কাবুল, 24 অগস্ট : আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থানের জেরে এবার দেশ ছাড়তে হল জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্যদেরও ৷ মঙ্গলবার 75 জনের একটি দলকে বিমানে কাবুল থেকে ‘এয়ার লিফ্ট’ করা হয় ৷ সেই দলেই ছিলেন মহিলা আফগান ফুটবলাররা ৷ এই পদক্ষেপের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ফুটবলারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিফপ্রো (FIFPRO) ৷ অস্ট্রেলিয়া সরকারই মহিলা আফগান ফুটবলার এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিমানে উড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে ৷ আফগানিস্তানের বাইরে বের করে আনা হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের আধিকারিকদেরও ৷ সূত্রের খবর, আগামী দিনে এই ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া ৷
আরও পড়ুন : Return Home : আতঙ্কে ছিলাম, কাতারে এসে মনে হল বেঁচে আছি ; বলছেন নদিয়ার তাপস
ফিফপ্রো-র তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে এদিন বলা হয়, ‘‘এই তরুণীরা শুধুমাত্র খেলোয়াড় হিসাবে নন, আন্দোলনকারী হিসাবেও অত্যন্ত বিপদে ছিলেন ৷ যেভাবে আন্তর্জাতিক মহল তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ ৷ আমরা ওই খেলোয়াড়দের তরফ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ৷’’
প্রসঙ্গত, 2007 সালে আফগানিস্তানে মেয়েদের জন্য জাতীয় ফুটবল দল গঠন করা হয় ৷ এই পদক্ষেপ ছিল তালিবানের বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক বার্তা ৷ তালিবানের দুনিয়ায় মেয়েরা শুধুই ভোগের পণ্য ৷ তাঁদের কোনও অধিকার বা ক্ষমতা নেই ৷ মেয়েরা মাঠে নেমে ফুটবল খেলবে, এটা তারা ভাবতেও পারে না ৷ তালিবানের এই রক্ষণশীলতার গোড়ায় সজোরে ধাক্কা মারতেই আফগান মহিলা ফুটবল দল গড়ে তোলা হয় ৷
সূত্রের খবর, চলতি মাসে আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকার পড়ে যাওয়ার পরই দেশের মহিলা ফুটবলারদের সতর্ক করা হয় ৷ তাঁদের বলা হয়, তাঁরা যেন অবিলম্বে নিজেদের সোশ্য়াল মিডিয়ার পোস্টগুলি মুছে ফেলেন ৷ দলের সঙ্গে তোলা ছবি, কিংবা ফুটবল সংক্রান্ত বিভিন্ন ছবিও মুছে দেওয়া হয় ৷ তা না হলে তাঁদের তালিবানের রোষে পড়ার সম্ভাবনা ছিল ৷
এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আফগান মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক খালিদা পোপল বলেন, ‘‘শেষ ক’টা দিন ভয়ঙ্কর ছিল ৷ তবে আজ আমাদের জয় হয়েছে ৷’’ আফগানিস্তান থেকে দলীয় সতীর্থ ও তাঁদের পরিবার এবং দলের অন্য় আধিকারিকদের উদ্ধার করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এই খালিদা ৷ ফিফপ্রো-র যে আইনজীবী ও উপদেষ্টাদের চেষ্টায় এই উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, সেই দলে তিনিও ছিলেন ৷ খালিদা বলেন, ‘‘কঠিন সময়েও মহিলা ফুটবলাররা সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন ৷ এবং তাঁদের আশা, আফগানিস্তানের বাইরের দুনিয়ায় তাঁদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে ৷’’
আরও পড়ুন : Afghanistan : আফগানিস্তান থেকে বাড়ি ফিরলেন গোপালনগরের তিন যুবক, খুশির হাওয়া পরিবারে
অন্যদিকে, ফিফপ্রোর সাধারণ সচিব জোনাস বায়ের-হফম্য়ান জানিয়েছেন, এই ক’টা দিন কী ভয়ঙ্কর উদ্বেগের মধ্যে কাটাতে হয়েছে তাঁদের ৷ তিনি জানিয়েছেন, গোটা উদ্ধার পর্বটাই অত্যন্ত জটিল ছিল ৷ জোনাস বলেন, ‘‘এখনও যাঁরা নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটিতে আটকে রয়েছেন, তাঁদের জন্য আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ৷’’