কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি : চলে গেলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত । 6 ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়তি যে মরণপক্ষ শুরু করেছে তাতে নবতম সংযোজন বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের এই দিকপাল মানুষটি ৷ লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি । আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে চলে গেলেন সঙ্গীত এবং শিল্প অনুরাগী, প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Surajit Sengupta dies)। খেলার বাইরে সঙ্গীত জগতেও যাঁর ছিল অবাধ বিচরণ ।
1951 সালের 30 অগস্ট জন্ম সুরজিৎ সেনগুপ্তের ৷ আদতে হুগলি জেলার বাসিন্দা ৷ ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন । ছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক । একবার তবলা বাজিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্রর সঙ্গেও । বুদ্ধিদীপ্ত এই মানুষটির মধ্যে শিক্ষার ছাপ ছিল কথাবার্তায়, চলনে, বলনে । অশ্বিনী বরাটের হাত ধরে হুগলিতে ফুটবল জীবন শুরু সুরজিতের । খেলার টানে এরপর জেলা থেকে চলে আসেন কলকাতায় । যোগ দেন রবার্ট হার্ডসন ক্লাবে । এরপর 1970 সালে চলে আসেন খিদিরপুর ক্লাবে । তখন খিদিরপুর ক্লাবে কোচ ছিলেন অচ্যুত বন্দ্যেপাধ্যায় ৷ তাঁর প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন সুরজিৎ ।
জহুরি জহর চেনে ৷ সুরজিত সেনগুপ্তের মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন অচ্যুত বন্দ্যেপাধ্যায় ৷ বল-কে 'কথা' বলাতে পারতেন তিনি । উইঙ্গারদের বৈশিষ্ট্য হল উইং বরাবর দৌড়োয় তাঁরা । অর্থাৎ সাইড লাইন বরাবর । ড্রিবলিং করতে করতে দৌড়োতেন । পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে 'ফিনিক্স পাখি' বলে ডাকতেন ।
আরও পড়ুন : Surajit Sengupta Demise : ভারতীয় ফুটবলে ফের নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত
খিদিরপুরে দু'বছর খেলার পর কলকাতার তিন প্রধানের অন্যতম মোহনবাগানে প্রবেশ সুরজিতের ৷ 1972-73 মরসুমে সবুজ মেরুনের হয়ে খেলেন । বলাবাহুল্য, সেই থেকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে । এরপর 1974-79 সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছিলেন ৷ 1978 সালে লাল-হলুদের অধিনায়ক হন । তাঁর নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল সেবার যুগ্মভাবে ফেডারেশন কাপে মোহনবাগানের সঙ্গে জয়েন্ট উইনার্স হয় ।
সেবার ডুরান্ড কাপ ফাইনালে 3-0 গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টবেঙ্গল । প্রথম গোলটি করেন সুরজিৎ । 1976 সালে পাটনায় সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁরই নেতৃত্বে । 1977-78 সালে সন্তোষ ট্রফির রিপ্লে ফাইনালে তাঁর কাছে ধরাশায়ী হয় পঞ্জাব । পিকে তাঁকে বলেছিলেন, "তুমি দৌড়োও সুরো । তোমার দৌড়কে পঞ্জাবিরা ভয় পায়...।" 1979 সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে ছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত । এর পরের বছরই চলে যান মহামেডানে । বাংলার হয়ে 1972-79 সাল পর্যন্ত খেলেন । 1977 সালে কলকাতা ভেটারেন্স ক্লাবের নির্বাচনে 'বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন ।
যেদিন ভাল খেলতেন সেদিন আর গোটা দলের কাউকে দাঁড়াতে হত না ৷ বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে সুরজিৎ সেনগুপ্তের নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে । আজকাল পত্রিকায় 2003 সালে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি ৷ কলম ছিল তীক্ষ্ণ । ছাপা, এডিটোরিয়াল ডিপার্টমেন্ট সবদিকে থাকত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি । এভাবেই ফুটবল ও তাঁর বাইরেও নিজের ছাপ রেখে গেলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত ৷
আরও পড়ুন : Surajit Sengupta Demise : সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রয়াণে শোক প্রকাশ মমতার