মস্তিষ্কই মানবদেহের ব্রহ্মাণ্ড! ব্রহ্মাণ্ড জানলে সৃষ্টিও জানা সম্ভব৷ এ শুধু বিগ ব্যাং থিওরির যুক্তি না, রহস্যময় মানুষ জীবনেরও সত্যি৷ কে ছাপোষা হবে, কে হবে রবীন্দ্রনাথ, কে জেআরডি টাটা কিংবা ডন ইব্রাহিম, তার সবটাই নাকি নির্ভর করে জন্মগত মস্তিষ্কের গঠন ও পরবর্তী অভিযোজনের উপরে৷ তবু, আইকিউ (Intelligence quotient) এক রহস্য! যেমন ব্রেন ডেথ বা কোমায় চলে যাওয়া৷ মানব সভ্যতার অন্যতম সেরা মেধা নিয়ে কৌতূহলেই তো সংরক্ষিত কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের অংশ৷ না, শুধু আইনস্টাইনের মতো "পজ়িটিভ" মস্তিষ্কই নয়, আরও একজনের মস্তিষ্ক, থুড়ি আস্ত মুণ্ডুটি সংরক্ষিত আছে বিপুল কৌতূহলে৷ কে সে?
একজন সিরিয়াল কিলার৷ নাম, দিয়োগো আলভেজ়৷ দিয়োগোর জীবন থ্রিলার সিনেমাকে হার মানায়৷ 1810 সালে স্পেনে জন্মানো দিয়োগো 19 বছর বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে পর্তুগালে আসে৷ নেহাত কাজের খোঁজে৷ কিন্তু টানা কয়েক বছর চেষ্টার পরেও ঠিকঠাক কাজ মেলে না৷ হতাশাগ্রস্ত হয় দিয়োগো৷ এবং অজান্তে মনের অসুখ বাসা বাঁধে দিয়োগোর মস্তিষ্কে৷ এইসময় মাদক নেওয়া শুরু করে সে৷ আর এরপরই "কেমিক্যাল লোচা" ঘটে যায় দিয়োগোর মস্তিষ্কে! জন্ম হয় কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার দিয়োগো অ্যালভেজ়ের৷
যদিও চুরি, রাহাজানি দিয়ে অপরাধ জীবনের শুরু৷ তারপর খুন৷ খুনের পর খুন! তথ্য বলছে, 1836-1840, এই চার বছরে 70 জনকে হত্যা করে দিয়োগো৷ খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দিত নদীতে৷ প্রথমে পুলিশ ভাবেনি যে এ একজন মানুষের কাজ৷ কিন্তু ধীরে ধীরে তদন্ত সব স্পষ্ট হতে শুরু করে৷ যদিও এই পর্বে দিয়োগেকে ধরতে পারেনি পুলিশ৷ কারণ সে সাময়িক গা ঢাকা দেয়৷ কিন্তু, তিন বছর ফের শুরু হত্যালীলার৷ এবার শুধু নিজে খুন করা নয়, খুনি গ্যাং তৈরি করে ফেলে দিয়োগো৷ কিংবা দিয়োগোর জটিল মস্তষ্ক! তবে, নাজেহাল পুলিশও তক্কে তক্কে ছিল৷
এক ডাক্তারকে পরিবার সহ খুনের ঘটনায় ধরা পড়ে দিয়োগো আলভেজ়৷ স্বভাবতই বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয় তার৷ 1841 সালের 19 ফেব্রুয়ারি ফাঁসি হয় ।
কিন্তু, কৌতূহল কমেনি তাকে নিয়ে! এতদিন ধরে এত মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করত যে, তার মস্তষ্কের গঠন কেমন? কোথায় আলাদা সে? পর্তুগালের মেডিক্যাল পড়ুয়াদের গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম কুখ্যাত অপরাধীর মস্তিষ্কের গঠন৷ এই কৌতূহলেই মৃত্যুদণ্ডের পর দিয়োগোর মাথাটি কেটে সংরক্ষণ করা হয়৷ দিয়োগো আলভেজ়ের জটিল মস্তিষ্ক-রহস্যের সমাধান হয়েছে?
তা হয়নি৷ কেটেছে 180 বছর । মস্তিষ্কটি আজও সংরক্ষিত রয়েছে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কক্ষে৷ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে!