কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর : শিক্ষক দিবসের দিনে হাইকোর্ট প্রান্তের গ্যালারিতে আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেস গার্সিয়াকে নিয়ে বিরাট টিফো লাল-হলুদ সমর্থকদের । ম্যাচ শেষেও লাল-হলুদ হেডস্যারকে ঘিরে উন্মাদনা । স্প্যানিশ কোচ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ভালোবাসার কেন্দ্রে । দলকে ধীরে ধীরে একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি । চলতি মরশুমে ইস্টবেঙ্গল এখনও পর্যন্ত ডুরান্ড ও কলকাতা লিগ মিলিয়ে নয়টি ম্যাচ খেলেছে । অবাক করা তথ্য হল, এই নয় ম্যাচে দলের সব ফুটবলারকে আলেয়ান্দ্রো সুযোগ দিয়েছেন । যা ভারতীয় কোনও কোচের কোচিংয়ে চিন্তা করা যেত না । দল গড়ে তোলার এই ছক ভাঙা চেষ্টার সাম্মানিক গ্যালারির টিফোতে ।
স্কোর বোর্ড বলছে ইস্টবেঙ্গল 2 সার্দান সমিতি 1। জয়ী দলের পক্ষে গোল বিদ্যাসাগর সিং ও কোলাডোর । সার্দানের হয়ে ব্যবধান কমান অর্জুন টুডু । ম্যাচের সেরা সার্দানের মহম্মদ আল আমনা ।
লক্ষ্মীবারের ময়দানে ইস্টবেঙ্গল বনাম সার্দান সমিতির ম্যাচটি আদতে দ্রোণাচার্য বনাম একলব্যের অদৃশ্য যুদ্ধ । চোটের কারণে আলেয়ান্দ্রোর গত মরশুমের আই লিগের দল থেকে ছিটকে গেছিলেন আমনা । তার আগে সিরিয়ান মিডফিল্ডারের স্টাইল অফ ফুটবলে খুশি ছিলেন না লাল-হলুদ কোচ । তাই চোট এবং ছিটকে যাওয়া দুই ব্যক্তিত্বের ঠান্ডা লড়াইয়ে ইতি টেনেছিল । বৃহস্পতিবার দল হারলেও লাল-হলুদ কোচের সামনে নিজেকে নিংড়ে দিলেন সার্দানের নম্বর ছয় । "বড় দল অনেক সময় ভালো না খেলেও জিতে যায়," কটাক্ষে আলেয়ান্দ্রোকে বার্তা আমনার ।
নাম নয় পরিস্থিতি অনুযায়ী যে যোগ্য তাঁকেই খেলাব । ইস্টবেঙ্গল কোচের অঘোষিত বার্তা দলের প্রতিটি ফুটবলারের কাছে "মেরা নাম্বার আয়েগার" ইঙ্গিত দেয় । শেষ বর্ষার বৃষ্টিতে ময়দান হঠাৎ থই থই । ফলে তিরিশ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ম্যাচ । যেকোনও কোচ এই পরিস্থিতিতে চেনা অস্ত্রে আস্থা রাখবেন । কিন্তু আলেয়ান্দ্রো সেই বান্দা নন । জল কাদার মাঠে রক্ষণে বোরহার সঙ্গে আসির আখতারকে জুড়ে দিলেন । আক্রমণে বিদ্যাসাগর সিং, হাওকিপ, পিন্টু মাহাতা, কোলাডোর মত আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের ওপর ভরসা রাখলেন । 35 মিনিটে লালরিনডিকার কর্নার ব্যাক হেডে অরক্ষিত বিদ্যাসাগরের জন্য বাড়িয়ে দিলে তিনি জালে পাঠান । তার আগে বোরহার হেড বারে লেগে প্রতিহত হয় । পিন্টু মাহাতা, হাওকিপরা এসময় বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও তা থেকে গোল হয়নি ।
মেহতাব হোসেনের প্রশিক্ষণাধীন সার্দান সমিতির খেলায় ঝাঁঝ থাকলেও ভেদশক্তির অভাব । আলেয়ান্দ্রোর দলের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন আমনা । কিন্তু তাঁকে সঙ্গত করার মতো ফুটবলার ছিল না । ফয়জল আলি নজর কাড়লেও তা লাল-হলুদ রক্ষণ ভাঙার পক্ষে যথেষ্ট নয় ।
চলতি মরশুমে দ্বিতীয় ম্যাচ খেললেন বোরহা গোমেজ় । কলকাতা লিগে প্রথমবার । কাদা মাঠে তাঁর কড়া ট্যাকেল ও নিখুঁত কভারিংয়ে বারবার আটকে গেছে সার্দানের যাবতীয় আক্রমণ । বোরহার পাশে আসির আখতার যেন আটের দশকের যুবক তরুণ দে । এদিনের লাল-হলুদ রক্ষণের সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিলেন মনোজ মহম্মদ ।
64 মিনিটে লালরিনডিকার কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় গোল কোলাডোর । জল কাদার মাঠে প্রতিটি ম্যাচে নজর কাড়ছেন স্প্যানিশ অ্যাটাকিং উইঙ্গার । এই ম্যাচে তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি ।
জুয়ান মেরে গঞ্জালেসকে নিয়ে আগ্রহ কম ছিল না । স্প্যানিশ লেফট উইঙ্গার মিনিট কুড়ির জন্যে নেমেছিলেন । কম সময়ে বুঝিয়েছেন তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতে পারে । 5ম্যাচে দশ পয়েন্ট । একনম্বরে থাকা ভবানীপুর ক্লাবের সঙ্গে এক বিন্দুতে ইস্টবেঙ্গল । কোচ বলেছেন, তাঁর চিন্তায় শুধু সামনের পিয়ারলেস ম্যাচ । ধাপে ধাপে স্বপ্নের জন্ম দিচ্ছেন আলেয়ান্দ্রো ।