ETV Bharat / international

India-China Relations: গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই, স্পষ্ট করলেন জয়শঙ্কর

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস নিউইয়র্কে আলোচনা সভায় দিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ৷ তিনি 1962 সালের যুদ্ধ এবং তারপরে সামরিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন ৷ তাঁর কথায়, 1975 সালের পরে সীমান্তে কখনও যুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ।

External Affairs Minister S Jaishankar
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 27, 2023, 12:44 PM IST

Updated : Sep 27, 2023, 3:32 PM IST

নিউইয়র্ক, 27 সেপ্টেম্বর: 2020 সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় নেই এবং এটি সম্ভবত মধ্যমেয়াদি সমস্যার চেয়ে দীর্ঘ ৷ নিউইয়র্কে এমনটাই বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর । কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে আলোচনার সময় ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ৷ সেই প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর জানান, বিশ্বের দু'টি বৃহত্তম দেশের মধ্যে যদি মতের অমিল ও উত্তেজনা থাকে তবে তার ফল অন্য দেশকেও ভোগ করতে হয় ।

বিদেশমন্ত্রী বলেন, "চিনের সঙ্গে মোকাবিলা করার আনন্দের মধ্যে একটি বিষয় হল, যে তারা কখনই আপনাকে পুরোপুরি বলবে না তারা কেন এই কাজ করছে । তাই প্রায়শই এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হয় এবং সর্বদা সেখানে কিছু রহস্য থাকে ৷ এমন একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা খুবই কঠিন, যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে ৷ তাই আপনি যদি গত তিন বছরের দিকে তাকান তবে দু'দেশের সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ৷"

তাঁর কথায়, দুদেশের যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, পরিদর্শন হচ্ছে না । উচ্চস্তরের সামরিক উত্তেজনা রয়েছে । এটি ভারতীয়দের মধ্যে চিন সম্পর্কে ধারণাকেও প্রভাবিত করেছে । তিনি বলেন, "সুতরাং আমি মনে করি একটি তাৎক্ষণিক সমস্যা ৷ পাশাপাশি একটি মধ্যমেয়াদি সমস্যা এবং সম্ভবত মধ্যমেয়াদি সমস্যার চেয়ে দীর্ঘতর ৷"

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রসংঘে জয়শঙ্করের মুখে 'ভারত', কানাডার নাম না-করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দিলেন লড়াইয়ের বার্তা

এস জয়শঙ্কর দিল্লি এবং বেজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং জানান যে এটি কখনই সহজ ছিল না । তিনি বলেন, "ভারত-চিনের মধ্যে 1962 সালে একটি যুদ্ধ হয়েছিল । এর পরে সামরিক ঘটনা ঘটেছিল । 1975 শেষবার ছিল ৷ 1975 সালের পরে সীমান্তে কখনও যুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ৷ 1988 সালে ভারত চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও স্বাভাবিক করেছিল । এরপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি চিনে গিয়েছিলেন ৷"

জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেছেন যে 1993 এবং 1996 সালে ভারত সীমান্ত স্থিতিশীল করার জন্য চিনের সঙ্গে দুটি চুক্তি করেছিল, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। সেই চুক্তি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, "ভারত বা চিন কেউই সৈন্য নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করবে না এবং উভয় পক্ষ যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আসে তবে এটি অপর পক্ষকে অবহিত করবে । কিন্তু এটি লঙ্ঘন করা হয়েছিল তা স্পষ্ট ৷" তিনি জানান, এরপর পরবর্তী চুক্তি অনুযায়ী, সীমানা অঞ্চলে উভয় দিকের সৈন্যরা তাদের মনোনীত সামরিক ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসবে, তারা টহল দেবে এবং তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসবে । যদি তারা এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটায় তবে অপরপক্ষ কীভাবে আচরণ করবে সে সম্পর্কে খুব স্পষ্ট নিয়ম ছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল ।

2020 সালের আগে পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী সব ঠিকঠাক চলেছে ৷ তবে 2020 সালে যখন ভারতে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এবং লকডাউন চলছে, বিদেশমন্ত্রী বলেন, "সেসময় আমরা দেখেছি যে চিনা সৈন্যরা খুব বড় সংখ্যায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ৷ সুতরাং, এই সমস্ত কিছুর মাঝখানে আমাদের আসলে সংঘবদ্ধ করতে হয়েছিল এবং পালটা সেনা মোতায়েন করতে হয়েছিল ৷ যা আমরা করেছি । তারপরে আমাদের এমন একটি পরিস্থিতি ছিল যেখানে আমরা চিন্তিত ছিলাম যে চিনা সৈন্যরা এখন খুব কাছাকাছি এসে গিয়েছে ৷ তবে 2020 সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে আমরা চিনকে সতর্ক করেছিলাম যে এই ধরনের পরিস্থিতি সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং নিশ্চিতভাবে তা হয়েছে ।"

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকেই কি কানাডাকে জবাব দেবে ভারত, নজর জয়শঙ্করের ভাষণে

জয়শঙ্কর জানান, চিনের তরফে এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ৷ তবে সেগুলির কোনওটিই যুক্তিযুক্ত নয় । তারপর থেকে চিনের থেকে ভারত নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে । তিনি বলেন, "আমরা আংশিকভাবে সফল হয়েছি।"

(সংবাদ সংস্থা-পিটিআই)

নিউইয়র্ক, 27 সেপ্টেম্বর: 2020 সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় নেই এবং এটি সম্ভবত মধ্যমেয়াদি সমস্যার চেয়ে দীর্ঘ ৷ নিউইয়র্কে এমনটাই বললেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর । কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে আলোচনার সময় ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ৷ সেই প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্কর জানান, বিশ্বের দু'টি বৃহত্তম দেশের মধ্যে যদি মতের অমিল ও উত্তেজনা থাকে তবে তার ফল অন্য দেশকেও ভোগ করতে হয় ।

বিদেশমন্ত্রী বলেন, "চিনের সঙ্গে মোকাবিলা করার আনন্দের মধ্যে একটি বিষয় হল, যে তারা কখনই আপনাকে পুরোপুরি বলবে না তারা কেন এই কাজ করছে । তাই প্রায়শই এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হয় এবং সর্বদা সেখানে কিছু রহস্য থাকে ৷ এমন একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা খুবই কঠিন, যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে ৷ তাই আপনি যদি গত তিন বছরের দিকে তাকান তবে দু'দেশের সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক অবস্থায় নেই ৷"

তাঁর কথায়, দুদেশের যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, পরিদর্শন হচ্ছে না । উচ্চস্তরের সামরিক উত্তেজনা রয়েছে । এটি ভারতীয়দের মধ্যে চিন সম্পর্কে ধারণাকেও প্রভাবিত করেছে । তিনি বলেন, "সুতরাং আমি মনে করি একটি তাৎক্ষণিক সমস্যা ৷ পাশাপাশি একটি মধ্যমেয়াদি সমস্যা এবং সম্ভবত মধ্যমেয়াদি সমস্যার চেয়ে দীর্ঘতর ৷"

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রসংঘে জয়শঙ্করের মুখে 'ভারত', কানাডার নাম না-করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দিলেন লড়াইয়ের বার্তা

এস জয়শঙ্কর দিল্লি এবং বেজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং জানান যে এটি কখনই সহজ ছিল না । তিনি বলেন, "ভারত-চিনের মধ্যে 1962 সালে একটি যুদ্ধ হয়েছিল । এর পরে সামরিক ঘটনা ঘটেছিল । 1975 শেষবার ছিল ৷ 1975 সালের পরে সীমান্তে কখনও যুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ৷ 1988 সালে ভারত চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও স্বাভাবিক করেছিল । এরপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি চিনে গিয়েছিলেন ৷"

জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেছেন যে 1993 এবং 1996 সালে ভারত সীমান্ত স্থিতিশীল করার জন্য চিনের সঙ্গে দুটি চুক্তি করেছিল, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। সেই চুক্তি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, "ভারত বা চিন কেউই সৈন্য নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করবে না এবং উভয় পক্ষ যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য নিয়ে আসে তবে এটি অপর পক্ষকে অবহিত করবে । কিন্তু এটি লঙ্ঘন করা হয়েছিল তা স্পষ্ট ৷" তিনি জানান, এরপর পরবর্তী চুক্তি অনুযায়ী, সীমানা অঞ্চলে উভয় দিকের সৈন্যরা তাদের মনোনীত সামরিক ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসবে, তারা টহল দেবে এবং তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসবে । যদি তারা এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটায় তবে অপরপক্ষ কীভাবে আচরণ করবে সে সম্পর্কে খুব স্পষ্ট নিয়ম ছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল ।

2020 সালের আগে পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী সব ঠিকঠাক চলেছে ৷ তবে 2020 সালে যখন ভারতে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এবং লকডাউন চলছে, বিদেশমন্ত্রী বলেন, "সেসময় আমরা দেখেছি যে চিনা সৈন্যরা খুব বড় সংখ্যায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ৷ সুতরাং, এই সমস্ত কিছুর মাঝখানে আমাদের আসলে সংঘবদ্ধ করতে হয়েছিল এবং পালটা সেনা মোতায়েন করতে হয়েছিল ৷ যা আমরা করেছি । তারপরে আমাদের এমন একটি পরিস্থিতি ছিল যেখানে আমরা চিন্তিত ছিলাম যে চিনা সৈন্যরা এখন খুব কাছাকাছি এসে গিয়েছে ৷ তবে 2020 সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে আমরা চিনকে সতর্ক করেছিলাম যে এই ধরনের পরিস্থিতি সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং নিশ্চিতভাবে তা হয়েছে ।"

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন থেকেই কি কানাডাকে জবাব দেবে ভারত, নজর জয়শঙ্করের ভাষণে

জয়শঙ্কর জানান, চিনের তরফে এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ৷ তবে সেগুলির কোনওটিই যুক্তিযুক্ত নয় । তারপর থেকে চিনের থেকে ভারত নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে । তিনি বলেন, "আমরা আংশিকভাবে সফল হয়েছি।"

(সংবাদ সংস্থা-পিটিআই)

Last Updated : Sep 27, 2023, 3:32 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.