নয়াদিল্লি, 26 অক্টোবর: হামাসের হামলার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের 'মিশন গাজা'। অক্টোবরের 7 তারিখে ইজরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলা কেড়ে নিয়েছিল 1400 ইজরায়েলির প্রাণ । পালটা ইজরায়েলের হামলায় গাজা বিধ্বস্ত । মৃত ছাড়িয়েছে চার হাজার । গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও হামাসকে সমূলে উৎপাটন করার যে নীতি নেতানিয়াহু সরকার নিয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে আর কতদিন এই রক্তপাত ? গাজার বিরুদ্ধে যে স্থল অভিযানের হুমকি দিয়ে চলেছে ইজরায়েল, তা বাস্তবায়িত হলে কতটা বিপদ ঘনাবে গাজার আকাশে? প্রশ্ন ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে ।
টাইমস অফ ইজরায়েল সংবাদ সূত্রের খবর, আপাতত আমেরিকার হস্তক্ষেপে ইজরায়েল গাজার বিরুদ্ধে স্থলঅভিযান নিয়ে ভাবনা-চিন্তায় । জানা যাচ্ছে, বাইডেনের অনুরোধেই স্থলাভিযান নিয়ে এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না নেতানিয়াহু । যদিও এর নেপথ্যের কারণ একেবারই প্রতিরক্ষা খাতের কথা ভেবেই। ওযাশিংটন সূত্রের খবর, মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলিতে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত । কারণ, ইতিমধ্যে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে সিরিয়া ও ইরাকে পালটা হামলা চালায় ইরান । এর জেরে দুই দেশে মোতায়েন মার্কিন সেনারা আহত হয়েছেন । সংখ্যাটা দুই দেশ মিলিয়ে 20 ছাড়িয়েছে । তারপর থেকেই চিন্তায় পেন্টাগন বলে খবর।
আরও পড়ুন:ইজরায়েলি বিমান হানায় গাজায় নিহত আল জাজিরার সাংবাদিকের পরিবারের চার সদস্য
গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের স্থল অভিযান নিয়ে জলঘোলা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে, হামাসের অধীনে থাকা ইজরায়েলি পণবন্দিরাও । এঁদের মধ্যে চারজন মুক্তি পেলেও এখনও বন্দি অন্তত 200 জন । এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে না, পণবন্দিদের কোথায় লুকিয়ে রেখেছে হামাস । যদি, গাজার প্রত্যন্ত সুড়ঙ্গে হামাস জঙ্গিরা পণবন্দিদের লুকিয়ে রাখে, তাহলে ইজরায়েলি সেনাদের কাছে তা বড় চ্যালেঞ্জ । কঠিন এই সুড়ঙ্গপথ খুঁজে পাওয়াই দুঃসহ হবে নেতানিয়াহু সেনাদের কাছে বলে মনে করা হচ্ছে । সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এখনও স্থলাভিযান নিয়ে ভাবনা-চিন্তায় ইজরায়েল ।
ইজরায়েল নিয়ে বেশ জটে খোদ ওয়াশিংটনও । যেখানে গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও এখনও স্পষ্ট নয় ইজরায়েলের লক্ষ্য। অন্তত, তথ্য এই দাবিই করছে । ওয়াশিংটন সূত্রের খবর, গাজার বিরুদ্ধে স্থল অভিযান প্রসঙ্গে জেরুজালেমকে চিন্তা করার কথা বলা হচ্ছে দফায় দফায় । যদিও, ইজরায়েলের আধিকারিকদের সাফ কথা, আপাতত ভবিষ্যতের কথা ভাবা হচ্ছে না । হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করাই লক্ষ্য ।
পরিস্থিতি ভয়াবহ। পরবর্তী আরও বেসামাল। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ এশীয় কূটনীতি বিশেষজ্ঞ এস স্যামুয়েল সি রাজীবের সঙ্গে কথা বলল ইটিভি ভারত। তিনি জানালেন, ইজরায়েল গাজার বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধের পরিকল্পনায় । ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধ কবে শেষ হবে বলা কঠিন । তাঁর কথায়, ইতিমধ্যেই গাজার বিরুদ্ধে স্থলাভিযানের জন্য মার্কিন সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে পরামর্শে ইজরায়েল । সুতরাং, স্থলাভিযানের দিকেই যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার ।
আরও পড়ুন:ইজরায়েল নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে, গাজায় স্থলাভিযান প্রসঙ্গে বাইডেন-বার্তা
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে পণবন্দিদের ভবিষ্যৎ ঠিক কী ?
ইজরায়েলের মন্ত্রীদের বক্তব্য, বড় স্বার্থের কাছে ইজরায়েলিদের হামাসের হাতে বন্দি হওয়া নাকি 'ছোট ঘটনা' । যদিও এই বক্তব্যের জন্য তাঁরা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সমালোচিতও হয়েছেন । রাজীবের কথায়, হামাস সহজে পণবন্দিদের মুক্ত করবে না। পালটা ইজরায়েলের গাজার বিরুদ্ধে সেনা আগ্রাসনও বাড়বে । যার খেসারত দিতেই হবে গাজার সাধারণ মানুষ থেকে হামাসের অধীনে থাকা পণবন্দিদের।
বিশেষজ্ঞ রাজীব জানাচ্ছেন, একবার গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলের স্থলাভিযান শুরু হলে কোল্যাটেরাল ড্যামেজ বা সমান্তরাল ক্ষতিকে কেউ ঠেকাতে পারবে না । গাজা আরও বিধ্বস্ত হওয়ার পথে এগোবে । এক অসম্ভব অশনির সংকেত ইজরায়েল-গাজা ঘিরে।