রিও ডি জেনেইরো, 5 মার্চ : ফুটবল বিশ্বে একসময় প্লে বয় ইমেজের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ৷ ব্রাজিলের ফুটবল জিনিয়াস রোনাল্ডিনহো নিজের কেরিয়ারে বিতর্ক থেকে দূরে ছিলেন না কোনওদিনই ৷ ভুয়ো পাসপোর্ট ব্যবহার করে গ্রেপ্তার হওয়া এই প্রাক্তন ব্যালন ডি'অর জয়ী ভুলভাল কারণের জন্য বরাবরই শিরোনামে থেকেছেন ৷
বল পায়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্কিলফুল খেলোয়াড় ৷ 2001 সালে ইউরোপিয়ান ক্লাবে পা রাখেন রোনাল্ডিনহো ৷ ব্রাজিলের গ্রেমিও থেকে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যোগ দেন তরুণ এবং ঈশ্বরপ্রদত্ত ফুটবল প্রতিভার অধিকারী এই ফুটবলার ৷ ধীরে ধীরে প্যারিসের বেপরোয়া জীবন যাপনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন ৷ বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে প্রতি রাতেই চলত পার্টি, মদ্যপান ৷ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের প্রাক্তন সতীর্থ একবার বলেছিলেন, গোটা সপ্তাহের অনুশীলনে রোনাল্ডিনহোকে দেখা যেত না ৷ ম্যাচের আগের দিন ছাড়া প্র্যাকটিসে ওঁকে দেখা যেত না ৷ শনিবার ম্যাচ থাকলে হঠাৎ করে শুক্রবার হাজির হত ৷ প্যারিসে থাকাকালীনই পার্টি বয় তকমা পেয়েছিলেন রোনাল্ডিনহো ৷
2002 বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই অসাধারণ গোল ৷ এরপর দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ৷ 2002 সালের সাফল্য রোনাল্ডিনহোর জন্য লা লিগার ক্লাব বার্সেলোনার দরজা খুলে দিয়েছিল ৷ 2003 সালে ফ্রান্স ছেড়ে স্পেনে পাড়ি দেন ৷ বিশ্বের সেরা ফুটবলার হিসেবে যে সুনাম অর্জন করেছিলেন তার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছিল বার্সায় আসার পরই ৷ 2004 এবং 2005 সালে পরপর দুবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ছিনিয়ে নেন ৷ পাশাপাশি 2005 সালে তাঁর ঝুলিতে আসে ব্যালন ডি'অর পুরস্কার ৷ পরের বছর বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোয় তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট ৷
সবই চলছিল ঠিকঠাক ৷ যতদিন না বার্সায় মেসির প্রবেশ ঘটেছিল ৷ এমনিতে লিও-র সঙ্গে রোনাল্ডিনহোর সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল ৷ কিন্তু শোনা যায় এই প্রতিভাবান আর্জেন্টাইন তরুণ যাতে রোনাল্ডিনহোর খপ্পরে পড়ে বিগড়ে না যায় সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তৎকালীন বার্সা কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা ৷ 2008 সালে মেসির বার্সায় প্রবেশের পরপরই ব্রাজিলিয়ান তারকাকে ন্যু ক্যাম্প থেকে বিদায় নিতে হয় ৷ বার্সেলোনার প্রাক্তন সতীর্থ আলেকজান্ডার হেলব পরে জানান, রোনাল্ডিনহো এবং ডেকো মাতাল হয়ে ট্রেনিংয়ে আসতে ৷ এসব দেখেশুনে মেসিও বিগড়ে যেতে পারেন বলে ভয় পেয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি ৷ তাই রোনাল্ডিনহোকে AC মিলান এবং ডেকোকে চেলসিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় ৷
মিলানে গিয়েও স্বভাবে পরিবর্তন ঘটেনি বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের ৷ 2010 সালে মিলান ডার্বির দিন রাত দুটোর সময় একটি বার থেকে বেরোতে দেখা যায় তাঁকে ৷ সেই ম্যাচে দলের তারকা খেলোয়াড়কে বসিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি ৷ তিনি বলেছিলেন, একজন অ্যাথলিটের ঘুম ভাঙার সময় নয় এটা ৷
2018 সালে বুটজোড়া তুলে রাখার পর এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার বারবার ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামে উঠে এসেছেন ৷ শোনা যায় সেই বছরের শেষদিকে একসঙ্গে দুটি মহিলাকে বিয়ে করার তোড়জোড় করছিলেন তিনি ৷ রিওতে তাঁর বিলাসবহুল প্রাসাদে এসে থাকারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই দুই মহিলাকে ৷ পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় প্রিসিলা কোলহো এবং বিয়াত্রিজ সৌজা নামক দুই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় তাঁর ৷ পরে আর বিয়ে করেননি তিনি ৷
একসময় যাঁকে দলে নেওয়ার জন্য বিশ্বের বড় বড় ক্লাব মুখিয়ে থাকতে সেই রোনাল্ডিনহো পরে দেউলিয়া হয়ে যান ৷ ধারদেনায় জর্জরিত ব্রাজিল তারকার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে নেয় ব্রাজিলের আদালত ৷ ব্যবসায় নেমে ধার করা টাকা শোধ করতে না পারায় এই পরিস্থিতি গিয়ে দাঁড়ায় ৷ গতবছরের সেপ্টেম্বরে 1.5 মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেওয়ার পরই পাসপোর্ট ফিরে পান তিনি ৷ নতুন বছরের তিনটে মাস গড়াতে না গড়াতেই ফের বিতর্কে ফুটবল জগতের মেগাস্টার ৷
ফুটবল বিশ্বের এই অন্যতম বর্ণময় চরিত্রের ঘটনাবহুল জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে কী রয়েছে তা জানার অপেক্ষা ফুটবলপ্রেমীরা ৷