কলকাতা : নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটনকারী মুখার্জি কমিশনের শুনানির উপর ভিত্তি করে 'গুমনামী' তৈরি করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখার্জি । ছবির টিজ়ার দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন সৃজিত নিজের মতো করে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যর উদঘাটন করেছেন ছবিতে । কেউ কেউ ভাবেন, গুমনামী বাবাকে নেতাজি হিসেবে প্রতিপন্ন করতে চেষ্টা করেছেন পরিচালক । প্রতিবাদ তোলেন অনেকে । তবে এত বিতর্কের মধ্যেও নেতাজির পরিবারের একাংশ পাশে দাঁড়িয়েছেন সৃজিত মুখার্জির । ছবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন বসু পরিবারের সদস্য জয়ন্তি রক্ষিত, আর্য্যকুমার বোস, তপতী ঘোষ ও ইন্দ্রনীল মিত্র ।
জয়ন্তি রক্ষিত বলেন, "নেতাজির যে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তা মানেনি মুখার্জি কমিশন । নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বোসও এই ঘটনার কথা বিশ্বাস করতেন না । তিনি হাবিবুর রহমানকে পুণরায় প্রশ্ন করে জানতে পারেন তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে । তাঁর প্রকাশিত নেশন নামক সংবাদপত্রে 1949 সালে প্রকাশ হয়, নেতাজি চিনে রয়েছেন । একথা তিনি কিসের ভিত্তিতে লিখেছিলেন ? তার উপর লখনউয়ের অধীর সোম গুমনামী বাবা নামের এই বিশেষ সাধু যে নেতাজি, তা বিশ্বাস করেননি । একটি বই লিখেছিলেন গবেষণা করে । আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা । আমাদের প্রত্যেকেরই বাকস্বাধীনতা রয়েছে । তাই নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে যদি কোনও পরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকেন, আমি তাতে কোনও অন্যায় দেখতে পাই না ।"
আর্য্যকুমার বোস বলেন, "আমার ঠাকুরদাদা শরৎচন্দ্র বোস এবং সুরেশচন্দ্র বোস বিশ্বাসই করতেন না নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন । শাহনওয়াজ কমিটির বিরোধিতা করেছিলেন সুরেশচন্দ্র । বিচারপতি মনোজকুমার মুখার্জিও বিরোধিতা করেছিলেন । একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনও পরিচালক নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ছবি তৈরি করতেই পারেন । এটা তাঁর নৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে । মানুষ না জেনেশুনে যে রকম আচরণ করেছেন, আমি তার বিরোধিতা করছি ।"
তপতী ঘোষ বলেন, "স্বাধীন ভারতবর্ষের নেতারা নেতাজিকে এতটাই অবজ্ঞা করেছিলেন যে, ইতিহাস বইতে নেতাজি সম্পর্কে কিংবা INA সম্পর্কে মাত্র একটা প্যারাগ্রাফই লেখা হয়েছে । ভারতবর্ষে নতুন প্রজন্ম নেতাজি সম্পর্কে কিছুই জানে না । এতগুলো বছর পর সৃজিত মুখার্জির মতো পরিচালকরা এগিয়ে এসে ছবি তৈরি করছেন নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে । এটা তো নেতাজিকে বা তাঁর দেশের প্রতি অবদানকে সকলের সামনে তুলে ধরা । নেতাজি পরবর্তীকালে সাধু হয়েছিলেন, কি হননি, সেটা বিতর্কের বিষয় । নেতাজির বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু সাজানো মিথ্যে রটনা ছাড়া কিছুই নয় । তাছাড়া নেতাজি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন । এই দেশের মানুষকে সেটা বিচার করতে দিন ।"
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">
ইন্দ্রনীল মিত্র বলেন, "নেতাজি আমাদের দেশের । তিনি শুধু বোস পরিবারের সদস্য নন । পার্লামেন্টে মুখার্জি কমিশনকে রাখার পরপরই তা খারিজ করে দেওয়া হয় । কেন খারিজ করে দেওয়া হয়, তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত । হয়তো ভারতবাসীর সত্যি জানার অধিকার নেই । তার আগে সরকারের তরফে একটি কমিটি এবং কমিশন বসানো হয়েছিল নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যকে কেন্দ্র করে । কোনওটি সঠিক পরিণতির কথা বলতে পারেনি । একমাত্র মুখার্জি কমিশন বলেছিল, নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি । বোস পরিবারের কয়েকজন সদস্য সেই কমিশনের অংশ ছিলেন । পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সেই সাহস আছে, যেখানে তিনি মুখার্জি কমিশনের শুনানির উপর ভিত্তি করে গোটা রিপোর্টটাই দর্শকের সামনে তুলে ধরতে চাইছেন, একটি ফিচার ছবির মাধ্যমে । তিনি মুখার্জির কমিশনের বাইরে একটা কথাও বলেননি । আমার ভাবতে খুবই খারাপ লাগছে, যাঁরা কমিশনের অঙ্গ ছিলেন, তাঁরাই পরিচালক সৃজিত মুখার্জির বিরোধিতা করছেন । বোস পরিবারের মানুষজন যদি নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা সেটা পারবেন না কেন ? কেন তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করা হবে ?"
সৃজিত মুখার্জির 'গুমনামী'মুক্তি পাচ্ছে 2 অক্টোবর । ছবিটি ভারতের সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে । পেয়েছে 'U' সার্টিফিকেটও । ছবিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং গুমনামী বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় । সাংবাদিক চন্দ্রচূড়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য । তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী ।