কলকাতা, 13 এপ্রিল: কলকাতার বাতাসে গরমে হলকা । রাস্তা যারা বের হচ্ছেন তাদের নিশ্চয়ই উপায় নেই । গণ পরিবহণগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা । ভেতরে হাতে গোনা কয়েকজন । যারা আছেন তাঁরাও ঝিমোচ্ছেন । এই আবহে আইপিএলের ম্যাচ ইডেনে । কলকাতার একমাত্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাতিস্তম্ভে আলো জ্বললেই রাস্তায় ভিড় জমে ।
শুক্রবার চলতি বছরে দ্বিতীয়বার ইডেনে খেলতে নামছে কলকাতা নাইট রাইডার্স । পরপর দুটো অবিশ্বাস্য জয়ের পর এই ম্যাচ ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে ওঠার কথা ছিল । কিন্তু আবহাওয়া এতটাই উত্তপ্ত যে ক্রিকেটপ্রেমী কলকাতা হয়তো মাঠে আসার চেয়ে টিভিতে চোখ রাখতেই বেশি পছন্দ করবে। ময়দানের বটতলায় যেখানে টিকিটের কালোবাজারের রঙ্গমঞ্চ সেখানে মাছি তাড়াবার লোক নেই । ক্রেতা বিক্রেতা দুজনেই কার্যত উধাও । কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ক্রিকেটারদের দেখে মনে হল কোনও রকমে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়ে ঢুকে পড়তে বাঁচেন ।
হায়দরাবাদ দলের চলতি আইপিএলের পারফরম্যান্স মোটেই আশাব্যঞ্জক নয় । একটি জয় এবং দুটো হারে তারা বেশ পিছিয়ে । দলে বর্তমান তারকাদের চেয়ে ডাগ-আউটে বসে থাকা প্রাক্তনদের ওজন বেশি । মুথাইয়া মুরলীধরন, ডেল স্টেইন, ব্রায়ান লারা হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্টে । তিন প্রাক্তন মহারথীই দলকে জয়ের রাস্তায় ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন । নাইটদের স্পিনের জাল ছিড়তে মুরলীধরন নিজেই রাহুল ত্রিপাঠি, হ্যারি ব্রুক, মায়াঙ্ক আগরওয়ালদের নেটে বল করলেন । ডেল স্টেইন কথা বলছেন উমরান মালিক, ভুবনেশ্বর কুমারদের সঙ্গে । ব্রায়ান লারাও হায়দরাবাদ ব্যাটারদের দেখিয়ে দিলেন । তিন কিংবদন্তির পরামর্শ কতটা কাজে এল তা জানতে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
আরও পড়ুন : ক্রিকেটকে বাহন করে গলি থেকে রাজপথে রিঙ্কু সিং
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ অধিনায়ক এডেন মার্কবাম বলেন, "দর্শক সমর্থন থাকবে না জানি । তবে রাহুল ত্রিপাঠির দলে থাকা আমাদের অ্যাডভান্টেজ । কলকাতার তিন স্পিনারকে থামানোর বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । ওদের পারফরম্যান্স সত্যিই অসাধারণ ।" হায়দরাবাদের পেস বোলিং বিভাগে উমরান মালিক ও ভুবনেশ্বর কুমারের উপস্থিতিকে নিষ্প্রভ করতে এবং নাইট স্পিনারত্রয়ী বরুণ চক্রবর্তী, সুয়াশ শর্মা ও সুনীল নারিনের সুবিধার জন্যই ইডেনের পিচ স্পিন সহায়ক করা হচ্ছে । রিঙ্কু সিং এবং শার্দূল ঠাকুর পরপর দুটো ম্যাচে দলের জয়ের মূল ভূমিকা গ্রহণ করেছেন । তাদের পারফরম্যান্স যে হায়দরাবাদ সাজঘরে প্রভাব ফেলেছে তা মার্করামের কথায় বোঝা গেল ।
তিনি বলছেন,"রিঙ্কু এবং শার্দূলের ইনিংস দুটো সত্যিই অসাধারণ । আমাদের তাই শান্ত থেকে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের শক্তির ওপর ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে । ব্যক্তি নয় দলগত প্রচেষ্টা আমাদের শক্তি ।"
দুটো জয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স বদলে গিয়েছে । আন্দ্রে রাসেল ছাড়া ওপরের সারির সব ব্যাটাররা রানের মধ্যে রয়েছেন বা ফিরেছেন । তার ওপর লিটন দাস এবং জেসন রয়ের যোগদান চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের হাতে বিকল্প বাড়িয়েছে । যদিও পণ্ডিত স্যার জয়ী একাদশে বদল ঘটাতে আগ্রহী নন । তবে জেসন রয় ও লিটন দাসদের নেটে বাড়তি সময় দিয়ে ব্যাট করানো হয়েছে । একইভাবে আন্দ্রে রাসেলকে নিয়েও পণ্ডিতের চিন্তা একটু হলেও বেড়েছে ।
আরও পড়ুন : জয়ের হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে জোরদার অনুশীলন রিঙ্কু-রানাদের
সাংবাদিক সম্মেলনে লকি ফার্গুসন যদিও ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের হয়ে মুখ খুলেছেন ৷ তিনি বলেন,"আন্দ্রে নিজের দিনে যে কোনও বোলিংকে ধ্বংস করতে পারে । ওর পারফরম্যান্স মোটেই খারাপ নয় । হয়তো কালকেই প্রত্যাশিত ফর্মে ওকে পাওয়া যাবে ।" ফের ঘরের মাঠে খেলবে নাইটরা । এই নিয়ে লকি ফার্গুসন বলছেন,"ঘরে ফেরা সত্যিই ভালো ব্যাপার । তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা খুশি । ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে একটা সময় মনে হচ্ছিল দর্শকরা আমাদের বিপক্ষে । পরে তাদের সমর্থন আমরা পেয়েছি ।" দুটো জয় নিশ্চিতভাবে সাজঘরে অনেকটা খোলা হাওয়া নিয়ে এসেছে । ক্রিকেটাররা সকলেই আত্মবিশ্বাসী । "দলের মেজাজ একই রকম রয়েছে । আমরা আগের মতোই যে কোনও চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি " ৷ বলছেন ফার্গুসন ।
ইডেনের বাইশ গজে তাঁর গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে হায়দরাবাদের উমরান মালিক রয়েছেন । কোনও তুলনা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে রাজি না হলেও সর্বোচ্চ গতিতে বল করতে ভালোবাসেন বলে জানালেন তিনি । একজন বোলার হিসেবে যশ ধুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন নাইট পেসার । আমেদাবাদের রিঙ্কু সিংয়ের সংহার মূর্তির সামনে বলি যশ । এই নিয়ে লকি ফার্গুসন বলেন, "যশ ধুল একজন অসাধারণ বোলার । আমি ওর সঙ্গে খেলেছি । সেদিনটা ওর খারাপ দিন ছিল ।" শুক্রবার জয়ের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন হলে চৈত্র অবসানে বাংলা বছরের শুরুটা নাইটদের সবদিক দিয়ে শুভ হবে ।
আরও পড়ুন : ওর সতীর্থ হিসেবে গর্ববোধ হয়, রিঙ্কুর নয়া ফ্যান লিটন