রাফাহ (গাজা), 10 অক্টোবর: অন্ধকার হওয়ার পরেই সাইরেন বেজে উঠল ৷ এর মানে এখুনি বাড়িঘর খালি করে অন্যত্র চলে যেতে হবে ৷ ইজরায়েল সেনা গাজায় ঢুকে হামাসদের ঘাঁটিতে অভিযান চালাচ্ছে ৷ আকাশপথে হামলা হানার আগে আমজনতাকে সতর্ক করল ইজরায়েল সেনা ৷ যাতে সেনায় সেনায় যুদ্ধে তাদের প্রাণ না-যায় ৷ কিন্তু হল কি ? ছাড় পেলেন না আবু কুয়াতা ৷
গাজার দক্ষিণে মিশর সীমান্তে তাঁর বাড়ি ৷ চারতলা বাড়ির একতলায় পরিবার নিয়ে কোনওরকমে আশ্রয় নিয়েছিলেন 57 বছরের প্রৌঢ় আবু ৷ সঙ্গে আরও আত্মীয়-স্বজন রয়েছে ৷ তাঁর প্রতিবেশীর বাড়িতে ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর আক্রমণের কোনও আঁচ পড়ল না ৷ এদিকে হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল আবুর বাড়ি ৷
আক্রমণ চালিয়েছে ইজরায়েল সেনা ৷ এক মুহূর্তে পরিবারের 19 জন প্রাণ হারালেন ৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবু কুয়াতার স্ত্রী এবং ভাইবোনেরা ৷ আবুর প্রতিবেশীদের মধ্যে 5 জনেরও মৃত্যু হয়েছে ইজরায়েলি হামলায় ৷ তারা ত্রাণশিবিরের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ ভিতরে এত ভিড় যে, তিল ধারণের জায়গা ছিল না ৷ আর সেই সময়ে আক্রমণ চালিয়েছে ইজরায়েল ৷
শনিবার ভোর 6.30 টা নাগাদ একেবারে হঠাৎ ইজরায়েলের উপর আক্রমণ চালায় প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস ৷ রবিবার রাত পর্যন্ত একের পর এক রকেট হামলায় 700 জনেরও বেশি নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ৷ আহতের সংখ্যা অগুনতি ৷ বহু ইজরায়েল নাগরিককে বন্দিও করেছে হামাস জঙ্গিরা ৷ তবে ইজরায়েলের আয়রন ডোম পদ্ধতি বহু রকেটের আছড়ে পড়া আটকেছে বলে জানা গিয়েছে ৷
এর জবাবে শনিবারই পালটা আঘাত হানে ইজরায়েল ৷ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ এরপর থেকে গাজার বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়ছে ইজরায়েলি রকেট ৷ বহুতল আবাসনগুলি তাসের ঘরের মতো গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ৷
ইজরায়েলের সামরিক দফতর জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতেই তারা হামাসের কার্যালয়ে আক্রমণ শানিয়েছে ৷ একাধিক বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে ৷ কিন্তু আবু কোয়াতার বাড়িতে কেন হামলা চালাল ইজরায়েল, তা বুঝতে পারছেন না প্রৌঢ় ৷ তাঁর বাড়িতে তো কোনও জঙ্গি নেই ৷
তিনি জানান, তাঁর পরিবারকে তো সতর্ক করা হয়নি ৷ তাহলে তাঁরা বাড়িতেই থাকতেন না ৷ আবু বলেন, "এই বাড়িটা নিরাপদ ছিল ৷ মহিলা আর বাচ্চারা ছিল ৷ হঠাৎ চারদিক ধুলোয় ভরে গেল ৷ সবাই চিৎকার করতে শুরু করল ৷ কোথাও কোনও দেওয়াল নেই ৷ চারদিক খোলা ৷" এর উত্তর দেয়নি ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী ৷
ভূমধ্যসাগরের তীরে একটা ছোট্ট উপকূলীয় অঞ্চল গাজা ৷ 23 লক্ষ মানুষের বাস ৷ একদিকে ইজরায়েল আর অন্যদিকে মিশর তাদের পথ আটকে দিয়েছে ৷ এর আগেও ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে বহু নিরীহ প্যালেস্তাইন নাগরিকের প্রাণ গিয়েছে ৷ 2021 সালের সংঘর্ষে একই পরিবারের 22 জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে ৷
আবু কোয়াতা আর তাঁর প্রতিবেশীরা মৃতদের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ৷ প্রতিবেশীদের যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে গুরুতর জখম হয়েছেন ৷ এদের মধ্যে আছে শিশুরা ৷ ধ্বংসাবশেষের নীচ থেকে মিলছে একের পর এক মৃতদেহ ৷ আবু নিজে 14 জনের দেহ শনাক্ত করতে পেরেছেন ৷ চারজনের দেহ মর্গে রয়েছে ৷ বাকিদের দেহগুলি চেনা সম্ভব হয়নি ৷ একজনের দেহ পাওয়া যাচ্ছে না ৷
আরও পড়ুন: 'ইজরায়েলের উপর হামলা আকস্মিক, জানত না ইরান-হিজবুল্লাও', দাবি হামাসের উচ্চাধিকারিকের