ETV Bharat / opinion

আমাদের মৌলিক অধিকার কে রক্ষা করে ? - ETV bharat opinion

সম্প্রতি প্রশান্ত ভূষণের ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা । প্রশ্ন উঠেছে ভারতের বিচারব্যবস্থা নিয়ে এবং মৌলিক অধিকারগুলির প্রসঙ্গেও আবার প্রশ্ন উঠছে ।

fundamental rights
fundamental rights
author img

By

Published : Sep 4, 2020, 9:57 PM IST

36 বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়, “দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে আদালতগুলিকে...তাদের প্রাথমিক কর্তব্য হল, মতপ্রকাশকে খর্ব করতে সরকার যে আইন ও পদক্ষেপ করেছে, তাকে ওভাররুল করা” — সংবিধানের ভাবনাকেই তুলে ধরে । সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে টুইট করার জন্য আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে – নিজেরই ঘোষিত ভাবনাকে নাকচ করেছে । সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, “যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা এবং একটা ব্যবস্থার সুনামকে বেপরোয়াভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে”—এটা একেবারে সঠিক । সন্দেহ এখানেই আসে যে, “বিচারব্যবস্থার সুনাম কি এতটাই দুর্লভ যে সমালোচনা করে টুইট করলেই তা নষ্ট হবে?” 1952 সালে সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনাল এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, সমালোচনাকে স্তব্ধ করে আদালত কখনও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না । একদিকে বিচারবিভাগের মর্যাদাকে তুলে ধরার প্রয়োজন যেমন রয়েছে, অন্যদিকে সংবিধানের দেওয়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ‘এমনকী যুক্তিপূর্ণ বিধিনিষেধ সমেত’ । উদার এবং ভারসাম্যযুক্ত জবাব আদালতের মর্যাদা ও সম্মানকে তুলে ধরে । 1978 সালের মামলায় বিচাপতি কৃষ্ণ আইয়ার বলেছিলেন, “যখন হাতি (এখানে বিচারব্যবস্থা) মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলে তখন কুকুররা ঘেউ ঘেউ করে । আমরা বার বার এইধরণের নির্বোধ সমালোচনার জবাব দেব না ।” মালগাভোনকর নীতি নামে পরিচিত এই মহান ভাবনা এখন বিচারবিভাগের কাছে পথপ্রদর্শক আলো হতে পারে ।

আদালত অবমাননা আইন প্রথম তৈরি হয় 1926 সালে ব্রিটিশ আমলে । 1949 সালে ভারতের সংবিধানে একে অন্তর্ভূক্ত করার প্রেক্ষিতে, সংবিধান সভায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে একটি বিতর্ক হয়েছিল । অবমাননা আইনগুলির অপব্যবহার এবং বিচারক একাধারে ভুক্তভোগী এবং শাস্তিদাতা হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হওয়া সত্ত্বেও – বিচারবিভাগের মসৃণভাবে কাজ করার ভাবনাকেই তুলে ধরা হয় । যদিও 1971 সালে একটা নতুন আইন হয়, যেখানে অবমাননার ক্ষমতা ও পদ্ধতির কথা বলা হয় । আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিবাদীপক্ষ এবং আদালত অবমাননার মামলাগুলিতে ‘সত্য’কে রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয় । তা সত্ত্বেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েই চলে । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকার সময়, বিচারপতি এএস আনন্দ বলেছিলেন, "পাবলিক বডির দায়িত্ব যাঁরা সামলান, তাঁদের জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ থাকা উচিত । যেহেতু এধরণের পরামর্শকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, সংবিধান পর্যালোচনা কমিটি সুপারিশ করেছিল যে, ধারা 19(2) মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাধা দেয়, তাকে সংশোধন করা উচিত । 1992 সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত রায়, যে কাউকে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, যদি তিনি কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া তাঁর সমালোচনা করার অধিকার প্রয়োগ করেন । মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় হওয়ায় 2013 সালে অবমাননা আইনকে নাকচ করে ব্রিটেন । 2016 সালে ব্রেক্সিটে রায় দেওয়া তিন বিচারককে ডেইলি মেল ‘গণশত্রু’ আখ্যা দিলেও, পরিণতমনস্ক বিচারব্যবস্থা তাকে আদালত অবমাননা হিসেবে দেখেনি । একমাত্র কোনও ঝুঁকি থাকলে তবেই চাবুক ব্যবহারের মতো পরিণতমনস্কতা আদালতের মর্যাদায় বাড়ায় ।

36 বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায়, “দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে আদালতগুলিকে...তাদের প্রাথমিক কর্তব্য হল, মতপ্রকাশকে খর্ব করতে সরকার যে আইন ও পদক্ষেপ করেছে, তাকে ওভাররুল করা” — সংবিধানের ভাবনাকেই তুলে ধরে । সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে টুইট করার জন্য আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে – নিজেরই ঘোষিত ভাবনাকে নাকচ করেছে । সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, “যুক্তিপূর্ণ সমালোচনা এবং একটা ব্যবস্থার সুনামকে বেপরোয়াভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে”—এটা একেবারে সঠিক । সন্দেহ এখানেই আসে যে, “বিচারব্যবস্থার সুনাম কি এতটাই দুর্লভ যে সমালোচনা করে টুইট করলেই তা নষ্ট হবে?” 1952 সালে সাংবিধানিক ট্রাইব্যুনাল এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, সমালোচনাকে স্তব্ধ করে আদালত কখনও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে না । একদিকে বিচারবিভাগের মর্যাদাকে তুলে ধরার প্রয়োজন যেমন রয়েছে, অন্যদিকে সংবিধানের দেওয়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ‘এমনকী যুক্তিপূর্ণ বিধিনিষেধ সমেত’ । উদার এবং ভারসাম্যযুক্ত জবাব আদালতের মর্যাদা ও সম্মানকে তুলে ধরে । 1978 সালের মামলায় বিচাপতি কৃষ্ণ আইয়ার বলেছিলেন, “যখন হাতি (এখানে বিচারব্যবস্থা) মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলে তখন কুকুররা ঘেউ ঘেউ করে । আমরা বার বার এইধরণের নির্বোধ সমালোচনার জবাব দেব না ।” মালগাভোনকর নীতি নামে পরিচিত এই মহান ভাবনা এখন বিচারবিভাগের কাছে পথপ্রদর্শক আলো হতে পারে ।

আদালত অবমাননা আইন প্রথম তৈরি হয় 1926 সালে ব্রিটিশ আমলে । 1949 সালে ভারতের সংবিধানে একে অন্তর্ভূক্ত করার প্রেক্ষিতে, সংবিধান সভায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে একটি বিতর্ক হয়েছিল । অবমাননা আইনগুলির অপব্যবহার এবং বিচারক একাধারে ভুক্তভোগী এবং শাস্তিদাতা হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হওয়া সত্ত্বেও – বিচারবিভাগের মসৃণভাবে কাজ করার ভাবনাকেই তুলে ধরা হয় । যদিও 1971 সালে একটা নতুন আইন হয়, যেখানে অবমাননার ক্ষমতা ও পদ্ধতির কথা বলা হয় । আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিবাদীপক্ষ এবং আদালত অবমাননার মামলাগুলিতে ‘সত্য’কে রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয় । তা সত্ত্বেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়েই চলে । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকার সময়, বিচারপতি এএস আনন্দ বলেছিলেন, "পাবলিক বডির দায়িত্ব যাঁরা সামলান, তাঁদের জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ থাকা উচিত । যেহেতু এধরণের পরামর্শকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, সংবিধান পর্যালোচনা কমিটি সুপারিশ করেছিল যে, ধারা 19(2) মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাধা দেয়, তাকে সংশোধন করা উচিত । 1992 সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত রায়, যে কাউকে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, যদি তিনি কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া তাঁর সমালোচনা করার অধিকার প্রয়োগ করেন । মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় হওয়ায় 2013 সালে অবমাননা আইনকে নাকচ করে ব্রিটেন । 2016 সালে ব্রেক্সিটে রায় দেওয়া তিন বিচারককে ডেইলি মেল ‘গণশত্রু’ আখ্যা দিলেও, পরিণতমনস্ক বিচারব্যবস্থা তাকে আদালত অবমাননা হিসেবে দেখেনি । একমাত্র কোনও ঝুঁকি থাকলে তবেই চাবুক ব্যবহারের মতো পরিণতমনস্কতা আদালতের মর্যাদায় বাড়ায় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.