ETV ভারত সিতারা : কাজটা নেওয়ার সময়ে মনে হয়েছিল ওয়েব সিরিজ়টি এত জনপ্রিয় হবে ?
স্বস্তিকা : কোনও অভিনেতাই হয়তো এটা নিয়ে ভাবে না । এগুলো নিয়ে প্রযোজকরা বেশি ভাবেন । তাঁরাই তো সব অর্থ লগ্নি করেন । তবে আমার মনে হয় যাঁরাই একসঙ্গে টিম হিসেবে কাজ করেন, তাঁরা তাঁদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে কাজটা করার চেষ্টা করেন । মানুষের কতটা ভালো লাগবে, সেটা তো একটা গ্যাম্বলের মতো ব্যাপার । আমরা এমন একটা ওয়েব সিরিজ় বানিয়েছি, যেটা দেখে মানুষ অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত । তবে মানুষকে শুধুমাত্র বিনোদন দেওয়ার জন্য 'পাতাল লোক' তৈরি হয়নি । সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে এসেছে চরিত্ররা । ভারতবর্ষের আসল চেহারা তুলে ধরা হয়েছে । শহুরে মানুষদের চোখ খুলে দিতে পারে এই ওয়েব সিরিজ় । এ দেশে এরকম একটা সিরিজ় তৈরি হওয়া সত্যি ভীষণ সাহসের ।
ETV : এখানে ডলি মেহেরা (স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়) সঞ্জীব মেহেরার (নীরজ কবি) স্ত্রী । ব্যোমকেশের পর নীরজ কবির সঙ্গে এটা তো আপনার দ্বিতীয় কাজ...
স্বস্তিকা : আমি নীরজের সঙ্গে 'ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী'তে কাজ করেছি । এটা আমাদের দ্বিতীয় কাজ । তিনি যে একজন অত্যন্ত ব্যতিক্রমী অভিনেতা, সেটা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না । তিনি একজন অসাধারণ মানুষও । আমি ওঁর থেকে অনেককিছু শিখেছি । আমাদের অভিনেতাদের স্কুলে গিয়ে শেখার সময় নেই । সুতরাং, যাঁদের সঙ্গে আমরা কাজ করি, নিজেদের কাজ ভালো করার জন্য, তাঁদের থেকেই শিখতে হয় । নিজেকে তৈরি করতে সেটাই করা উচিত বলে আমি মনে করি । আমার মনে হয় ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি বলেই, আরও ভালো অভিনয় করতে পেরেছি ।
ETV : ডলি মেহেরা চরিত্রটির কোন বিষয়টি সবচেয়ে ভালো লাগল ?
স্বস্তিকা : সাবিত্রীর (পোষ্য কুকুর) সঙ্গে তার বন্ডিং ।
ETV : আপনি কি ডগ লাভার ?
স্বস্তিকা : ভীষণ । ডগ লাভার বললে কম বলা হবে । আমি ডগ অ্যাডিক্ট । আমার নিজের বাড়িতে একটা স্ট্রে ডগ আছে । তাই সাবিত্রীর সঙ্গে এত কানেক্ট করতে পেরেছি ।
ETV : 'পাতাল লোক'-এ কুকুর সম্পর্কে একটা বিষয় উঠে এসেছে, ভালো মানুষরা কুকুরদের ভালোবাসে, কুকুররাও ভালো মানুষদের ভালোবাসে...
স্বস্তিকা : যাঁরা কুকুর ভালোবাসে না, আমি তাঁদের বিরোধী । আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের পছন্দ করি না, যাঁরা কুকুরদের পছন্দ করে না । অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের দেখলেই কুকুররা চেঁচায়, আমি সেইসব মানুষকে একদম বিশ্বাস করি না ।
ETV : 'পাতাল লোক'এ একটা দৃশ্য আছে, যেখানে সাবিত্রী তার বাচ্চাদের জন্ম দেয় । আপনি নিজেই তাদের ডেলিভারি করালেন... বাস্তবে এই কাজটা কতবার করেছেন ?
স্বস্তিকা : এই কাজে আমি ভীষণ পটু । আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পরতাম, আমার তখন ১১টা নেড়ি কুকুর ছিল । বাবা-মা ছিল, তাদের বাচ্চা হয়েছে, তারা থেকে গেছে । বাচ্চাদের বাচ্চারাও থেকে গেছে । ওদের বাচ্চা হওয়ার সময় হেল্প করতে হয়েছিল । অনেক সময় মাঝরাতেও বাচ্চা ডেলিভারি হয়েছে । কট এনে, গরম জল করে ডেলিভারি করিয়েছি । প্রেগনেন্সির সময়ও তাদের পাশে ছিলাম । শুধু এটা নয়, কুকুরদের সঙ্গে আমার সবরকম অভিজ্ঞতাই আছে । ওদের আমি ইনজেকশনও দিতে পারি ।
ETV : সাবিত্রীর সঙ্গে ডলির এই বন্ধন আছে বলেই কি আপনি এই চরিত্রটা করতে রাজি হয়েছিলেন ?
স্বস্তিকা : চরিত্রটার জন্য হ্যাঁ বলার অনেক কারণ আছে । তবে প্রাথমিক কারণ এটাই, যে সে একটি কুকুরের সঙ্গে এরকম একটা সম্পর্ক শেয়ার করে । একটা কুকুরের সঙ্গে শুটিং করার অভিজ্ঞতাও পেতে চেয়েছিলাম । এছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে যার জন্য ডলির চরিত্রটা করেছি । যেগুলোর মধ্যে একটা নীরজ কবি । তারপর পরিচালক ও নির্মাতারাও একটা কারণ । প্রযোজনা সংস্থা এবং অবশ্যই অ্যামাজ়ন প্রাইম ।
ETV : 'পাতাল লোক' নিয়ে তো অনেকে অনেক প্রতিক্রিয়া দিল, কার থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়ে আপনি সবচেয়ে খুশি হয়েছেন ?
স্বস্তিকা : গতকাল আমাকে বিদ্যা বালান ফোন করেছিলেন । খুব প্রশংসা করছিলেন । বললেন, 'পাতাল লোক' ওঁর খুব ভালো লেগেছে । উনি মনে করেন, অনেক বছর পরে এরকম একটা কাজ উনি দেখেছেন । সিরিজ়ে সবার কথা বলছিলেন । আমার কাজের খুবই প্রশংসা করলেন । কিছু নির্দিষ্ট দৃশ্য তুলে কথা বলছিলেন । ওঁর ফোন আসায় আমি ভীষণ আনন্দ পেয়েছি । এত আনন্দ হচ্ছিল, যে মনে হচ্ছিল কিছুই ঠিক করে শুনতে পারছি না ! ওঁর ফোন কলটা আমার কাছে খুব স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
ETV : আপনিও উমা বৌদির মত চরিত্রে অভিনয় করেছেন । আরও অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছেন...
স্বস্তিকা : আমার মনে হয় একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর সব ধরনের চরিত্র করতে পারা উচিত । তা না হলে মানুষ আমাকে ভালো অভিনেত্রী কেন বলবেন ? আমি ডলি মেহেরা করতে পারব, কদলীবালা করতে পারব, উমা বৌদি করতে পারব, কমলিনী গুহ... একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার ব্যাপ্তি বাড়ানো উচিত । আমার নিজেকে সবসময় চ্যালেঞ্জ করা উচিত । আমি একটা ভোজপুরি গানে নাচতেও পারি, আবার ডলি মেহেরার চরিত্র করতে পারি, কদলীবলার মত নাকি সুরে কথাও বলতে পারি.. অভিনেত্রী হিসেবে যেটা আমাকে করতে বলা হচ্ছে সেটা আমার করতে পারা উচিত । আমার রেঞ্জটাই হল A-Z । আমি আরও ইনটেন্স চরিত্র করতে চাই, আরও কঠিন চরিত্র করতে চাই । তবে সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে । আমার পারফর্ম করার জায়গা থাকতে হবে, সেটাই আমার একমাত্র ক্রাইটেরিয়া । আমি নিজে কন্ট্রিবিউট করতে চাই । আমি আমার কাজের ছাপ ফেলে যেতে চাই, যাতে সকলের সেই কাজ মনে থাকে ।
ETV : মুম্বইতে আর কী কী কাজের কথা হয়ে আছে ?
স্বস্তিকা : এখন তো সব জায়গায় লকডাউন । 'পাতাল লোক' রিলিজ় করল । মানুষ দেখছে। দেখি কী ধরনের কাজ আমার কাছে আসে । তারপর আমি চুজ় করব । আমি তাড়াহুড়ো করতে চাই না । লোকে আমার কাছে 10 টা কাজ নিয়ে এল, আর আমি 10টাই নিয়ে নিলাম, সেটা করতে চাই না । সময় নিয়ে দেখে, ভেবে, চুজ় করব ।
ETV : এই লকডাউন কেমনভাবে কাটাচ্ছেন ?
স্বস্তিকা : বাসন মাজা, জামা কাপড় কাচা, রান্না করা, ঘর ঝাড় পোচ করা, সিরিজ় দেখা, বাজার যাওয়া, ফুল স্টপ ।