ETV Bharat / international

Afghan Women Athletes: আকাশ আছে, ছোঁয়ার অধিকার নেই ! তালিবানের গরাদে আটক মহিলা অ্যাথলিটরা - Taliban

তালিবান প্রশাসন মেয়েদের খেলাধুলোতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ৷ দেশের কোথাও কোনও ভাবে কোনও মেয়ে যদি খেলাধুলো করে তো সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে যাবেন প্রতিনিধি ৷ তারপর কপালে জুটবে হয়রানি (Women Athletes cannot play in Afghanistan) ৷

Taliban
তালিবান
author img

By

Published : Jan 11, 2023, 3:51 PM IST

কাবুল, 11 জানুয়ারি: পায়ে বল আছে ৷ আকাশ আছে, কিন্তু তা উপর দিকে ছোড়ার অধিকার নেই ৷ তাও খেলতে হবে ৷ তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে, মায়ের পিটুনি, প্রতিবেশীদের উঁকিঝুঁকি এড়িয়ে নৌরা খেলতে যেত ৷ সে ফুটবল নিয়ে দৌড় দিত মাঠে ৷ এত বাধা পেরিয়েও তালিবান শাসনের কাছে হার মানতে হয়েছে নৌরাকে ৷ কারণ আফগানিস্তানে মেয়েদের খেলা বারণ ৷ না, কোনও খেলাই খেলতে পারবেন না মেয়ে, মহিলারা ৷ তালিবান প্রশাসন একবার জানতে পারলে আর রক্ষে নেই ৷ যাঁরা খেলার অপরাধ করেছেন, তাঁদের কপালে হয়রানি জুটেছে ৷

2021 সালের অগস্ট মাসে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয় ৷ তারপর থেকে অনেকে মেয়ের মতো নৌরার জীবনটা পালটে গিয়েছে ৷ তাঁর কথায়, "আমি আর সেই মানুষটা নেই ৷ তালিবানরা আসার পর, আমার মনে হয় আমি মরে গিয়েছি ৷" মেয়ে-মহিলারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখবেন ৷ পার্ক বা জিমে যেতে পারবেন না, ফতোয়া জারি করেছে তালিবান প্রশাসন ৷ সম্প্রতি তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরতে পারবে না ৷ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতেও মেয়েদের নিয়োগ বন্ধ ৷

20 বছরের এক মার্শিয়াল আর্টিস্টের মনে পড়ল 2021 সালের অগস্ট মাসের কথা ৷ তিনি কাবুলের স্পোর্টস হলে স্থানীয় মহিলাদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন ৷ অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের মধ্যে দিয়ে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ল, তালিবানরা কাবুল থেকে খুব একটা দূরে নেই ৷ সব মহিলা, মেয়েরা তাড়াতাড়ি হল ছেড়ে পালিয়ে গেল ৷ ওটাই সারিনার খেলা শেষ প্রতিযোগিতা ৷ মাসখানেক পরে তিনি নিজে আলাদা করে মেয়েদের শেখাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তালিবান যোদ্ধারা জিমে এসে তল্লাশি অভিযান চালায় ৷ মহিলাদের গ্রেফতার করে ৷ আটক করা মেয়েদের চূড়ান্ত অপমান করা হয়, পাশাপাশি তাঁদের নিয়ে মজা, ঠাট্টা, জানালেন সারিনা ৷ পরে প্রবীণদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয় ৷ মেয়েদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তারা কথা দেয় আর কখনও খেলাধুলো করবে না ৷ কিন্তু অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছে সারিনা ৷ কারণ "আমি একজন যোদ্ধা ৷ আমার জন্য জীবনটা খুব সমস্যার ৷ আমায় বাঁচতে হবে এবং যুদ্ধ করতে হবে ৷"

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না মেয়েরা, নয়া ফতোয়া তালিবানের

নৌরা যতবার খেলতে গিয়েছে, ততবারই ধরে একের পর এক বাধার সম্মুখীন হয়েছে ৷ তাঁর ছোটবেলায় বাবা-মা অন্য একটি প্রদেশ থেকে কাবুলে এসে বসবাস শুরু করেন ৷ তখন নৌরা বল নিয়ে খেলত এবং সঙ্গী ছিল ছেলেপিলেরা ৷ তার বয়স তখন 9 ৷ একজন কোচ নৌরাকে সবার মাঝে আলাদা করে চিহ্নিত করেন ৷ এরপর নৌরা মেয়েদের দলে যোগ দেয় ৷ সে নিজেকে যতটা সম্ভব গোপনে রেখেছিল, শুধু বাবা ছাড়া ৷ কিন্তু তার প্রতিভা তার বোরখার আবরণকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৷ 13 বছর বয়সেই সে মেয়েদের দলে সবেচেয়ে ভালো খেলোয়াড়ের পরিচিতি পেল ৷ তার ছবি দেখানো হয় টিভিতে ৷

এমন ঘটনায় তো আনন্দ হওয়ার কথা ৷ কিন্তু তা হয়নি নৌরার ক্ষেত্রে, বরং বিষাদের অন্ধকার নেমে এসেছিল ৷ সে বলে, "ওই দিনটা আমার জন্য অত্যন্ত তিক্ত এবং খারাপ সময়ের শুরুয়াত ৷" মা রেগে গিয়ে মারধর করেন নৌরাকে ৷ সে আর খেলতে পারবে না ৷ তাও গোপনে খেলা চালিয়ে গিয়েছিল নৌরা ৷ তার দল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল ৷ আবার তার ছবি খবরে ৷ ফের মায়ের পিটুনি ৷

দর্শকরা চেঁচাচ্ছে, আর নৌরা ? তার স্মৃতিচারণ, "আমি কাঁদছিলাম ৷ খালি আমিই জানতাম, আমি একাকিত্বের কারণে কাঁদছি এবং একটা কঠিন জীবন ৷" তার মা তার ফুটবল খেলার ইউনিফর্ম এবং জুতো পুড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ নৌরা ফুটবল খেলা ছেড়ে বক্সিংয়ে যোগ দিলেন ৷ তার মা তখনও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ৷ যদিও তিনি জানতেন যে তিনি খেলা থেকে নৌরাকে বাদ দিতে পারবেন না ৷

আরও পড়ুন: আইসিসি’র সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে আফগানিস্তানে মহিলা ক্রিকেট চালুর আশ্বাস তালিবানের

কাবুল, 11 জানুয়ারি: পায়ে বল আছে ৷ আকাশ আছে, কিন্তু তা উপর দিকে ছোড়ার অধিকার নেই ৷ তাও খেলতে হবে ৷ তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে, মায়ের পিটুনি, প্রতিবেশীদের উঁকিঝুঁকি এড়িয়ে নৌরা খেলতে যেত ৷ সে ফুটবল নিয়ে দৌড় দিত মাঠে ৷ এত বাধা পেরিয়েও তালিবান শাসনের কাছে হার মানতে হয়েছে নৌরাকে ৷ কারণ আফগানিস্তানে মেয়েদের খেলা বারণ ৷ না, কোনও খেলাই খেলতে পারবেন না মেয়ে, মহিলারা ৷ তালিবান প্রশাসন একবার জানতে পারলে আর রক্ষে নেই ৷ যাঁরা খেলার অপরাধ করেছেন, তাঁদের কপালে হয়রানি জুটেছে ৷

2021 সালের অগস্ট মাসে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয় ৷ তারপর থেকে অনেকে মেয়ের মতো নৌরার জীবনটা পালটে গিয়েছে ৷ তাঁর কথায়, "আমি আর সেই মানুষটা নেই ৷ তালিবানরা আসার পর, আমার মনে হয় আমি মরে গিয়েছি ৷" মেয়ে-মহিলারা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখবেন ৷ পার্ক বা জিমে যেতে পারবেন না, ফতোয়া জারি করেছে তালিবান প্রশাসন ৷ সম্প্রতি তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরতে পারবে না ৷ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতেও মেয়েদের নিয়োগ বন্ধ ৷

20 বছরের এক মার্শিয়াল আর্টিস্টের মনে পড়ল 2021 সালের অগস্ট মাসের কথা ৷ তিনি কাবুলের স্পোর্টস হলে স্থানীয় মহিলাদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন ৷ অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকদের মধ্যে দিয়ে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ল, তালিবানরা কাবুল থেকে খুব একটা দূরে নেই ৷ সব মহিলা, মেয়েরা তাড়াতাড়ি হল ছেড়ে পালিয়ে গেল ৷ ওটাই সারিনার খেলা শেষ প্রতিযোগিতা ৷ মাসখানেক পরে তিনি নিজে আলাদা করে মেয়েদের শেখাতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু তালিবান যোদ্ধারা জিমে এসে তল্লাশি অভিযান চালায় ৷ মহিলাদের গ্রেফতার করে ৷ আটক করা মেয়েদের চূড়ান্ত অপমান করা হয়, পাশাপাশি তাঁদের নিয়ে মজা, ঠাট্টা, জানালেন সারিনা ৷ পরে প্রবীণদের মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয় ৷ মেয়েদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তারা কথা দেয় আর কখনও খেলাধুলো করবে না ৷ কিন্তু অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছে সারিনা ৷ কারণ "আমি একজন যোদ্ধা ৷ আমার জন্য জীবনটা খুব সমস্যার ৷ আমায় বাঁচতে হবে এবং যুদ্ধ করতে হবে ৷"

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন না মেয়েরা, নয়া ফতোয়া তালিবানের

নৌরা যতবার খেলতে গিয়েছে, ততবারই ধরে একের পর এক বাধার সম্মুখীন হয়েছে ৷ তাঁর ছোটবেলায় বাবা-মা অন্য একটি প্রদেশ থেকে কাবুলে এসে বসবাস শুরু করেন ৷ তখন নৌরা বল নিয়ে খেলত এবং সঙ্গী ছিল ছেলেপিলেরা ৷ তার বয়স তখন 9 ৷ একজন কোচ নৌরাকে সবার মাঝে আলাদা করে চিহ্নিত করেন ৷ এরপর নৌরা মেয়েদের দলে যোগ দেয় ৷ সে নিজেকে যতটা সম্ভব গোপনে রেখেছিল, শুধু বাবা ছাড়া ৷ কিন্তু তার প্রতিভা তার বোরখার আবরণকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৷ 13 বছর বয়সেই সে মেয়েদের দলে সবেচেয়ে ভালো খেলোয়াড়ের পরিচিতি পেল ৷ তার ছবি দেখানো হয় টিভিতে ৷

এমন ঘটনায় তো আনন্দ হওয়ার কথা ৷ কিন্তু তা হয়নি নৌরার ক্ষেত্রে, বরং বিষাদের অন্ধকার নেমে এসেছিল ৷ সে বলে, "ওই দিনটা আমার জন্য অত্যন্ত তিক্ত এবং খারাপ সময়ের শুরুয়াত ৷" মা রেগে গিয়ে মারধর করেন নৌরাকে ৷ সে আর খেলতে পারবে না ৷ তাও গোপনে খেলা চালিয়ে গিয়েছিল নৌরা ৷ তার দল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল ৷ আবার তার ছবি খবরে ৷ ফের মায়ের পিটুনি ৷

দর্শকরা চেঁচাচ্ছে, আর নৌরা ? তার স্মৃতিচারণ, "আমি কাঁদছিলাম ৷ খালি আমিই জানতাম, আমি একাকিত্বের কারণে কাঁদছি এবং একটা কঠিন জীবন ৷" তার মা তার ফুটবল খেলার ইউনিফর্ম এবং জুতো পুড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ নৌরা ফুটবল খেলা ছেড়ে বক্সিংয়ে যোগ দিলেন ৷ তার মা তখনও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ৷ যদিও তিনি জানতেন যে তিনি খেলা থেকে নৌরাকে বাদ দিতে পারবেন না ৷

আরও পড়ুন: আইসিসি’র সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে আফগানিস্তানে মহিলা ক্রিকেট চালুর আশ্বাস তালিবানের

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.