোনা জয়ের গৌরব । মিলতে পারে চাকরিও ৷ তাসের জগতে নিঃশব্দ বিপ্লব যাঁদের হাত ধরে তাঁরা আজ নিজেদের চূড়ান্ত বঞ্চিত মনে করছেন ৷ তাহলে কি এশিয়ান গেমসের মঞ্চে সোনা জয়ও অর্জুন পুরস্কারের জন্য যথেষ্ট নয় ? প্রশ্ন দুই তাসুড়ের মনে ৷

কলকাতা, 30 অগাস্ট: তাঁদের নিয়ে কোনও প্রত্যাশাই ছিল না ৷ কিন্তু, বছর দুয়েক আগে তাঁরাই জাকার্তা এশিয়ান গেমস থেকে সোনা এনে দিয়েছিলেন । বাংলার দুই তাসুড়ে শিবনাথ দে সরকার ও প্রণব বর্ধন ৷ তাঁদের এই সাফল্য তাস সম্পর্কে সাধারণের নাক সিঁটকানো মনোভাবকে অনেকটাই বদলাতে পেরেছিল ৷ তাই চলতি বছরে অর্জুন পুরস্কার জয়ের অন্যতম দাবিদার ছিলেন বাংলার এই দুই তাসুড়ে ৷ কিন্তু শিবনাথ-প্রণবের সাফল্য পেল না সরকারি স্বীকৃতি ৷ অর্জুন পুরস্কারের জন্য ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে দুজনের নাম পাঠিয়েছিল ব্রিজ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ৷ কিন্তু অর্জুন পুরস্কার পাননি তাঁরা ৷

29 অগাস্ট ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 74 জন ক্রীড়াবিদকে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৷ তার মধ্যে 27 জন অ্যাথলিটকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ টিভির পর্দায় লাল ব্লেজার পরিহিত ক্রীড়াবিদদের অর্জুন পুরস্কার নিতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ শিবনাথ দে সরকার, প্রণব বর্ধনের ৷ হতাশা ঝরে পড়ছে সালকিয়ার বাসিন্দা শিবনাথ দে সরকার ওরফে কাচ্চুদার গলায় ৷ রবিবার সকালে সালকিয়ার নিজের বাড়ি থেকে তিনি বলেন, "পুরো বিষয়টি হতাশার । অ্যাসোসিয়েশন থেকে দু'জনের নাম পাঠানো হয়েছিল । তা সত্ত্বেও আমাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকল না । পুরোটাই হতাশার ।"

ক্ষোভ মিশ্রিত গলায় তিনি বলেন, "ব্রোঞ্জ জিতেও অর্জুন পুরস্কার পাচ্ছে । অথচ আমাদের দেওয়া হল না । কেন ? কী কারণে এই বঞ্চনা বুঝতে পারছি না ৷" একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, "এই সোনা জয়ের ফলে আমাদের দেশ বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে 12 থেকে 8 নম্বরে উঠে এসেছে । মানুষ তাস খেলা সম্পর্কে আগ্রহী হয়েছে । প্রণবদা (প্রণব বর্ধন) সবচেয়ে বেশি বয়সে এশিয়াডে সোনা জিতে নজির গড়েছেন । তাস খেলায় একটা আন্দোলন, নিঃশব্দ বিপ্লব হচ্ছিল সেটা ধাক্কা খেল ।"

মজার বিষয় হল, 29 অগাস্ট যেসব ক্রীড়াবিদ অর্জুন সম্মানে সম্মানিত হলেন তাদের কারও এশিয়ান গেমসে সোনা জয়ের নজির নেই । আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তাদের সাফল্য নিয়েও সন্দেহ রয়েছে । বাস্কেটবল প্লেয়ার ভৃগুবংশী, ইকুয়েস্ট্রিয়ানে অজয় সাওনের সাফল্য সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় । খো খো খেলাটি এশিয়ান গেমসে অর্ন্তভুক্ত নয় । তবুও সারিকা কালে অর্জুন সম্মানে সম্মানিত । 2013 সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয়ী বাংলার তীরন্দাজ অতনু দাসও এবছরের অর্জুন । অথচ অর্জুন সম্মানের জন্য যে মাপকাঠি রয়েছে তার থেকে একটু বেশিই সাফল্য রয়েছে এই দুই বাঙালি তাসুড়ের । 2018 সালের এশিয়ান গেমসে সোনা ছাড়াও 2016 সালের সিওলে এশিয়া স্পেসিফিক ব্রিজ প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছিলেন এই দুই বাঙালি । 2017 সালে এশিয়া কাপে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন ।

হতাশ শিবনাথ দে সরকার
হতাশ শিবনাথ দে সরকার

শান্তশিষ্ট প্রণব বর্ধনের গলা যেন আরও শান্ত ৷ তিনি বললেন, "এটা নিয়ে আর কী বলব । কী আর বলার আছে বলুন তো । খেলোয়াড়দের ধর্ম খেলা । আমরা সেটা পালন করেছি । দেশের হয়ে এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছি । পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতে গলা মিলিয়েছি । এটুকু পেয়ে আমি গর্বিত । এবার বিচারকদের বিচারের মাপকাঠি কীভাবে হয়েছে তা কী করে বলব ৷" তিনি আরও বলেন, "আমাদের রেজ়াল্ট জানতে চেয়েছিল ৷ পাঠিয়ে দিয়েছি । বিচারকরা অভিজ্ঞ । অর্জুন প্রতি বছরই দেওয়া হয় । তাই কারা যোগ্য, মাপকাঠি কী সবই ওদের জানা ।"

দিনের শেষে অর্জুন না পাওয়ার হতাশা দু'জনকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিলেও তাস খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ থামাবেন না কেউই । শিবনাথ দে সরকারের কথায়, "স্কুল-কলেজে তাস খেলা শেখানোর কাজ আমরা করে যাব । তবে সম্মানিত হলে সেই কাজে গতি আসত । অবশ্য পিছিয়ে যাচ্ছি না । বরং নিজের কাজ করার জন্য তৈরি হচ্ছি । দুঃখ নিয়েও তৈরি হচ্ছি ৷" নরেন্দর সিং ভুয়ো সার্টিফিকেট দেখিয়ে পর্বতারোহণে তেনজিং নোরগে সম্মান প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন । প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়েছে ৷ এই ঘটনা অর্জুন সম্মানের তালিকা তৈরির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে । যা নিয়ে প্রতিবাদও হচ্ছে ।

তাসের পাশা সর্বনাশা নয় ৷ বরং তাসের হাত ধরে আসতে পারে সোনা জয়ের গৌরব । মিলতে পারে চাকরিও ৷ তাসের জগতে নিঃশব্দ বিপ্লব যাঁদের হাত ধরে তাঁরা আজ নিজেদের চূড়ান্ত বঞ্চিত মনে করছেন ৷ তাহলে কি এশিয়ান গেমসের মঞ্চে সোনা জয়ও অর্জুন পুরস্কারের জন্য যথেষ্ট নয় ? প্রশ্ন দুই তাসুড়ের মনে ৷

Last Updated : Aug 30, 2020, 10:08 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.