জীবন কখন কোন মোড় নেয় বলা যায় না। কিন্তু, সেই অপ্রত্যাশিত মোড়গুলোকেও কতটা সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা যায় তা জয়ললিতার থেকে শিক্ষণীয় । ষাটের দশকের সুপরিচিত অভিনেত্রী জয়ললিতা যখন রাজনীতির মঞ্চে এলেন তখন সেই গুরুদায়িত্বও যথেষ্ট নিপুণ ভাবে পালন করলেন তিনি।
চারপাশে ঘটে চলা নৃশংসতা দেখে নিজের জীবন শেষ করে দেবেন ভেবেছিলেন জয়ললিতা। কিন্তু, সেই মানুষটিই রাজনীতির মঞ্চে সমস্ত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি সামলেছেন হাসি মুখে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব সামলেছেন দাপটের সঙ্গে। তৈরি করেছেন বিশাল সংখ্যক অনুরাগী, যাঁরা তাঁদের 'আম্মা'-র জন্য প্রাণও দিতে পারতেন।
সময় মানুষকে বদলে দেয়। যে জয়ললিতা কোনওদিন প্রতিবাদ করেননি কোনও বিষয়ে, মানুষের নজর এড়িয়ে দরজা বন্ধ করে কেঁদেছেন দিনের পর দিন, সেই মানুষটিই চোদ্দ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন। যেদিন গ্রেপ্তার হলেন তিনি, সেদিন লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল ঘটনার প্রতিবাদে। 'আম্মা'-র গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেরা হাতকড়া পরেছিলেন তাঁরা। এমনই ছিল তাঁর গ্রহণযোগ্যতা।
68 বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জয়ললিতা। সেদিন দেশজুড়ে শোকস্তব্ধতা। তাঁর চলে যাওয়া মা-কে হারানোর থেকে কম কিছু ছিল না অনেকের জন্য়ই। 'জ়িন্দগি লম্বি নহিঁ, বড়ি হোনি চাহিয়ে', হয়তো জয়ললিতার জন্যই প্রযোজ্য এই সংলাপ।
তবে শুরু থেকে এমনটা ছিল না। ছোটো বয়স থেকেই খুব লাজুক প্রকৃতির ছিলেন জয়ললিতা। অচেনা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেতেন তিনি। শুধুমাত্র মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তিনি মুখিয়ে ছিলেন বরাবর। কিন্তু, সেখানেই সমস্যা...কারণ চরিত্রাভিনেত্রী মা সন্ধ্যা কাজের বাইরে তাঁর মেয়েকে বেশি সময় দিতে পারতেন না।
ফলে বাধ্য হয়ে মাত্র চার বছর বয়স থেকে দাদু-দিদার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি। মা মাঝে মাঝে বেঙ্গালুরু আসতেন ছোট্ট জয়াকে দেখতে। আর জয়া মায়ের আঁচল ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেত। কিন্তু মাকে তো ফিরতে হবে..কী উপায়? বোনকে নিজের শাড়ি পরিয়ে সন্ধ্যা বেরিয়ে যেতেন বাড়ি থেকে। বোন শুয়ে পড়ত জয়ার পাশে ঠিক মায়ের মতো করে। জয়া তখন মাকে পাওয়ার আনন্দ সম্বল করে স্বপ্নরাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মায়ের ইচ্ছাতেই সিনেমা জগতে আসা জয়ললিতার। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড থেকে তিনি বরাবর দূরে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু, সেই অভিনয় জগতেই আসতে হয় তাঁকে। অভিনেত্রী হিসেবে নাম করেন তিনি। তারপর M.G.R-এর ইচ্ছা রাখতে রাজনীতিতে প্রবেশ। দুই প্রফেশনেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন জয়ললিতা। লাইমলাইট থেকে দূরে থাকতে চাইলেও লাইমলাইট কখনই তাঁকে দূরে ঠেলেনি। মৃত্যুর পরও তাই জয়ললিতা আজ ভীষণভাবে বর্তমান।
'থালাইভি' নামে এক ছবি আসতে চলেছে 2020 সালের 20 ফেব্রুয়ারি। ছবিটি জয়ললিতার বায়োপিক। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন কঙ্গনা রানাওয়াত। যদিও জয়ললিতা চেয়েছিলেন তাঁর বায়োপিক তৈরি হলে সেখানে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন অভিনয় করুক। কঙ্গনা এই মহামানবীর জীবনকে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারেন এখন সেটাই দেখার।