কলকাতা, 16 নভেম্বর: বিশ্বকাপে দলে নেই হার্দিক পান্ডিয়া ৷ কথাটা 5 অক্টোবরের আগে শুনলে হয়তো যে কোনও ক্রিকেট অনুরাগীরই বুক কাঁপতে শুরু করতো ৷ কিন্তু সেটাই বাস্তব হয়ে যায় চলতি ওডিআই বিশ্বকাপে ৷ পুনেতে 19 অক্টোবরের ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে যান হার্দিক ৷ মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বল করার সময় পায়ে চোট পান তিনি ৷ ফলত তাঁর বদলে দলে নেওয়া হয় প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাকে ৷ এই অলরাউন্ডারের ছিটকে যাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছিল আশঙ্কার মেঘ ৷ তবে এখন দেখে মনে হচ্ছে এর থেকে বড় 'শাপে বর' আর কিছুই হতে পারে না ৷
তাঁর ছিটকে যাওয়ার কারণেই দলে সুযোগ পান মহম্মদ শামি এবং সূর্যকুমার যাদব ৷ কারণ একাদশ থেকে বাদ পড়ে যান আরেক পেসস্টার শার্দুল ঠাকুরও ৷ আর দলে আসার পরেই শামি প্রমাণ করেছেন 'পাঠানি কামব্যাক' কাকে বলে ৷ শামি দলে আসার আগেও ভারত লিগের প্রতিটি ম্যাচেই জিতেছে ৷ কিন্তু একথা ঠিক 'সুইং কিং' দলে আসার পর মেন ইন ব্লু-কে যে আরও বেশি সংগঠিত মনে হয়েছে ৷
এক 'পাঠান' সমস্ত সমালোচকদের চুপ করিয়ে কামব্যাক করেছিলেন বছরের শুরুতে ৷ বক্স অফিসে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছিলেন শাহরুখ খান ৷ আর বাংলার স্পিডস্টার তাঁর সমস্ত ক্ষোভের আগুন উগড়ে দিলেন বাইশ গজে ৷ দল থেকে কার্যত ব্র্যাত্য হয়ে যাওয়া সেই ঘোড়া যাঁকে বুড়ো বলেই বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল সকলে তিনি জবাব দিলেন ৷ হ্যারি পটারের ম্য়াজিকের জন্য প্রয়োজন হত ম্যাজিক স্টিক আর শামির লাগে সাদা কোকাবুরা ৷
6 ম্যাচে তিনি শিকার করেছেন 23টি উইকেট ৷ এরই মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচে উইকেট পাননি শামি ৷ কিন্তু বাকি ম্যাচে তিনি দেখিয়েছেন 'ওয়ান ম্যান শো' ৷ তিনবার তুলে নিয়েছেন পাঁচ বা তার বেশি উইকেট ৷ চার উইকেট শিকার করেছেন একবার ৷ 'আউটস্ট্যান্ডিং' শব্দটাও ছোট মনে হয় তাঁর এই সমস্ত অপার্থিব স্পেলের সামনে ৷
শুধু তাই নয় বিরাট কোহলি যেমন ব্যাট হাতে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছেন তেমনই বল হাতে রেকর্ড বুক নতুন করে লিখছেন শামিও ৷ ইতিমধ্যেই ওডিআই বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুত 50 উইকেট শিকারিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছেন ৷ ভারতীয় হিসাবে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি উইকেট দখল করার কৃতিত্বও এখন বঙ্গ সম্রাটের নামে ৷ এর আগে 4 রান খরচ করে 6 উইকেট তুলে নিয়ে এই স্থান দখল করেছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি ৷ সেই রেকর্ড ভেঙে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে 57 রান খরচ করে 7 উইকেট দখল করেন শামি ৷ তাও আবার সেমিফাইনালে ৷ বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে এর চেয়ে ভালো বোলিং রেকর্ড আর কারও নেই ৷
তিনবার পাঁচ উইকেট শিকারি এই বোলার কিংবদন্তি জাহির খানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন ৷ 2011 বিশ্বকাপে 21টি উইকেট তুলেছিলেন জাহির ৷ সেই রেকর্ড এবার ছাপিয়ে গেছেন তিনি ৷ শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসেও সবচেয়ে ভালো বোলিং ফিগারের নিরিখে পঞ্চম স্থান দখল করেছেন শামি ৷
জীবনের সেরা ফর্মে থাকা পেসস্টার যেন ঠিকই করে নিয়েছেন ভারতকে জয়ের শিখরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়বেন ৷ সারা বিশ্ব এখন শামিতে মগ্ন ৷ অনেকে তো এও বলছেন, ভারত ওয়াংখেড়েতে সেমি ফাইনাল খেলেনি বরং এটা ছিল 'শামি ফাইনাল' ৷ যদিও একটি ম্যাচ এখনও বাকি ৷ রবিবার আমেদাবাদই ঠিক করবে ভারতীয় দলের স্পিডস্টার রূপকথার ক্লাইম্যাক্স কীভাবে সাজাবেন ৷
শুনে হয়তো মনে হয়ে পারে হার্দিকের চোট ভারতকে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে ৷ কিন্তু একথা ঠিক যে শামি দলে আসায় পুরোনো বলে আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের শক্তি এক লহমায় অনেকখানি বেড়ে গিয়েছে ৷ শামি যেমন নতুন বলে স্যুইংয়ের নিদর্শন রাখছেন তেমন পুরোনো বলেও কাজ করছে তাঁর রিভার্সের জাদু ৷ ভারতের দুই নতুন বলের তারকা জসপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজও অনেক বেশি হাত খোলার সুযোগ পাচ্ছেন শামির কারণে ৷ বিশ্বকাপে হার্দিককে ফিরে পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই ৷ তবে হার্দিক দলে এলে ভারতীয় বোলিং অ্যাটাক যে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ তাই অনুরাগীরা নিশ্চয় বলবেন 'গেট ওয়েল সুন হার্দিক ৷'
আরও পড়ুন: