খান ইউনিস (গাজা), 9 নভেম্বর: হামাস জঙ্গিরা ক্রমশ শহরের কাছাকাছি চলে আসায় গাজা শহরে ইজরায়েলের আক্রমণের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে ৷ গাজা শহরের একেবারে মাঝখানে রয়েছে শিফা হাসপাতাল ৷ ওই হাসপাতালের ডিরেক্টর জানিয়েছেন যে সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে ইজরায়েলের সেনা ৷ হামাসকে একেবারে নিকেশ করতে গাজা শহরে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়াই এখন ইজরায়েলের উদ্দেশ্য ৷
শিফা হাসপাতালে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন ৷ ইজরায়েলের দাবি, সেই আশ্রিতদের ঢাল করে হামাসের শীর্ষ নেতারা সেখানে লুকিয়ে রয়েছে ৷ তাই তাদের খুঁজে বের করতে মরিয়া ইজরায়েলের সেনা ৷ যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইজরায়েলের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে ৷ তার পরও আক্রমণ চলছে ৷ সকালের দিকে হাসপাতালের কাছেই একটা শেল এসে পড়ে ৷ তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন ৷
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে যে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কাজ করতে করতে চিকিৎসক ও নার্সেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন ৷ পাশাপাশি ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রীও অপ্রতুল হয়ে পড়ছে ৷ ফলে তাঁরাও বাইরে থেকে সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছেন ৷
মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন করে আধিকারি এবং এক পশ্চিমী কূটনীতিক দাবি করেছেন যে প্রতিদিন গাজার অবস্থা আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে ৷ এখন সেখানে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য দিনতিনেকের যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করছেন ৷ সেই প্রচেষ্টা মধ্যস্থতাকারীরা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ যাতে তিনদিন যুদ্ধবিরতি করানো যায় ৷ সেই সুযোগে গাজায় ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হয় ৷ পাশাপাশি হামাস যাঁদের বন্দি করে রেখেছে, তাঁদের অনেককে মুক্ত করা যায় ৷ তাছাড়া সেখানে জ্বালানি তেলও পাঠানো প্রয়োজন ৷ যাতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা যায় ৷ কারণ, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কার্যত অন্ধকারে ডুবেছে গাজা উপত্যকা ৷
আরও পড়ুন: সাময়িক বিরতি নাকি যুদ্ধবিরতি, দ্বিধায় আটকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
ইজরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে এখনও 240 জন বন্দি ৷ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে ওই পণবন্দিদের ছাড়া হলে সাময়িক যুদ্ধবিরতি করা যেতে পারে ৷ এদিকে বৃহস্পতিবার প্যারিসে পশ্চিমী বিশ্ব ও আরব দেশগুলির আধিকারিকরা এক বৈঠক করেন ৷ সেখানে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করেন ৷ ইজরায়েলের মিত্র দেশের মধ্যে কয়েকটিও এখন গাজায় ত্রাণ পাঠানোর বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার এই নিয়ে মধ্যস্থতা করে যাচ্ছে ৷
সম্প্রতি গাজার উত্তর অংশে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের নিয়ে গিয়েছিল ইজরায়েল ৷ সেখানে বাড়ি-ঘরের ধ্বংসস্তূপ চোখে পড়েছে ওই সাংবাদিকদের ৷ উত্তর দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণে চলে গিয়েছেন ৷ সেখানে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে কোনোরকমে রয়েছেন ৷ কেউ আবার আশ্রয় নিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের তৈরি করে দেওয়া স্কুলগুলিতে ৷ ফলে সেখানকার পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে ৷
গাজায় প্রায় 2.3 মিলিয়ন মানুষের বাস ৷ সেখান থেকে আগেই অনেকে চলে গিয়েছেন ৷ বুধবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও গাজা শহর থেকে রোজ 50 হাজার মানুষ দক্ষিণের দিকে চলে যাচ্ছেন ৷ রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া তথ্য থেকেই এই বিষয়টি সামনে এসেছে ৷ তাছাড়ায় গাজায় এখনও পর্যন্ত সাড়ে 10 হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ প্রায় 2300 বাসিন্দা যুদ্ধের জেরে তৈরি হওয়া ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছে বলেও গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দাবি ৷
ইজরায়েলের দাবি, তারা শুধু হামাসের জঙ্গিদেরই মেরেছে ৷ সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর দায় তাদের নয় ৷ হামাসের জন্যই সেখানকার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ তারা আরও জানিয়েছে, গত 7 অক্টোবর হামাসের হামলায় ইজরায়েলে 1400 মানুষ নিহত হয়েছেন ৷ তাছাড়া গাজায় ইজরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর হামাসের হাতে তাদের 32 জন সেনা নিহত হয়েছে ৷
সংবাদসংস্থা - এপি
আরও পড়ুন: ইজরায়েলে হামাসের হামলা, জঙ্গিগোষ্ঠীর অস্ত্রসম্ভারের ভিডিয়ো প্রকাশ আইডিএফের