বসু পরিবার। রাজ পরিবার। ব্লু ব্লাড লাইনের পরিবারটি সময়ের সঙ্গে রাজত্ব হারালেও, মনের দিক থেকে তখনও তারা রাজাই। সুমন ঘোষের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'বসু পরিবার' নিছকই একটি ফ্যামিলি ড্রামা। যে পরিবারের বিরাট রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে, আসবাবে, দালানে, উঠোনে, বড় বড় থামের গভীরে লুকিয়ে রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্কের অবক্ষয়ের কাহিনি। যা রাজদম্ভ বাঁচাতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
ছবির শুরু এবং প্রথম ভাগে কোনও চমক নেই। প্রথম 40 মিনিট কেটে যাওয়ার পরই পরদায় ভেসে উঠবে ইন্টারভেল কথাটি। এবং তাতেই প্রথম হোঁচট খাবেন দর্শক। একই ভাবে মনে হবে তাহলে কি বাকি 48 মিনিট এভাবেই ঢিমেতালে চলবে ? তাহলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, জিশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকাদের অযথা উপস্থিতির কারণ কী ? তাদের কি কেবলই অত বড় রাজবাড়িতে ঘুরে বেড়ানো, খোশগল্প, স্মৃতিচারণের জন্যই অভিনয় করানো হচ্ছে? সেখানেই কি শেষ? বলতে চাইছি, ছবির প্রথমভাগ নিতান্তই ধীরে ধীরে এগিয়েছে।
কিন্তু, আপনি যদি আগ্রহ ধরে রেখে ইন্টারভেলের দ্বিতীয় অংশে যান, আস্তে আস্তে খোলস খুলবে চিত্রনাট্য। এই দুই বৃদ্ধ দম্পতির কাহিনি। অপর্ণা সেন ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন সেই দম্পতির চরিত্রে। তাদের 50তম বিবাহবার্ষিকী। বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী পালন করতে রাজ বাড়িতে হাজির তাদের ছেলে-মেয়ে এবং নিকটতম আত্মীয়রা। গল্পটি বিদেশি লেখক জেমস জয়েসের লেখা 'দা ডেথ' অবলম্বনে তৈরি। যেটিকে সম্ভ্রান্ত বাঙালি পরিবারের মোড়কে তৈরি করেছেন পরিচালক। শুরুতেই একটি ড্রোনের অংশ দেখানো হয়। রাজবাড়ি এবং তার চারপাশের। সেই দৃশ্য আপনার ভালো লাগবে। তারপরই সৌমিত্র সকলকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেন। এবং একে একে পরিবারের সদস্যরা আসতে শুরু করে রাজবাড়িতে।
... এবং গল্প যত এগোয়, তাদের সুখের জীবন থেকে পড়তে শুরু করে। প্রত্যেকেই তাঁদের জীবনের চরমতম সত্যের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। অভিনয়ের দিক থেকে বলতে গেলে বিশেষ উল্লেখযোগ্য শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি সিনে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর অভিনয়ের দাপট।
18 বছর আগে 'পারমিতার একদিন' ছবিতে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং অপর্ণা সেনকে। তার আগে অবশ্য বাক্স বদল, আকাশ কুসুম, জীবন সৈকতে, বসন্ত বিলাপ এবং তিন ভুবনের পারে ছবিতে তাঁদের দেখা গিয়েছে অনবদ্য জুটি হিসেবে। এই ছবিতে, তাঁরাই বৃদ্ধ জুটি। সৌমিত্র সেই চার্ম ফুটে উঠেছে।পাশাপাশি অপর্ণাকে খুব সুন্দর দেখিয়েছে লাল বেনারসিতে। ঋতুপর্ণা এবং জিশুর আরও অভিনয় করার সুযোগ ছিল। শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে তেমনভাবে ব্যবহার করা হয়নি এই ছবিতে।
ছবিটি সংলাপের দিক থেকে আরেকটু ভালো হতে পারত। আরও জমাটি হতে পারত। কিন্তু যেহেতু ক্লাইমেক্সেই এমন চমক রয়েছে, যে বাকি ত্রুটি ঢেকে যায়।