ইতিহাসের বইতে পার্থেননের কথা আমরা সবাই পড়েছি । গ্রিক দেবী অ্যাথেনাকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়েছিল এই পার্থেনন । কিন্তু জানেন কী পার্থেনন শুধু গ্রিসেই না, আছে অন্য দেশেও ৷ জার্মানির ক্যাসেল শহরেও রয়েছে এক পার্থেনন । একেবারে হুবহু আসলের মতোই দেখতে ।
তফাৎ শুধু একটাই । ক্যাসেলের এই পার্থেনন দেখতে অনেকটা রং-চঙে । দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিভিন্ন রঙের কোলাজ । কিন্তু কাছে আসলেই ভাঙবে ভ্রম । যেটাকে রঙিন কোলাজ মনে হচ্ছিল, সেগুলি আদতে বইয়ের প্রচ্ছদ । নানা রঙের প্রচ্ছদ । প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া বইগুলি । পার্থেননের প্রতিটি স্তম্ভ তৈরি হয়েছে বই দিয়ে । হ্যাঁ, শুধু বই দিয়েই তৈরি করেছেন আস্ত একটি পার্থেনন । যে-সে বই নয়... বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ হওয়া বইগুলি দিয়ে তৈরি হয়েছে এই সৌধ ।
এথেন্সের পার্থেননের আদলে তৈরি এই সৌধটির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এক লাখ বই । রডের খাঁচার উপর একের পর এক বই সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে সৌধ । পার্থেনন অফ বুকস ।
আরও পড়ুন : বছরে 42 দিন কথা বলেন না এই গ্রামের মানুষ !
এই পার্থেনন গণতন্ত্রের কথা বলে... বাকস্বাধীনতার কথা বলে । প্লাস্টিকে মোড়া স্তম্ভগুলি যেন বার বার চিৎকার করে বলছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে কলমই হোক হাতিয়ার । যেন প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে সাহিত্যের উপর সেন্সরশিপের থাবা আজও কতটা রূঢ় ।
সৌধটি তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনার শিল্পী মার্তা মিনুজিন । ক্যাসেল শহরের যে এলাকায় এই সৌধটি তৈরি হয়েছে তারও রয়েছে একটি বিশেষত্ব । বিংশ শতাব্দীর তিনের দশক । জার্মানিতে তখন নাৎজ়ি রাজ । হিটলারের ভয়ে ইহুদিরা সব থরহরিকম্প । ইতিহাসের সেই কালো সময়ে ক্যাসেলের এই জমিতেই নাৎজ়ি সেনা হাজার হাজার বই আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল । বলতে গেলে, কলমের টুটি টিপে ধরা হয়েছিল হিটলারের সেই রাজত্বে । সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া বীভৎসতার কথা স্মরণে রেখেই মিনুজিন সেই জমির উপর এই নিষিদ্ধ বইয়ের পার্থেনন গড়ে তুলেছেন ।
আরও পড়ুন : হ্যাংওভার লিভ ! তাও আবার হয় ?
মার্তাকে এই সৌধটি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নিষিদ্ধ হওয়া বইয়ের তালিকা থেকে 170 টি বই খুঁজে বের করে পার্থেনন তৈরির জন্য দিয়েছিলেন তাঁরা ।