লন্ডন, 24 সেপ্টেম্বর: জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে মাউই থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত অঞ্চলগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে দাবানলের জন্য ৷ সেখানকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)কে কাজে লাগানো হচ্ছে ৷ দাবানল তৈরি ও তার ধোঁয়ার লক্ষণগুলির জন্য এলাকা স্ক্যান করতে ক্যামেরা ব্যবহার করছে এআই ৷ একটি জার্মান কোম্পানি মহাকাশ থেকে এই আগুন সনাক্ত করতে স্যাটেলাইট তৈরি করছে ৷ মাইক্রোসফট এআই মডেলগুলি ব্যবহার করছে পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডটি কোথায় হতে পারে, তা জানার জন্য ৷
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রধান অগ্নিনির্বাপক সংস্থা এই গরমে এআই সিস্টেমের পরীক্ষা শুরু করেছে ৷ হাজারটিরও বেশি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ৷ যা ধোঁয়া খুঁজে সেই জায়গা চিহ্নিত করবে ৷ বাতাসের অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করতে এবং জরুরি কমান্ড সেন্টারকে সতর্ক করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷ যা দেখে কর্মীরা নিশ্চিত করবেন এটি আসলে ধোঁয়া না বাতাসে থাকা অন্য কিছু ৷ এটি ইতিমধ্যেই সাহায্য করতে শুরু করেছে ৷ একজন ব্যাটেলিয়ন প্রধান মাঝরাতে ধোঁয়ার সতর্কতা পেয়েছিলেন তাঁর সেলফোনে ৷ তারপরই তিনি সান দিয়েগোর কমান্ড সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন ওই প্রত্যন্ত এলাকায় ৷
এই ঘটনায় প্রেরকরা বলেছেন, যদি তাদের সতর্ক না-করা হত তাহলে আরও বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত ৷ কারণ পরের দিন সকাল পর্যন্ত এটি লক্ষ্য করা যেত না ৷ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, "ক্যামেরাগুলি কম্পিউটার ভিশন মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে তৈরি ৷ যা হল এক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৷ তাদের ধোঁয়া সনাক্ত করতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা হয় ৷ ধোঁয়ার ছবি ও ধোঁয়া নয় এমন ছবি দেখিয়েও তাদের প্রশিক্ষণ দিই আমরা ৷"
বনের আগুনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রযুক্তি সত্যিই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ৷ মাইক্রোসফটের প্রধান বিজ্ঞানী হুয়ান লাভিস্তা ফেরেস বলেছেন, "আগুন থেকে ধোঁয়া সনাক্ত করতে এআই ব্যবহার অপেক্ষাকৃত সহজ ৷ যা সহজ নয়, তা হল পর্যাপ্ত জায়গাজুড়ে যথেষ্ট ক্যামেরা থাকা ৷" তিনি উত্তর কানাডার বিস্তীর্ণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন যেগুলি এই গ্রীষ্মে পুড়ে গিয়েছে দাবানলে ৷ মাইক্রোসফটের ফেরেসের দল আগুন কোথায় শুরু হতে পারে তা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য এআই মডেলগুলি তৈরি করেছে ৷ তাঁরা মডেলটিকে জলবায়ু এবং ভূ-স্থানিক ডেটা-সহ আগে পুড়ে যাওয়া এলাকার মানচিত্র সমস্ত কিছু বুঝিয়েছেন ৷ তবে এই সিস্টেমটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে ৷ এটি বাজের মতো এলোমেলো ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দিতে পারে না ৷ তবে এটি আবহাওয়া ও জলবায়ুর তথ্যের মাধ্যমে নিদর্শন সনাক্ত করতে পারে ৷
আরেকটি জার্মান কোম্পানিও স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করছে ৷ ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ও এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির সুবিধা নিয়ে অরোরা টেক পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 550 কিলোমিটার (340 মাইল) কম কক্ষপথে একটি জুতোর বাক্সের আকারের দুটি ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ৷ মিউনিখ ভিত্তিক এই সংস্থাটি পরের বছর আরও 8টি স্যাটেলাইট পাঠাতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত 100টি মহাকাশে পাঠানোর উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে ৷
অরোরা টেক তার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কয়েক সপ্তাহ পরে উত্তর আলবার্টার কেগ নদীর কাছে একটি আগুন সনাক্ত করে ৷ যেখানে এই গ্রীষ্মে বারবার বোরিয়াল বনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগুন জ্বলছে ৷ এই স্যাটেলাইটে অ্যালগরিদম রয়েছে যা আরও দ্রুত আগুন সনাক্ত করতে খুব দক্ষ, বলছেন সিইও থমাস গ্রুবলার ৷ বিধ্বংসী মেগাফায়ারের জন্ম দিতে পারে এমন ফ্লেয়ার-আপ সনাক্ত করতে এআই গাছপালা এবং আর্দ্রতার মাত্রাও বিবেচনা করে ৷ থমাসের কথায়,"যেহেতু আমরা ঠিক জানি আগুন কোথায় , তাই আমরা দেখতে পারি কীভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়বে ৷ কোন আগুন একদিনে বড় আগুন হবে আর কোনটা আপনিই থেমে যাবে তাও বোঝা যায় ৷"