কটক, 22 ডিসেম্বর : দিনের শুরুটা দেখে সবসময় শেষ বিচার করা যায় না । যদি করা যেত তাহলে রবিবাসরীয় কটকে যে ঝড় তুলেছিলেন পোলার্ডরা তা কোহলির দাপটে ম্রিয়মান হয়ে পড়ত না । কোহলি আজ ফের এক রূপকথার নায়ক । তাঁর মহাকাব্যিক ইনিংস সবকিছু ভেঙে দিল । ইতিহাস গড়লেন । রোহিত-রাহুলরা ফিরে গেলেও একা দায়িত্ব নিয়ে দলকে জেতালেন । বুঝিয়ে দিলেন শচিন পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাণপুরুষ এখন তিনিই । কোহলি যুগের ইতিহাস রচনাই এখন কেবল বাকি রইল । আর কোহলি যদি সিংহাসন গড়ে থাকেন, তাহলে শেষবেলায় রাজার রাজা তো শার্দুল ঠাকুর-জাদেজারাই ৷ ভারত ম্যাচ জিতল 4 উইকেটে ।
আজ টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে ব্যাট করতে পাঠান কোহলি । লক্ষ্য ছিল ক্যারিবিয়ানদের কম রানের মধ্যে আটকে রাখা । আর রান তাড়া করতে বারবারই 'পটু' রোহিত-রাহুল-কোহলিরা সহজেই তা তুলে দেবেন । কিন্তু আজ ছিল যেন নতুন ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্যের সূর্যোদয়ের দিন । ক্লাইভ লয়েড পরবর্তী সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি যাকে ভাবা হচ্ছে সেই শেই হোপের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ক্যারিবিয়ান ঝড় । পরবর্তীতে যা মহিরূহে পরিণত হয় নিকোলাস পুরান এবং কেরন পোলার্ডের ব্যাটে । পোলার্ডের অধিনায়কোচিত ইনিংস 51 বলে 74 দলের স্কোরকে 315-তে নিয়ে যায় ।
আজ বোলিং স্তরে বেশ কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলেন শাস্ত্রী-কোহলি । মহম্মদ শামি এবং কুলদীপ যাদবকে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছিল বোলিং আক্রমণের রূপরেখা । কিন্তু হোপ-হেটমায়ার-পোলার্ডের দাপটে বড়ই অসহায় লেগেছে তাঁদের । চায়নাম্যান কুলদীপ, যিনি একসময়ে ত্রাস হয়ে উঠছিলেন, আজ 10 ওভারে 67 রান খরচ করলেও একটি উইকেটও পাননি । একটি পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিতে যথেষ্ট কতটা অসহায় ছিলেন ভারতীয় বোলাররা ।
লড়াইটা ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল রোহিত-রাহুল-কোহলিদের কাঁধে । সঠিক সময়ে ফের একবার জ্বলে উঠল রোহিত শর্মার ব্যাট । যেভাবে এগোচ্ছিলেন শতরান একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল । 63 বলে 63 রান করে যখন রো-হিট শেই হোপের দস্তানায় ধরা পড়লেন, তখন কটকের বারাবাটি স্টেডিয়ামে পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে । আর সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কে জড়ানোর পর রাহুল এখন পরিণত । 77 রানের যে ইনিংস রাহুলের ব্যাট থেকে এল তা অতিরাজকীয় বললেও বোধহয় কম বলা হবে । দিনের শেষে ফের একবার প্রচারের আলো কেড়ে নিয়ে গেলেন সেই বিরাট । অধিনায়কের মতো খেললেন । লড়াই করলেন । জয়ের দোরগোড়ায় এসে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ৷ তখন মনে একটা কু-ডাক দিচ্ছিল ৷ কিন্তু, গ্যালারি হাজার মোবাইলের আলোয় আলোকিত হয়ে বুঝিয়ে দিল জাড্ডু আর শার্দুলের হাত ধরেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া ৷ দল জিতল ৷ টানা দশ সিরিজ় জয়ের রেকর্ড গড়ল ৷
তবে, দিনের শেষে একটা কাঁটা থেকেই গেল ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আইয়ারদের ব্যর্থতা । 4 নম্বরের শূন্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পন্থ ব্যর্থ হয়ে ফের সমালোচনার সামনে ।