ETV Bharat / international

সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেপালের কাছে লাভজনক ভারত, বলছেন প্রাক্তন কূটনীতিক - সীমান্ত বাণিজ্য

ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য খুব সহজে, বিনা বাধায় সীমান্ত পেরোতে পারে ৷ কারণ খুব কম চেকপোস্ট রয়েছে । ভারতে বন্দরে ছাড়পত্র ও পরিবহনে বিশেষ সুবিধা থাকায় এটা নেপালের জন্য সস্তাও পড়ে । প্রতিবেদনটি লিখেছেন চন্দ্রকলা চৌধুরি ৷

India Nepal relation
সীমান্ত বাণিজ্যে লাভ ভারত নেপালের
author img

By

Published : Aug 20, 2020, 5:14 PM IST

দিল্লি, 20 অগাস্ট : ভারত ও নেপালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু প্রাচীন । নেপালের কাছে ভারত হল বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী এবং বিদেশি বিনিয়োগের উৎস ।

কিন্তু কোরোনা প্যানডেমিকের সময়, সীমান্ত বিবাদের জেরে দুই দেশের সম্পর্ক আস্তে আস্তে তিক্ত হয়েছে ।

ভারত ও নেপাল তাদের রাজনৈতিক মানচিত্রে একই এলাকা দাবি করছে । নেপালের দাবি, কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরার 400 বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদেরই ভূখণ্ড ৷ যার জেরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ।

দুই দেশের এই মতানৈক্যের মধ্যে ভারত ও নেপালের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

যদিও, প্যানডেমিকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা ও অন্যান্য রাজনৈতিক মতানৈক্যের দিকে তাকিয়ে, যার মধ্যে চিনের কর্তৃত্বকামী কৌশলও রয়েছে, ভারত ও নেপাল একটা সন্ধিতে পৌঁছতে এবং ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে । তারা সীমান্ত পরিকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর উপরই জোর দিচ্ছে ।

এখন প্রশ্নটা হল যে দুই সরকারের এই এগিয়ে আসার মধ্যে দিয়ে বর্তমান বিবাদ মেটানোর পথ মিলবে কি না ৷ অথবা দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে কি না ৷ এবং নেপালে ভারতকে সরিয়ে চিনের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির প্রয়াসে রাশ টানা যাবে কি না ।

ETV ভারতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন কূটনীতিক জে কে ত্রিপাঠী বলেন, “নিশ্চিতভাবেই সীমান্ত ইশু দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে । প্রধানত এর পিছনে রয়েছে কোরোনা, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা, সীমান্তের সমতল এলাকায় চেক পোস্ট ও পিলার তৈরিতে নেপালের উদ্যোগ । কিন্তু নেপাল এর মধ্যেই দু-তিনটি চেকপোস্ট সরিয়ে ফেলতে সম্মত হয়েছে ৷ এবং বাণিজ্যের জন্য সীমান্ত আরও উদারভাবে খুলে দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ।”

তিনি বলেন, "এর কারণ, চিন নেপালে তার ভূমিকা পালন করছে ৷ অথবা নেপাল চিনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে ৷ অথবা চিন নেপালকে এড়িয়ে যাচ্ছে । কিন্তু যদি না চিন নেপালে সবকিছু তৈরি করে ফেলে, যেমন সড়ক পরিকাঠামো, লাসা থেকে একেবারে কাঠমাণ্ডু হয়ে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেল পরিকাঠামো ইত্যাদি, নেপালকে ভারতের সঙ্গে অথবা ভারতের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হবে । তাই নিশ্চিতভাবেই, নেপালের পছন্দ না হলেও তাকে ভারতের উপরই নির্ভর করে থাকতে হবে ৷ এবং নেপালের বাণিজ্যও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ”

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “নেপাল সরকার ভালমতোই জানে যে এর সঙ্গে নেপালের জনগণ ও সরকারের স্বার্থ জড়িত । এর ফলে নিশ্চিতভাবেই বাণিজ্যে জোর দেওয়া হবে এবং সরকার ও জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তা তারা ভারত সরকার থেকে নিজেদের যতই বিচ্ছিন্ন ভাবুন না কেন ।”

তিনি বলেন, নেপালের জনতা সরকারের উপর খুব একটা সন্তুষ্ট নয় ৷ তাই সেখানে প্রতিবাদ হচ্ছে, ধরনা হচ্ছে ৷ আর তাদের কাছে ভারতের তরফ থেকে এই বার্তা পৌঁছাবে যে আমরা নেপালের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরির পক্ষে ।

ত্রিপাঠী বলেন, “দুদেশের স্বার্থেই নেপালকে খুশি বা সন্তুষ্ট করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু তুষ্টিকরণের মধ্যে দিয়ে নয়, কারণ ভারতও বিপুল পরিমাণে অর্থ ঢেলেছে । দুই সরকারই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে যে দুদেশের মধ্যে উঠে আসা রাজনৈতিক মতানৈক্য বর্তমান প্রকল্পগুলোর উপর প্রভাব ফেলবে না ।”

তাঁর ব্যাখ্যা, নেপাল স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা ৷ আর এধরনের দেশের আমদানি-রপ্তানির জন্য একটা রুটের প্রয়োজন হয় । নেপালের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত এই রুট হচ্ছে ভারত । বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে নেপালে যে পণ্যই আসুক না কেন, সেটা ভারতের মাধ্যমেই পৌঁছায় । সেগুলো ভারতের বন্দরগুলোতে নামে এবং সেখান থেকে নেপালে যায় ।

ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য খুব সহজে, বিনা বাধায় সীমান্ত পেরোতে পারে ৷ কারণ খুব কম চেকপোস্ট রয়েছে । ভারতে বন্দরে ছাড়পত্র ও পরিবহনে বিশেষ সুবিধা থাকায় এটা নেপালের জন্য সস্তাও পড়ে ।

যদি সরাসরি রেলপথের মাধ্যমে চিন নেপালে পৌঁছনোর চেষ্টা করে, তাহলে সেটা কঠিন হবে ।

তিনি বলেন, “নেপালের পণ্যের জন্য চারটি বন্দর নির্দিষ্ট করেছে চিন । নেপাল থেকে চিনে পণ্য পৌঁছাতে গেলে, তাকে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ফিলিপিন্স হয়ে সমুদ্রপথে চিনে পৌঁছাতে হয়, যাতে প্রায় 20 দিন লেগে যায় ।”

এবার যদি চিনা বন্দরগুলো থেকে সেই রেলপথের মাধ্যমে পণ্যপরিবহন হয়, যা কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে চিন, তাহলে 40-45 দিন লেগে যাবে । সেখান ভারতের যে কোনও বন্দর থেকে সময় লাগে প্রায় 15 দিন । দ্রুত ডেলিভারির অর্থ কম পরিবহন খরচ ৷ আরও পণ্য পরিবহণের সম্ভাবনা ।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “চিন তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা করেছে ৷ এটা একেবারে ভারত-নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত হবে । চিন এই প্রকল্পের খরচ ঋণ হিসেবে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ৷ আর এটা 6.2 বিলিয়ন ডলারের মেগাপ্রজেক্ট । এটা খুবই খরচসাপেক্ষ হবে ৷ কারণ লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত বেশিরভাগ অংশই পাহাড়, যেখানে 74-75টি সুড়ঙ্গ এবং কয়েকটি সেতু তৈরি করতে হবে । এছাড়াও যেখানে এটি নেপালে ঢুকবে, সেটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ । বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় । যদিও চিন চেষ্টা করছে এটা কার্যকর করার ।"

তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে চিনের কাছে নেপালের ঋণ 2 বিলিয়ন ডলার । যদি নেপাল দিতে না পারে, তাহলে এর 50 শতাংশ চিন ফের নেপালকে ঋণ হিসেবে দেবে । 29 বিলিয়ন ডলারের GDP-র একটা দেশের কাছে এই পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় 6 বিলিয়ন ডলার । এর পাশাপাশি, অন্যান্য দেশ, IMF, বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের কাছেও ঋণ রয়েছে নেপালের । সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ তাদের অর্থনীতির একের তিন অংশ । এর ফলে নেপালের অর্থনীতি বিপুল চাপের মুখে পড়বে । নেপাল এটা বুঝতে না চাইলেও কিছু নেপালবাসী তা বোঝেন ৷ এবং তাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন ।”

নেপাল জানে যে যতক্ষণ না তারা পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য অর্থনৈতিকভাবে সংগতিপূর্ণ রুট না পাচ্ছে, ততক্ষণ ভারতই একমাত্র সঙ্গতিপূর্ণ এবং কম খরচের রুট ।

তিনি বলেন, “আমি দেখছি যে ভারত-নেপাল সম্পর্কের আস্তে আস্তে পুনরুজ্জীবন ঘটছে ৷ কারণ ভারত ও নেপালের কাছে বোঝাপড়া ছাড়া অন্য পথ নেই । আর মাধ্যমেই ভারত সীমান্তে চিনকে আটকাতে সক্ষম ।”

নেপাল ভারতের বাফার দেশ হিসেবে কাজ করবে ৷ কারণ চিন ও ভারতের মধ্যে সে রয়েছে । কিন্তু ভারত যদি নিজে বড় দেশ হওয়ায় নেপালকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করে, চিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নেপালের দখল নেবে ।

নেপালের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী ছিল ভারত । নেপালের 65 শতাংশেরও বেশি পণ্যবাণিজ্য ভারতের বন্দরগুলির মাধ্যমেই সম্ভব ৷ তাই ভারত নেপালের আমদানি-রপ্তানির একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করত । এর মধ্যে চিন নেপালের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিধিতে ভারতের বিকল্প হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছে ।

নেপালের সমর্থন পেয়ে ভারতকে আটকাতেই চিন মূলত ভারত-নেপাল বিবাদে নাক গলাচ্ছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের হস্তক্ষেপের জন্যই ভারত-নেপাল সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে এবং নেপালে ভারত-বিরোধী জিগির তুলতে বড় ভূমিকা পালন করছে চিন ।

দিল্লি, 20 অগাস্ট : ভারত ও নেপালের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু প্রাচীন । নেপালের কাছে ভারত হল বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী এবং বিদেশি বিনিয়োগের উৎস ।

কিন্তু কোরোনা প্যানডেমিকের সময়, সীমান্ত বিবাদের জেরে দুই দেশের সম্পর্ক আস্তে আস্তে তিক্ত হয়েছে ।

ভারত ও নেপাল তাদের রাজনৈতিক মানচিত্রে একই এলাকা দাবি করছে । নেপালের দাবি, কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরার 400 বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদেরই ভূখণ্ড ৷ যার জেরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ।

দুই দেশের এই মতানৈক্যের মধ্যে ভারত ও নেপালের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।

যদিও, প্যানডেমিকের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা ও অন্যান্য রাজনৈতিক মতানৈক্যের দিকে তাকিয়ে, যার মধ্যে চিনের কর্তৃত্বকামী কৌশলও রয়েছে, ভারত ও নেপাল একটা সন্ধিতে পৌঁছতে এবং ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে । তারা সীমান্ত পরিকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর উপরই জোর দিচ্ছে ।

এখন প্রশ্নটা হল যে দুই সরকারের এই এগিয়ে আসার মধ্যে দিয়ে বর্তমান বিবাদ মেটানোর পথ মিলবে কি না ৷ অথবা দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে কি না ৷ এবং নেপালে ভারতকে সরিয়ে চিনের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব তৈরির প্রয়াসে রাশ টানা যাবে কি না ।

ETV ভারতের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন কূটনীতিক জে কে ত্রিপাঠী বলেন, “নিশ্চিতভাবেই সীমান্ত ইশু দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে । প্রধানত এর পিছনে রয়েছে কোরোনা, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা, সীমান্তের সমতল এলাকায় চেক পোস্ট ও পিলার তৈরিতে নেপালের উদ্যোগ । কিন্তু নেপাল এর মধ্যেই দু-তিনটি চেকপোস্ট সরিয়ে ফেলতে সম্মত হয়েছে ৷ এবং বাণিজ্যের জন্য সীমান্ত আরও উদারভাবে খুলে দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ।”

তিনি বলেন, "এর কারণ, চিন নেপালে তার ভূমিকা পালন করছে ৷ অথবা নেপাল চিনের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে ৷ অথবা চিন নেপালকে এড়িয়ে যাচ্ছে । কিন্তু যদি না চিন নেপালে সবকিছু তৈরি করে ফেলে, যেমন সড়ক পরিকাঠামো, লাসা থেকে একেবারে কাঠমাণ্ডু হয়ে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেল পরিকাঠামো ইত্যাদি, নেপালকে ভারতের সঙ্গে অথবা ভারতের মাধ্যমে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হবে । তাই নিশ্চিতভাবেই, নেপালের পছন্দ না হলেও তাকে ভারতের উপরই নির্ভর করে থাকতে হবে ৷ এবং নেপালের বাণিজ্যও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । ”

এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “নেপাল সরকার ভালমতোই জানে যে এর সঙ্গে নেপালের জনগণ ও সরকারের স্বার্থ জড়িত । এর ফলে নিশ্চিতভাবেই বাণিজ্যে জোর দেওয়া হবে এবং সরকার ও জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, তা তারা ভারত সরকার থেকে নিজেদের যতই বিচ্ছিন্ন ভাবুন না কেন ।”

তিনি বলেন, নেপালের জনতা সরকারের উপর খুব একটা সন্তুষ্ট নয় ৷ তাই সেখানে প্রতিবাদ হচ্ছে, ধরনা হচ্ছে ৷ আর তাদের কাছে ভারতের তরফ থেকে এই বার্তা পৌঁছাবে যে আমরা নেপালের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরির পক্ষে ।

ত্রিপাঠী বলেন, “দুদেশের স্বার্থেই নেপালকে খুশি বা সন্তুষ্ট করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু তুষ্টিকরণের মধ্যে দিয়ে নয়, কারণ ভারতও বিপুল পরিমাণে অর্থ ঢেলেছে । দুই সরকারই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে যে দুদেশের মধ্যে উঠে আসা রাজনৈতিক মতানৈক্য বর্তমান প্রকল্পগুলোর উপর প্রভাব ফেলবে না ।”

তাঁর ব্যাখ্যা, নেপাল স্থলভাগ দিয়ে ঘেরা ৷ আর এধরনের দেশের আমদানি-রপ্তানির জন্য একটা রুটের প্রয়োজন হয় । নেপালের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত এই রুট হচ্ছে ভারত । বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে নেপালে যে পণ্যই আসুক না কেন, সেটা ভারতের মাধ্যমেই পৌঁছায় । সেগুলো ভারতের বন্দরগুলোতে নামে এবং সেখান থেকে নেপালে যায় ।

ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য খুব সহজে, বিনা বাধায় সীমান্ত পেরোতে পারে ৷ কারণ খুব কম চেকপোস্ট রয়েছে । ভারতে বন্দরে ছাড়পত্র ও পরিবহনে বিশেষ সুবিধা থাকায় এটা নেপালের জন্য সস্তাও পড়ে ।

যদি সরাসরি রেলপথের মাধ্যমে চিন নেপালে পৌঁছনোর চেষ্টা করে, তাহলে সেটা কঠিন হবে ।

তিনি বলেন, “নেপালের পণ্যের জন্য চারটি বন্দর নির্দিষ্ট করেছে চিন । নেপাল থেকে চিনে পণ্য পৌঁছাতে গেলে, তাকে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ফিলিপিন্স হয়ে সমুদ্রপথে চিনে পৌঁছাতে হয়, যাতে প্রায় 20 দিন লেগে যায় ।”

এবার যদি চিনা বন্দরগুলো থেকে সেই রেলপথের মাধ্যমে পণ্যপরিবহন হয়, যা কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে চিন, তাহলে 40-45 দিন লেগে যাবে । সেখান ভারতের যে কোনও বন্দর থেকে সময় লাগে প্রায় 15 দিন । দ্রুত ডেলিভারির অর্থ কম পরিবহন খরচ ৷ আরও পণ্য পরিবহণের সম্ভাবনা ।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “চিন তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা করেছে ৷ এটা একেবারে ভারত-নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত হবে । চিন এই প্রকল্পের খরচ ঋণ হিসেবে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ৷ আর এটা 6.2 বিলিয়ন ডলারের মেগাপ্রজেক্ট । এটা খুবই খরচসাপেক্ষ হবে ৷ কারণ লাসা থেকে কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত বেশিরভাগ অংশই পাহাড়, যেখানে 74-75টি সুড়ঙ্গ এবং কয়েকটি সেতু তৈরি করতে হবে । এছাড়াও যেখানে এটি নেপালে ঢুকবে, সেটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ । বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় । যদিও চিন চেষ্টা করছে এটা কার্যকর করার ।"

তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে চিনের কাছে নেপালের ঋণ 2 বিলিয়ন ডলার । যদি নেপাল দিতে না পারে, তাহলে এর 50 শতাংশ চিন ফের নেপালকে ঋণ হিসেবে দেবে । 29 বিলিয়ন ডলারের GDP-র একটা দেশের কাছে এই পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় 6 বিলিয়ন ডলার । এর পাশাপাশি, অন্যান্য দেশ, IMF, বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ার ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের কাছেও ঋণ রয়েছে নেপালের । সব মিলিয়ে ঋণের পরিমাণ তাদের অর্থনীতির একের তিন অংশ । এর ফলে নেপালের অর্থনীতি বিপুল চাপের মুখে পড়বে । নেপাল এটা বুঝতে না চাইলেও কিছু নেপালবাসী তা বোঝেন ৷ এবং তাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন ।”

নেপাল জানে যে যতক্ষণ না তারা পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য অর্থনৈতিকভাবে সংগতিপূর্ণ রুট না পাচ্ছে, ততক্ষণ ভারতই একমাত্র সঙ্গতিপূর্ণ এবং কম খরচের রুট ।

তিনি বলেন, “আমি দেখছি যে ভারত-নেপাল সম্পর্কের আস্তে আস্তে পুনরুজ্জীবন ঘটছে ৷ কারণ ভারত ও নেপালের কাছে বোঝাপড়া ছাড়া অন্য পথ নেই । আর মাধ্যমেই ভারত সীমান্তে চিনকে আটকাতে সক্ষম ।”

নেপাল ভারতের বাফার দেশ হিসেবে কাজ করবে ৷ কারণ চিন ও ভারতের মধ্যে সে রয়েছে । কিন্তু ভারত যদি নিজে বড় দেশ হওয়ায় নেপালকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করে, চিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নেপালের দখল নেবে ।

নেপালের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী ছিল ভারত । নেপালের 65 শতাংশেরও বেশি পণ্যবাণিজ্য ভারতের বন্দরগুলির মাধ্যমেই সম্ভব ৷ তাই ভারত নেপালের আমদানি-রপ্তানির একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করত । এর মধ্যে চিন নেপালের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিধিতে ভারতের বিকল্প হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করছে ।

নেপালের সমর্থন পেয়ে ভারতকে আটকাতেই চিন মূলত ভারত-নেপাল বিবাদে নাক গলাচ্ছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের হস্তক্ষেপের জন্যই ভারত-নেপাল সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে এবং নেপালে ভারত-বিরোধী জিগির তুলতে বড় ভূমিকা পালন করছে চিন ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.