লন্ডন, 24 অক্টোবর: ব্রিটেনের শাসকদল কনজারভেটিভ পার্টি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে (Prime Minister of Britain) ঋষি সুনাকের (Rishi Sunak) নাম ঘোষণা করল, তা শুধুমাত্র 42 বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রাজনীতিকের কাছে দীপাবলির সবথেকে বড় উপহারই ছিল না, বরং এই ঘোষণা ছিল এক অতি প্রাচীন প্রবাদ বাক্যের জলজ্য়ান্ত প্রমাণ ! কথায় বলে, বাস্তব কল্পনার থেকেও চমকপ্রদ হয় ৷ ঋষি সুনাক যেন আরও একবার সেটাই করে দেখালেন ৷
খুব বেশি হলে নয় সপ্তাহ আগের ঘটনা ৷ সদ্য প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের কাছে 2 হাজার ভোটে হেরেছিলেন ঋষি ৷ সেই সময় তাঁর অতি বড় অনুগামীও ভাবেননি, ক'দিন পরই ব্রিটেনের প্রশাসনিক প্রধানের পদে বসবেন ভারতীয় ধনকুবের নারায়ণ কৃষ্ণমূর্তির জামাই ৷ কিন্তু, ঘটনাচক্রে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই লিজ পদত্যাগ করেন ৷ বরিস জনসন ঋষি সুনাককে টক্কর দেওয়ার কথা ভাবলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যান ৷ ফলে ঋষির প্রধানমন্ত্রী হওয়া ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা ৷
আরও পড়ুন: দীপাবলিতেই কি ব্রিটেনে ঋষি-রাজ ? তুঙ্গে জল্পনা
তবে, আপাতদৃষ্টিতে রূপকথার গল্প বলে মনে হলেও ঋষির সাফল্যের পথে কিন্তু কম কাঁটা ছিল না ৷ তিনি ব্রিটেনের 57তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন ৷ তাঁর পূর্বসূরিরা ভারতের পঞ্জাবের বাসিন্দা হলেও ঋষির জন্ম হয় বিলেতেই, ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে ৷ তাঁর মা একজন স্বাস্থ্যকর্মী ৷ বাবা চিকিৎসক ৷ উচ্চশিক্ষার জন্য ঋষিকে অনেক সংঘর্ষ করতে হয়েছে ৷ ঋষির ঠাকুর্দা ও ঠাকুমা ভারত থেকে প্রথমে পূর্ব আফ্রিকা এবং পরে সেখান থেকে ব্রিটেনে চলে আসেন ৷ পরবর্তীতে তাঁরা এখানেই পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ৷
উইনচেস্টার কলেজের ছাত্র ছিলেন ঋষি ৷ পরবর্তীতে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজে তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি ৷ এছাড়াও ক্য়ালিফোর্নিয়ার স্ট্য়ানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ডিগ্রি রয়েছে ঋষির ঝুলিতে ৷ স্ট্য়ানফোর্ডে পড়াকালীনই নারায়ণ মূর্তির মেয়ে আকাঙ্ক্ষা মূর্তির সঙ্গে আলাপ হয় ঋষির ৷ সেই আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে ৷ ক্রমে তা পরিণতি পায় প্রেম এবং পরিণয়ে ৷ 2009 সালে এই জুটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় ৷ ঋষি-আকাঙ্ক্ষার দুই মেয়ে রয়েছে ৷ তাদের নাম অনুষ্কা এবং কৃষ্ণা ৷
গত দু'বছরে ঋষি তাঁর জীবনে অনেক ওঠা-পড়া দেখেছেন ৷ তিনি ব্রিটিশ সরকারের চতুর্থ কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে রাজকোষের কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন ৷ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় এই পদটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ৷ 2020 সালে মাত্র 39 বছর বয়সে ব্রিটেনের সবথেকে আকর্ষণীয় এমপি হওয়ার তালিকায় নাম ওঠে তাঁর এবং তিনি দেশের 22তম ধনী ব্যক্তির স্বীকৃতি পান ৷ সেই সময় ঋষি এবং তাঁর স্ত্রীর মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল 730 মিলিয়ন পাউন্ড ! প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের বাসিন্দা হলেও ঋষির স্ত্রী আকাঙ্ক্ষা আদতে ভারতীয় নাগরিক ৷ ফলে ব্রিটিশ নিয়ম অনুসারে, করপ্রদানের ক্ষেত্রে তিনি অনেক সুবিধা পান ৷ এমন এক মহিলাকে বিয়ে করার জন্য সম্প্রতি ঋষিকে বহু মানুষের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ এছাড়া, বরিস জনসনের পার্টি কেলেঙ্কারিতেও নাম জড়িয়েছিল ঋষি সুনাকের ৷ তাতেও তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছিল ৷
কিন্তু, এত সমালোচনা সত্ত্বেও আজ সেই ঋষি সুনাকই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদে বসলেন ৷ মাত্র 42 বছর বয়সে এক গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তিনি ৷ শেষ 200 বছরে ঋষিই হলেন ব্রিটেনের কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ৷ একইসঙ্গে, সর্বকালের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বটে ৷ তবে, এবার তাঁর সামনে রয়েছে দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চ্যালেঞ্জ ৷ সেই দায়ভার কীভাবে সামলান নারায়ণ কৃষ্ণমূর্তির জামাই, সেদিকেই তাকিয়ে তামাম দুনিয়া ৷