ETV Bharat / sports

Football Lovers' Day : স্মৃতি আজ সুখের নয়, বেদনার - 16 অগস্ট ফুটবলপ্রেমী দিবস

ফুটবলের বলি 16 জনকে ভুলতে চাইলেও সুযোগ নেই । গত চল্লিশ বছর ধরে ওরা ফিরে আসে‌ন । রক্তদানের মধ্যে দিয়ে স্মৃতি তর্পণ আদতে বাঙালির সব খেলার সেরা ফুটবলে ফেয়ার প্লে-র আবাহন । তবে এখনও দগদগে সেই স্মৃতি ।

football premi dibas
football prfootball premi dibasemi dibas
author img

By

Published : Aug 16, 2021, 11:25 AM IST

Updated : Aug 16, 2021, 1:05 PM IST

কলকাতা, 16 অগস্ট : বাড়ির ফুটবল-অন্তপ্রাণ ছেলেটির উদ্দেশে উৎকণ্ঠা নিয়ে মা জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আবার যাচ্ছিস মাঠে ! দাদা ফেরেনি । সাবধানে ফিরিস বাবা । ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িস না । ঝামেলা দেখলেই সরে যাস । চলে আসিস । দুগ্গা দুগ্গা ।"

"আসি মা," বলে বেরিয়ে গিয়েছিল ছেলে ।

আর ফেরেননি ৷ ওরা কেউই ফেরেননি ৷ ইডেনের দেওয়ালে ওঁদের নাম আজও রয়েছে । মানে, 16জন সমর্থকের । কার্তিক মাইতি, উত্তম চাউলে, সমীর দাস, অলোক দাস, সনৎ বসু, নবীন নস্কর, কল্যাণ সামন্ত, অসীম চট্টোপাধ্যায়, রবীন আদক, কার্তিক মাঝি, ধনঞ্জয় দাস, শ্যামল বিশ্বাস, মদনমোহন বাগলি, প্রশান্ত দত্ত, হিমাংশু শেখর দাস, বিশ্বজিৎ কর ৷

সালটা 1980 । বড় ম্যাচ তখনও 'ডার্বি' হয়নি । বিদেশি ফুটবলের উন্মাদনা তখনও ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করেনি । গঙ্গার জোয়ার ভাটার মতোই ফুটবল প্রেমীদের ফুটবল প্রেম, উত্তেজনা আন্দোলিত হত ময়দানের দুই প্রধানকে ঘিরে । তাই শহরে বা শহরের বাইরে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান মানেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকা । কার্যত অঘোষিত বঙ্গভঙ্গ । যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন তখন পরিকল্পনার নীল নকশায় । ইডেন গার্ডেন্সই ছিল ফুটবল, ক্রিকেটের রণাঙ্গন । যেকোনও 'বড় ম্যাচ' মানেই শহরের সব রাস্তার অভিমুখ ইডেনমুখী ।

সেবার ফেডারেশন কাপে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান । কলকাতায় সেই ম্যাচের ফাইনাল ড্র হওয়ায় যুগ্মবিজয়ী ঘোষণা করা হয় । কিন্তু ম্যাচ জুড়ে ছিল উত্তেজনা । রেফারির মাথা ফেটেছিল দর্শকদের ছোড়া ইঁটে । সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং ফলাফলে রোপিত হয়েছিল উত্তেজনার বীজ । এরপর কলকাতা লিগে দুই প্রধানকে নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছিল শহর ৷ চায়ের দোকান থেকে পাড়ার রক, অফিসে অলিন্দে ম্যাচ ঘিরে তুমুল আলোচনা । অবশেষে আসে সেই দিন ৷ 16 অগস্ট । মাঠমুখো যাঁরা হতে পারেননি ইথার তরঙ্গে এবং টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন ।

আরও পড়ুন : Chinmay Chatterjee : প্রয়াত ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়

সেদিন কানায় কানায় ভর্তি ছিল ইডেনের গ্যালারি । সেই উত্তেজনা কিছুক্ষণ পর কান্নায় পর্যবসিত হবে, কে জানত ৷ ম্যাচ চালকালীন মোহনবাগানের বিদেশ বসুকে কড়া ট্যাকেল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দিলীপ পালিত । বিদেশ বসুও দিলীপ পালিতকে তার কড়া জবাব দিয়েছিলেন ৷ সেইসময় রেফারি সুদিন চট্টোপাধ্যায় দুজনকেই লাল কার্ড দেখান ৷ এরপরই গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান 16 জন দর্শক ৷ ওই ঘটনার পরে লিগ বাতিল হয়ে গিয়েছিল । তারপর থেকে প্রতি বছরই এই দিনটি 'ফুটবল প্রেমী দিবস' হিসেবে পালন করা হয় ৷ মৃত সমর্থকদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে প্রতি বছর আইএফএ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে ৷

ফুটবলের বলি 16 জনকে ভুলতে চাইলেও সুযোগ নেই । গত চল্লিশ বছর ধরে ওরা ফিরে আসে‌ন । রক্তদানের মধ্যে দিয়ে স্মৃতি তর্পণ আদতে বাঙালির সব খেলার সেরা ফুটবলে ফেয়ার প্লে-র আবাহন । তবে এখনও দগদগে সেই স্মৃতি । রক্ত দানের পট্টিতে তা ঢাকার সুযোগ নেই । সুযোগ নেই নাম বদলে আনন্দোৎসবের রঙিন চশমা পরার চেষ্টায়। খেলা হোক বা হবে, ষোলটি প্রাণ ফুটবলের সঙ্গেই বেঁচে থাকবে আজীবন । তাই স্মৃতি আজ সুখের নয়, বেদনার ।

আরও পড়ুন : Khela Hobe Dibas : আজ বাংলা, ত্রিপুরা সহ 15টি রাজ্যে 'খেলা হবে'

কলকাতা, 16 অগস্ট : বাড়ির ফুটবল-অন্তপ্রাণ ছেলেটির উদ্দেশে উৎকণ্ঠা নিয়ে মা জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আবার যাচ্ছিস মাঠে ! দাদা ফেরেনি । সাবধানে ফিরিস বাবা । ঝামেলায় জড়িয়ে পড়িস না । ঝামেলা দেখলেই সরে যাস । চলে আসিস । দুগ্গা দুগ্গা ।"

"আসি মা," বলে বেরিয়ে গিয়েছিল ছেলে ।

আর ফেরেননি ৷ ওরা কেউই ফেরেননি ৷ ইডেনের দেওয়ালে ওঁদের নাম আজও রয়েছে । মানে, 16জন সমর্থকের । কার্তিক মাইতি, উত্তম চাউলে, সমীর দাস, অলোক দাস, সনৎ বসু, নবীন নস্কর, কল্যাণ সামন্ত, অসীম চট্টোপাধ্যায়, রবীন আদক, কার্তিক মাঝি, ধনঞ্জয় দাস, শ্যামল বিশ্বাস, মদনমোহন বাগলি, প্রশান্ত দত্ত, হিমাংশু শেখর দাস, বিশ্বজিৎ কর ৷

সালটা 1980 । বড় ম্যাচ তখনও 'ডার্বি' হয়নি । বিদেশি ফুটবলের উন্মাদনা তখনও ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করেনি । গঙ্গার জোয়ার ভাটার মতোই ফুটবল প্রেমীদের ফুটবল প্রেম, উত্তেজনা আন্দোলিত হত ময়দানের দুই প্রধানকে ঘিরে । তাই শহরে বা শহরের বাইরে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান মানেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকা । কার্যত অঘোষিত বঙ্গভঙ্গ । যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন তখন পরিকল্পনার নীল নকশায় । ইডেন গার্ডেন্সই ছিল ফুটবল, ক্রিকেটের রণাঙ্গন । যেকোনও 'বড় ম্যাচ' মানেই শহরের সব রাস্তার অভিমুখ ইডেনমুখী ।

সেবার ফেডারেশন কাপে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান । কলকাতায় সেই ম্যাচের ফাইনাল ড্র হওয়ায় যুগ্মবিজয়ী ঘোষণা করা হয় । কিন্তু ম্যাচ জুড়ে ছিল উত্তেজনা । রেফারির মাথা ফেটেছিল দর্শকদের ছোড়া ইঁটে । সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং ফলাফলে রোপিত হয়েছিল উত্তেজনার বীজ । এরপর কলকাতা লিগে দুই প্রধানকে নিয়ে উত্তেজনায় ফুটছিল শহর ৷ চায়ের দোকান থেকে পাড়ার রক, অফিসে অলিন্দে ম্যাচ ঘিরে তুমুল আলোচনা । অবশেষে আসে সেই দিন ৷ 16 অগস্ট । মাঠমুখো যাঁরা হতে পারেননি ইথার তরঙ্গে এবং টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন ।

আরও পড়ুন : Chinmay Chatterjee : প্রয়াত ময়দানের প্রাক্তন ফুটবলার চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়

সেদিন কানায় কানায় ভর্তি ছিল ইডেনের গ্যালারি । সেই উত্তেজনা কিছুক্ষণ পর কান্নায় পর্যবসিত হবে, কে জানত ৷ ম্যাচ চালকালীন মোহনবাগানের বিদেশ বসুকে কড়া ট্যাকেল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দিলীপ পালিত । বিদেশ বসুও দিলীপ পালিতকে তার কড়া জবাব দিয়েছিলেন ৷ সেইসময় রেফারি সুদিন চট্টোপাধ্যায় দুজনকেই লাল কার্ড দেখান ৷ এরপরই গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । বিশৃঙ্খলার জেরে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান 16 জন দর্শক ৷ ওই ঘটনার পরে লিগ বাতিল হয়ে গিয়েছিল । তারপর থেকে প্রতি বছরই এই দিনটি 'ফুটবল প্রেমী দিবস' হিসেবে পালন করা হয় ৷ মৃত সমর্থকদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে প্রতি বছর আইএফএ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে ৷

ফুটবলের বলি 16 জনকে ভুলতে চাইলেও সুযোগ নেই । গত চল্লিশ বছর ধরে ওরা ফিরে আসে‌ন । রক্তদানের মধ্যে দিয়ে স্মৃতি তর্পণ আদতে বাঙালির সব খেলার সেরা ফুটবলে ফেয়ার প্লে-র আবাহন । তবে এখনও দগদগে সেই স্মৃতি । রক্ত দানের পট্টিতে তা ঢাকার সুযোগ নেই । সুযোগ নেই নাম বদলে আনন্দোৎসবের রঙিন চশমা পরার চেষ্টায়। খেলা হোক বা হবে, ষোলটি প্রাণ ফুটবলের সঙ্গেই বেঁচে থাকবে আজীবন । তাই স্মৃতি আজ সুখের নয়, বেদনার ।

আরও পড়ুন : Khela Hobe Dibas : আজ বাংলা, ত্রিপুরা সহ 15টি রাজ্যে 'খেলা হবে'

Last Updated : Aug 16, 2021, 1:05 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.