20 বছর ধরে ক্রিকেটকে শাসন করা সচিন তেন্ডুলকর এই খেলাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। কিন্তু কালিসের রেকর্ড যেন অবিশ্বাস্য।
সচিন তেন্ডুলকর: ২০০ টেস্ট, ৩২৯ ইনিংস, ১৫৯২১ রান, গড় ৫৩.৭৮, সেঞ্চুরি ৫১, হাফসেঞ্চুরি ৬৮
জাক কালিস: ১৬৬ টেস্ট, ২৮০ ইনিংস, ১৩২৮৯ রান, গড় ৫৫.৩৭, সেঞ্চুরি ৪৫, হাফসেঞ্চুরি ৫৮
টেস্ট ক্রিকেটে সচিন আর কালিসের রেকর্ড এমনই যে, এই দু’জনকে আলাদা করা কার্যত অসম্ভব। কালিসের চেয়ে তেন্ডুলকর ছ’টা সেঞ্চুরি বেশি করেছেন এবং ৩৪টি ইনিংস বেশি খেলেছেন। তবে, অনেকের মতে, সচিনের ৫১ টেস্ট সেঞ্চুরির ৩৩টি উপমহাদেশের মাটিতে, যেখানে ব্যাট করাটা কিছুটা সহজ। আর কালিসের ৪৫ সেঞ্চুরির ২২টি এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণবন্ত পিচে ব্যাট করে।
এ ছাড়া কালিসের গড়ও সচিনের চেয়ে ভাল। এর সঙ্গে যোগ করুন কালিসের বোলিং দক্ষতা। বোলিংয়ে কালিস ইনেকটাই এগিয়ে এবং তাঁর বোলিং দক্ষতা প্রথম সারির পেসারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। টেস্টে অলরাউন্ডার কালিস নিয়েছেন ২৯২ উইকেট। সেখানে সচিনের সংগ্রহ মাত্র ৪৬ উইকেট। কিন্তু যদি ওয়ান ডে ক্রিকেটের কথা বলা হয়, তা হলে সচিনের রেকর্ড অনেকটাই ভাল।
সচিন তেন্ডুলকর: ৪৬৩ ওয়ান ডে, ৪৫২ ইনিংস, ১৮৪২৬ রান, গড় ৪৪.৮৩, সেঞ্চুরি ৪৯, হাফসেঞ্চুরি ৯৬
জাক কালিস: ৩২৮ টেস্ট, ৩১৪ ইনিংস, ১১৫৭৯ রান, গড় ৪৪.৩৬, সেঞ্চুরি ১৭, হাফসেঞ্চুরি ৮৬
গড় প্রায় সমান হলেও সচিনের স্ট্রাইক রেট অনেকটাই বেশি এবং ভারতীয় ডানহাতির ম্যাচ জেতানো ইনিংসের সংখ্যাও অনেক বেশি। ম্যাচকে প্রভাবিত করার ইনিসও সচিনের অনেকটাই বেশি। কালিসের গড় বেশি হওয়ার একমাত্র কারণ হল, এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার সচিনের চেয়ে নট আউট থেকেছেন বেশি বার। তবে তাঁর স্ট্রাইক রেট সচিনের ধারেকাছেও নয়, এমনকি তিনি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়া সত্ত্বেও এবং নতুন বল না খেলা সত্ত্বেও।
কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কালিস বোলিং দক্ষতায় সচিনকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন অনেকটাই। ওয়ানডেতে বেশি কিছু দুর্দান্ত স্পেল করা সচিন তেন্ডুলকরের উইকেট সংখ্যা যেখানে ১৫৪, সেখানে কালিসের উইকেট সংখ্যা ২৭৩। তবে এটাও ঠিক যে, সচিন কোনও দিনই ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সারির বোলার ছিলেন না।
নজর দেওয়ার মতো অন্য বিষয়গুলি
প্রাক্তন অজি় তারকা ইয়ান চ্যাপেল এক বার বলেছিলেন, “যে কোনও ক্রিকেটার কতটা ভাল তা মাপার সবচেয়ে ভাল উপায় হল, তাঁর প্রতিপক্ষের ক্ষমতা মাপা।”
এই যুক্তি অনুযায়ী বলা যেতেই পারে যে, কালিসের চেয়ে সচিন অনেক কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রান করেছেন। সচিনকে রান করতে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে, যেখানে ছিলেন, অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, মাখায়া এনতিনি, ডেল স্টেন, মর্নি মর্কেল, ভার্নন ফিল্যান্ডার এবং জাক কালিস নিজে। কালিসকে কখনই এঁদের বিরুদ্ধে খেলতে হয়নি। আর এই আক্রমণের সঙ্গে ভারতীয় পেসারদের তুলনা হয় না।
আরও একটি বিষয় হল, কেরিয়ারের একেবারে প্রথম দিকে, বিশেষত বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে সচিন ছিলেন ভারতের একমাত্র ভরসার জায়গা। এই কথাটা কালিসের ক্ষেত্রে একেবারেই বলা যাবে না কারণ তিনি ছিলেন হ্যান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বাধীন দুর্ধর্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং ২০০০ সালের প্রথম দিকে বীরেন্দ্র সহবাগ এবং গৌতম গম্ভীররা এসে ভারতীয় দলকে শক্তিশালী করলেও তত দিনে সচিনের কেরিয়ারের প্রথম ১০-১২ বছর খেলা হয়ে গিয়েছে, যে সময় তাঁর ফর্মের শিখরে থাকার কথা।
ফলে, এটা বলা মোটেই ভল নয় যে, সচিনকে তাঁর কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময় মারাত্মক চাপ নিয়ে খেলতে হয়েছে এবং তার মধ্যেই ভাল পারফর্ম করতে হয়েছে। কালিসের ক্ষেত্রে এ কথা বলা যাবে না কারণ তিনি প্রথম থেকেই একাট ভাল দল পেয়েছিলেন। অতএব, কে সেরা, এই নিয়ে তর্ক চলতেই থাকবে এবং এর কোনও শেষও নেই। এই মতামত ব্যক্তি বিশেষে বদলে যেতে বাধ্য।
সচিন তাঁর ব্যটিং দক্ষতার মাধ্যমে একার হাতে বহু ম্যাচের রং বদলে দিয়েছেন, একের পর এক রেকর্ড করে গিয়েছেন এবং সর্বকালের সেরা ব্যটসম্যানদের তালিকায় নিজের নাম তুলে রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে কালিসের সঙ্গে তাঁর তুলনাই আসবে না। অন্য দিকে কালিস যেন একই অঙ্গে দুই ক্রিকেটার। তিনি দলে থাকা মানে দুই ক্ষেত্রেই ভরসা তৈরি হওয়া। তাই অলরাউন্ড দক্ষতায় দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে পছন্দের ক্রিকেটারের সঙ্গে সচিনের কোনও তুলনাই হয় না।