কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: ব্রডকাস্টারদের মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় করতে এবং রেডিয়ো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অন্যতম মাধ্যম হল বিশ্ব রেডিয়ো দিবস৷ বয়সে শতাব্দী পেরোলেও রেডিয়ো এখনও সামাজিক আদানপ্রদানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস৷
মানব সভ্য়তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রেডিয়ো ৷ বিশ্ব রেডিয়ো দিবস 2021-এ সেই সম্পর্ককেই সেলিব্রেট করা হয়৷ উঠে আসে আমাদের সমাজের বিভিন্ন পরিবর্তন এবং পরিষেবার বিষয়গুলি৷ কোরোনাকালেও রেডিয়ো তার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করেছে৷ পড়াশোনা থেকে ভুয়ো তথ্য়ের বিরুদ্ধে লড়াই, সবেতেই সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে রেডিয়ো ৷
রেডিয়োর মাধ্যমে তথ্য়কে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত করতেই বিশ্বব্য়াপী এই দিনটি পালন করা হয়৷ বৈচিত্রকে প্রাধান্য় দেওয়াটা অত্য়ন্ত জরুরি৷ আরও শান্তিপূর্ণ এবং সঙ্গবদ্ধ পৃথিবী তৈরি করতে এটা দরকার৷ এখনও বিশ্বের বহু দেশে তথ্য়ের প্রাথমিক উৎসই হল রেডিয়ো৷ ভারতে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র জনপ্রিয়তা বাড়াতেও ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে৷
সাধারণত মনে করা হয়, 1895 সালে প্রথম রেডিয়ো ট্রান্সমিশন তৈরি করেছিলেন গুগলিমো মারকোনি৷ পরবর্তীতে 1905-1906 সাল নাগাদ রেডিয়োর মাধ্য়মে গান ও কথা সম্প্রচার করা হয়৷
বাজারে রেডিয়োর আগমন ঘটে গত শতাব্দীর দু’য়ের দশকের গোড়ার দিকে৷ এর প্রায় তিন দশক পর তৈরি হয় বিভিন্ন রেডিয়ো স্টেশন৷ 1950-এর দশকের মধ্যেই বিশ্বব্য়াপী আমজনতার মধ্যে রেডিয়ো-র ব্য়বহার শুরু হয়ে যায়৷
এর প্রায় 60 বছর পর, 2011 সালে, 13 ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্ব রেডিয়ো দিবস হিসাবে ঘোষণা করে ইউনেসকো৷ এর দু’বছর পর 2013 সালের সাধারণ সভায় এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের স্বীকৃতি দেয় রাষ্ট্রসংঘ৷
রাষ্ট্রসংঘের মতে, বিশ্বের সবথেকে বেশি ব্য়বহৃত পণ্যগুলির মধ্যে রেডিয়ো অন্য়তম৷ সামাজিক বৈচিত্র্যের অভিজ্ঞতাকে আকার দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রেডিয়োর৷ রয়েছে যে কোনও আওয়াজকে পোক্ত করার, সকলকে শোনার ক্ষমতাও৷
স্পেনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই বিশ্ব রেডিয়ো দিবসের অনুষ্ঠানে সিলমোহর দেওয়ার জন্য তার সাধারণ সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করে ইউনেসকোর কার্যনির্বাহী বোর্ড৷ 2011 সালের একটি সিদ্ধান্ত মোতাবেকই এই পদক্ষেপ করা হয়৷ পরবর্তীতে ইউনেসকোর তৎকালীন মহাসচিবের মধ্যস্থতায় বিশ্ব রেডিয়ো দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ৷
2013 সালের 14 জানুয়ারি ইউনেসকোর বিশ্ব রেডও দিবসের প্রস্তাবকে সায় দিয়েছিল রাষ্ট্রসংঘের সাধরাণ সভা৷ রাষ্ট্রসংঘের 67তম অধিবেশনে 13 ফেব্রুয়ারি দিনটিকে বিশ্ব রেডিয়ো দিবস হিসাবে ঘোষণা প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়৷
উদ্দেশ্য়
রাষ্ট্রসংঘের মতে, রেডিয়ো সম্পর্কে আমজনতা এবং সংবাদমাধ্য়মকে আরও বেশি করে সচেতন করাই বিশ্ব রেডিয়ো দিবসের লক্ষ্য৷
এর পাশাপাশি, রেডিয়ো স্টেশনগুলিও যাতে তথ্য পরিবেশনের উৎস হিসাবে নিজেদের আরও প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং আন্তর্জাতিকস্তরে ব্রডকাস্টারদের মধ্য়ে সংযোগ আরও দৃঢ় হয়, সেটাও বিশ্ব রেডিয়ো দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য়৷
থিম
এবছর এই দিনটিকে পালনের জন্য রেডিয়ো স্টেশনগুলিকে নির্দিষ্ট একটি থিমও বাছাই করে দিয়েছিল ইউনেসকো৷ ‘‘রেডিয়ো এবং বৈচিত্র্য’’, এই ছিল এবারের অনুষ্ঠানের থিম৷ এছাড়া, বিশ্ব রেডিয়ো দিবস ঘোষণার দশম বর্ষপূর্তি এবং রেডিয়ো 110 বছরের ইতিহাসও এবারের অনুষ্ঠানে তিন সাব-থিমের মাধ্যমে উঠে আসে৷
বিবর্তন: বিশ্বের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়েই বিবর্তন এসেছে রেডিয়োতেও৷ এটি পরিবর্তনশীল এবং চিরস্থায়ী৷
আবিষ্কার: পৃথিবী বদলে যাচ্ছে৷ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে রেডিয়ো৷ এখন যে কোনও জায়গাতেই সহজে একে নিয়ে যাওয়া যায়৷ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে যে কোনও জায়গা থেকে রেডিয়োকে চালানো যায়৷
যোগাযোগ: বিশ্ব বদলে যাচ্ছে৷ কিন্তু রেডিয়ো তার সংযোগস্থাপন অক্ষুণ্ণ রেখেছে৷ আজও যেকোনও প্রাকৃতিক বা আর্থসামাজিক বিপর্যয় এবং মহামারির সময় রেডিয়ো যোগাযোগের অন্যতম মাধ্য়ম৷
রেডিয়ো পরিকাঠামোয় বৈচিত্র্য: সময়ের সঙ্গে বদল এসে নীতি নির্ধারণে৷ তার সঙ্গে খাপ খাইয়েই বদলে গিয়েছে সম্প্রচারের নীতিও৷ যা গণতন্ত্রের সহায়ক হয়েছে৷
নিউজ়রুমের বৈচিত্র: রেডিয়ো স্টেশনগুলি বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে সমান প্ল্য়াটফর্ম দিতে পারে৷ যার মাধ্য়মে একই ইশুতে বিভিন্ন মত পাওয়া সম্ভব৷ যা ন্য়ায্য় নীতি নির্ধারণের সহায়ক হয়৷
বায়ুতরঙ্গের বৈচিত্র: রেডিয়ো স্টেশনগুলি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্য়মেও তাদের পরিবেশনে বৈচিত্র্য আনতে পারে৷ ভাষা, সংগীত এবং মুডের বৈচিত্র্যে মানবিকতার বিবিধতাকেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারে৷