মুম্বই, 15 নভেম্বর: রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনালে জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের রাস্তা খুলল টিম ইন্ডিয়া ৷ স্কোরলাইন দশে-দশ ৷ লিগ টেবিলে অজেয় থেকে বিশ্বকাপের সেমিতে পৌঁছেছিল ভারতীয় দল ৷ কিউয়িবাহিনীকে হারানোর পাশাপাশি লক্ষ্য ছিল 2019 সালের সেমিফাইনালের বদলা নেওয়া ৷ গত বিশ্বকাপে এই কেন উইলিয়ামসনদের কারণেই বিশ্বকাপ জয়ে আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারতের ৷ ম্যাঞ্চেস্টারের বদলা মুম্বইতে নিল 'মেন ইন ব্লু' ৷ জয়ের আবহে ফিরে দেখা ভারতের জয়ের সফরনামা ৷
লিগের ম্যাচ:
ভারত-অস্ট্রেলিয়া: বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই কড়া প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া ৷ ভারতীয় বোলারদের দাপটে মাত্র 199 রানেই থেমে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৷ সর্বোচ্চ তিন উইকেট তুলে নেন রবীন্দ্র জাদেজা ৷ জবাবে ব্যাট করতে নেমে 2 রানে 3 উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল ভারতও ৷ তবে বিরাট কোহলির 85 রান এবং কে এল রাহুলের অপরাজিত 97 রানের দৌলতে 6 উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় টিম ইন্ডিয়া ৷
ভারত-আফগানিস্তান: চলতি বিশ্বকাপে ভারতের দ্বিতীয় জয় আসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৷ প্রথমে ব্যাট করে হাসমতউল্লাহ শাহিদির 80 ও আজমতউল্লাহের 62 রানের জেরে 272 রান তোলে আফগানবাহিনী ৷ ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ 4 উইকেট নেন জসপ্রীত বুমরাহ ৷ জবাবে ব্যাট করতে নেমে রোহিতের 131 এবং বিরাটের 55 রানের দুরন্ত ইনিংসের দৌলতে 8 উইকেটে জয় তুলে নেয় ভারত ৷
ভারত-পাকিস্তান: 14 অক্টোবর ভারতের তৃতীয় ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৷ এই ম্যাচেও ভারতীয় বোলাররা ধ্বংস করে দেন পাকিস্তানি ব্যাটিং অর্ডারকে ৷ মাত্র 191 রানে গুটিয়ে যায় বাবর আজমের দল ৷ দলের হয়ে একমাত্র অর্ধশতরানটি করেন বাবরই ৷ জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, হার্দিক পান্ডিয়া, কুলদীপ যাদব এবং রবীন্দ্র জাদেজা প্রত্যেকেই এদিন দু'টি করে উইকেট পান ৷ জবাবে ব্যাট করতে নেমে রোহিতের অধিনায়কোচিত 86 এবং শ্রেয়সের 53 রানের সুবাদে 7 উইকেটে জয় পায় ভারত ৷
ভারত-বাংলাদেশ: চতুর্থ ম্যাচে রোহিতের দল মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশের ৷ ভারতের বোলারদের দাপটে এদিন 256 রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলা টাইগারদের লড়াই ৷ রান তাড়া করতে নেমে চলতি বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম শতরানটি করেন বিরাট ৷ অন্যদিকে হাফসেঞ্চুরি পান শুভমান গিলও ৷ এই ম্যাচটিও ভারত জিতে নেয় 7 উইকেটে ৷
ভারত-নিউজিল্যান্ড: পঞ্চম ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনের দলের বিরুদ্ধে অবশ্য ভারতীয় বোলাররা কিছুটা কড়া শাসনের মুখে পড়েন ৷ রাচিন রবীন্দ্রর 75 রান এবং ড্যারিল মিচেলের 130 রানের ইনিংসের জেরে এক সময় তো এও মনে হয়েছিল রানের পাহাড় গড়বে কিউয়িরা ৷ কিন্তু ভারতকে ম্যাচে ফেরান মহম্মদ শামি ৷ 54 রান খরচ করে তুলে নেন 5 উইকেট ৷ তাঁর বোলিংয়ের সুবাদেই এদিন 273 রানে নিউজিল্যান্ডকে থামিয়ে দেয় ভারতীয় দল ৷ জবাবে ব্যাট করতে নেমে চেজ মাস্টার বিরাটের ব্যাট থেকে আসে 95 রান ৷ 4 উইকেটে এই ম্যাচ ঘরে তোলে ভারতীয় দল ৷
ভারত-ইংল্যান্ড: ষষ্ঠ ম্যাচে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোহিত 87 রানের ইনিংস খেললেও ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র 229 রানে ৷ তবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন ভারতীয় বোলাররা ৷ শামি-বুমরার জোড়া আক্রমণে 129 রানেই গুটিয়ে যায় জস বাটলারের দল ৷
ভারত-শ্রীলঙ্কা: সপ্তম ম্যাচে, বোলারদের পাশাপাশি জ্বলে উঠেন কোহলি-শ্রেয়স-গিলও ৷ 92 রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন শুভমন ৷ তবে 358 রান তাড়া করতে নেমে যে মাত্র 55 রানে গুটিয়ে যাবে শ্রীলঙ্কা তা হয়তো অনেকেই আশা করেননি ৷ সিরাজ একাই শিকার করেন পাঁচ ব্যাটারকে ৷ খরচ করেন মাত্র 16 রান ৷ 3টি উইকেট পান শামি ৷ 302 রানের বিশাল জয় তুলে নিয়ে ওয়াংখেড়েতে চুড়ান্ত পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে ভারত ৷
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা: পরের ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৷ অনেকেই আশা করেছিলেন এই ম্যাচে টক্কর দেবে প্রোটিয়া বাহিনী ৷ কিন্তু ইডেনে নিজের 49তম শতরান পূর্ণ করে সচিন তেন্ডুলকরের একদিনের ম্যাচে সর্বাধিক শতরানের রেকর্ড স্পর্শ করেন বিরাট ৷ 77 রান করেন শ্রেয়সও ৷ জবাবে 327 রান তাড়া করতে নেমে মাত্র 83 রানে শেষ হয়ে যায় প্রোটিয়াদের লড়াই ৷ এদিন ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ উইকেট নেন জাদেজা ৷
ভারত-নেদারল্যান্ডস: লিগে ভারতের শেষ ম্যাচটি ছিল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৷ চলতি বিশ্বকাপে ডাচবাহিনীর বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি রান বোর্ডে তুলেছিল ভারত ৷ শ্রেয়স-রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরির দৌলতে টিম ইন্ডিয়া করেছিল 410 রান ৷ অর্ধশতরান করেন রোহিত, শুভমান, কোহলিও ৷ জবাবে ব্যাট করতে নেমে 250 রানে অল আউট হয়ে যায় স্কট এডওয়ার্ডসের দল ৷ ম্যাচে বল হাতেও উইকেট তুলে নেন রোহিত-বিরাট ৷
সেমিফাইনাল:
ভারত-নিউজিল্যান্ড: চলতি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বুধবার নিউজিল্যান্ডকে 70 রানের হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল 'মেন ইন ব্লু' ৷ ওয়াংখেড়েতে প্রথমে ব্যাট করে 397 রান তোলে ভারত ৷ সৌজন্যে বিরাটের 50তম শতরান ৷ 117 রানের এই ইনিংসের পাশাপাশি শতরান করেন শ্রেয়সও ৷ অর্ধশতরান করেন গিলও ৷
কিউয়িবাহিনী লড়াই দিতে কোনও কসুর করেনি ৷ ফের একবার শতরান এল ড্যারিল মিচেলের ব্যাট থেকে ৷ অর্ধশতরান করেন কেন উইলিয়ামসনও ৷ তবে খেলা বদলে দেন শামি ৷ ব্যাটিং সহায়ক এই পিচেও 56 রান খরচ করে তুলে নেন 7 উইকেট ৷ তাঁর আক্রমণাত্মক বোলিংয়েই 327 রানে শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ৷
আরও পড়ুন:
ম্যাঞ্চেস্টারের বদলা মুম্বইয়ে, কিউয়ি-হার্ডল টপকে তৃতীয়বার বিশ্বজয়ের কিনারে ভারত