ETV Bharat / international

জাতীয় নিরাপত্তা আইনে হংকং-র কণ্ঠরোধ করছে চিন

কেন হংকংয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন ? চিনের বিরুদ্ধে হংকংয়ের অভিযোগ কী ? বিশ্লেষণ করলেন স্মিতা শর্মা ৷

হংকং-র কণ্ঠরোধ করছে চিন
হংকং-র কণ্ঠরোধ করছে চিন
author img

By

Published : Jun 30, 2020, 11:01 PM IST

দিল্লি,30 জুন: জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে হংকংয়ের মুখবন্ধ করছে চিন ৷ পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের দাবিতে হংকংজুড়ে গত কয়েক মাসে রাস্তায় নেমে যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদের কণ্ঠরোধ করতে চিনের মূল ভূখণ্ডে নতুন একটি বিতর্কিত আইন আনা হয়েছে, যার নাম জাতীয় নিরাপত্তা আইন । এই নয়া আইনে অপসরণ, পরাভব, সন্ত্রাস অথবা বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশ সংক্রান্ত যে কোনও কাজকে অপরাধমূলক হিসাবে ধরা হয়েছে । এনিয়ে চারদিকে ভয় ছড়িয়ে গিয়েছে যে অর্ধ স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলিতে আগামী দিনে নয়া আইনের আওতায় নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করা হবে। আর তা হবে এমন একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যস্থার অধীনে যারা ইতিমধে্যই দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগর এলাকায় তাইওয়ানের সঙ্গে এবং ভারতের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায়, এলাকাবৃদ্ধির জন্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে । বর্তমান অচলাবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গত বছরে 9 হাজারের বেশি মানবাধিকারকর্মী এবং নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গত কয়েক সপ্তাহে এই আইনের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক নিন্দা হয়েছে, কিন্তু চিনের তরফে সব কিছুকেই খারিজ করে দেওয়া হয়েছে ৷ তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, এই দাবি তুলে। আজ সকালে বেজিংয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ দ্য ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস সর্বসম্মতভাবে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ বিরোধী আইন’ পাস করেছে । এবার এটি হংকংয়ের মৌলিক আইনের তালিকায় যুক্ত হবে ।

এর ফলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে এবং আমেরিকার বিদেশমন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে বেজিংয়ের নেওয়া পদক্ষেপ ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারকে "ওই এলাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বুনিয়াদ নতুন করে

সাজাতে" বাধ্য করেছে । আমেরিকা বেজিংয়ের সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রসংঘের নথিবদ্ধ "সাইনো ব্রিটিশ জয়েন্ট ডিক্লেরাশন"-র আওতায় করা নিজেদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসা বলে অভিহিত করেছে । মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও সোমবার রাতে

বলেছেন, "যদি চিন হংকংবাসী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরায় অর্জন করতে চায়, তাহলে 1984 সালে রাষ্ট্রসংঘে নথিবদ্ধ "সাইনো—ব্রিটিশ জয়েন্ট ডিক্লেরেশন"-র আওতায় হংকংবাসী এবং ব্রিটেনের কাছে করা তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতিরক্ষা করতেই হবে।" ব্রিটেন এবং তাইওয়ান এর আগে বলেছিল যে নতুন আইন লাগু হলে চারদিকে যে কড়াকড়ি চলবে, সেই পরিস্থিতিতে তারা মানবাধিকারকর্মী এবং গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদকারীদের আশ্রয় পেতে সাহায্য করবে।

  • হংকংয়ে মানুষ কেন রাস্তায় নেমেছিলেন?

গত বছর জুন মাসে প্রথম সর্বসমক্ষে আনা হয়েছিল প্রত্যর্পণ বিল । আর তার পরই অন্তত দশ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে। তাদের প্রতিবাদ ছিল বিলে প্রস্তাবিত "পলাতক’দের চিনের মূল ভূখণ্ডে নির্বাসিত করার বিরুদ্ধে । এই বিলকে হংকংয়ের "এক দেশ, দুই সিস্টেম" পরিকাঠামোর আওতায় দেওয়া বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতার আশ্বাসে সরাসরি ভান বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু সামাজিক অচলাবস্থা সেখানে চলতেই থাকে । এই নেতাহীন প্রতিবাদ আন্দোলন তখন ধাক্কা খায় যখন এরইমধে্য নভেম্বরে আয়োজিত স্থানীয় 18টি কাউন্সিলের মধে্য ভোটে 17টিই দখল করে নেন গণতন্ত্রপন্থী নেতারা । 2019 সালের জুন মাসে শুরু হওয়া গণতন্ত্রপন্থী এই প্রতিবাদ আন্দোলন এবং পরে চলতি বছরের মে মাসে "জাতীয় নিরাপত্তা আইন"-র খসড়া পেশের পর আন্দোলনের তীব্র আকার ধারণ করাকে বেজিং "পরাভব বিমূর্তকারী কাজকারবার যা বিনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে" এবং প্ররোচনামূলক এই ধরনের হিংসার ঘটনায় "বিদেশি শক্তি"-র হাত আছে বলে জানিয়েছে ।

  • প্রতিবাদকারীদের দাবি কী?

হংকংয়ের মানুষ রাস্তায় নেমে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ দেখিয়েছিলেন এই দাবিতে যে তাদের অধিকার যেন কখনওই মূল ভূখণ্ডের তরফে লঙ্ঘন করা না হয়। তারা জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে "না" করে দিয়েছে, যাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। তারা চেয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার, যাতে তা গোটা জনজাতিকে তাদের নিজস্ব চিফ এগজ়িকিউটিভ নির্বাচন করার অধিকার দেয়। প্রতিবাদকারীদের এটাও দাবি ছিল যে নাগরিক বিক্ষোভকারীদের উপর হওয়া পুলিশি বর্বরতার ঘটনার

নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক। মূল ভূখণ্ড থেকে সরে আসার দাবি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবাদকারীদের ছিল না। নয়া নিরাপত্তা আইনের একটি সরকারি বয়ানের অপেক্ষা সাধারণ মানুষ এখনও করছে যদিও কিছু কিছু রিপোর্টে দাবি, এই আইনে মূল ভূখণ্ডের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে যেমন হংকংয়ের স্কুলগুলিতে জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে কোনও শিক্ষা বা পাঠ না দেওয়া । এই আইন লাগু করতে পারে কেবলমাত্র হংকং সরকার কিন্তু শি চিনপিংয়ের শাসনে কিছু কিছু

বিষয়ে হংকং কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদেরই প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হতে পারে। "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" অতীতে ব্রিটিশদের উপনিবেশ থাকা হংকংকে চিনের হাতে 1997 সালে পুনরায় তুলে দেওয়া হয়েছিল 1997 সালে "এক দেশ দুই ব্যবস্থা" পদক্ষেপের মাধ্যমে, বিশেষ কিছু অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে । "হংকং স্পেশাল অটোনোমাস রিজিয়ন" (HKSAR)- এর নিজস্ব বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনি ব্যবস্থা আছে, যা চিনের মূল ভূখণ্ডের থেকে আলাদা । চিন জনসমাবেশ করা এবং বক্তৃতা দেওয়ার স্বাধীনতার অধিকার দেয়। হংকং একটি মৌলিক আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা অনেকটা নিজস্ব একটি ক্ষুদ্র সংবিধানে মতোই চলে। এতে নিজস্ব আইনকানুন আছে, এমনকী জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও। প্রত্যর্পণের পর দু’দশকেরও বেশি সময় পর হংকংয়ে ফ্রি প্রেস আছে, স্বাধীন আদালত আছে এবং এমন কিছু আইন প্রণীত আছে, যা মূল ভূখণ্ডের সীমান্ত এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে মানা হয় না। প্রর্ত্যপণ বিলকে স্বৈরাচারী শি চিনপিং এবং তার দল, কমিউনিস্ট পার্টির তরফে স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলির বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসাবেই দেখা হয়েছিল এবং এর ফলে তাদের উপরও প্রভাব পড়ার প্রবল আশঙ্কা ছিল, যারা বেজিংয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। কিন্তু এখন জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে দেখা হচ্ছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে যারা আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন চেয়েছে, তাদের প্রতি চিনের পালটা দেখে নেওয়ার বার্তা হিসাবে। বিশেষ করে অ্যামেরিকাকে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে, নতুন এই আইন বুধবার কার্যকরী হচ্ছে, যা ব্রিটেনের তরফে চিনের হাতে হংকংকে তুলে দেওয়ার বার্ষিক উদযাপদেনর আগেই হচ্ছে ।

  • কেন এবং কীভাবে আমেরিকা পালটা জবাব দিয়েছে?

আন্তর্জাতিক শহর হিসাবে হংকংয়ের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সম্পর্ক রয়েছে যেমন ভারত এবং অ্যামেরিকা। হংকং পলিসি অ্যাক্টের আওতায় 1992 সালে অ্যামেরিকা তাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে। এই আইনের আওতায় হংকংকে অ্যামেরিকার তরফে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয় কারণ "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" পরিকাঠামোর আওতায় এটি অভিনব স্বীকৃতি পেয়েছে । চিন যেহেতু নয়া আইন এনে জটিলতা তৈরির চেষ্টা করছে, তাই ট্রাম্প প্রশাসন পালটা জবাবে সেখানে সংবেদনশীল অ্যামেরিকাজাত প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে এবং এও ঘোষণা করছে যে চিনের ক্ষেত্রে তারা যেমন করে, তেমনই হংকংয়ের ক্ষেত্রেও তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আনবে । সোমবার মাইক পম্পেও বলেছেন, "আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপ নিতে । আমরা চিনের মূল ভূখণ্ড আর হংকংয়ে নিয়ন্ত্রিত পণে্যর রফতানিতে ফারাক করতে পারব না। আমরা চাই না, এই সব পণ্য গিয়ে পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে পড়ুক, যাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল যেনতেন প্রকারেণ CCP-এর আধিপত্য বজায় রাখা ।"

চিন হুমকি দিয়েছে মার্কিন নাগরিকদের ভিসা আটকে দেওয়া হবে। এতে দু’দেশের মধে্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা কয়েক দশকের মধে্য সবচেয়ে খারাপ স্তরে এসে পৌঁছেছে । অবস্থা এতটাই জটিল যে মনে হচ্ছে ছোটখাটো বাণিজ্য

যুদ্ধই শুরু হয়ে গিয়েছে । পম্পেও জানিয়েছেন, "আমাদের পদক্ষেপ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে । চিনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয় । কিন্তু যেহেতু চিন এখন হংকংকে "এক দেশ, এক ব্যবস্থা" হিসাবে ধরে নিয়েছে, তাই আমাদেরও তা করা উচিত। অ্যামেরিকা অন্যান্য দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি খতিয়ে দেখছে এবং হংকংয়ে বর্তমানে যা চলছে, তা বিশ্লেষণ করে আর যা যা করণীয়, তা ভবিষ্যতে করবে।"

দিল্লি,30 জুন: জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে হংকংয়ের মুখবন্ধ করছে চিন ৷ পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের দাবিতে হংকংজুড়ে গত কয়েক মাসে রাস্তায় নেমে যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদের কণ্ঠরোধ করতে চিনের মূল ভূখণ্ডে নতুন একটি বিতর্কিত আইন আনা হয়েছে, যার নাম জাতীয় নিরাপত্তা আইন । এই নয়া আইনে অপসরণ, পরাভব, সন্ত্রাস অথবা বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশ সংক্রান্ত যে কোনও কাজকে অপরাধমূলক হিসাবে ধরা হয়েছে । এনিয়ে চারদিকে ভয় ছড়িয়ে গিয়েছে যে অর্ধ স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলিতে আগামী দিনে নয়া আইনের আওতায় নাগরিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করা হবে। আর তা হবে এমন একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যস্থার অধীনে যারা ইতিমধে্যই দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগর এলাকায় তাইওয়ানের সঙ্গে এবং ভারতের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লাগোয়া এলাকায়, এলাকাবৃদ্ধির জন্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে । বর্তমান অচলাবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গত বছরে 9 হাজারের বেশি মানবাধিকারকর্মী এবং নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গত কয়েক সপ্তাহে এই আইনের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক নিন্দা হয়েছে, কিন্তু চিনের তরফে সব কিছুকেই খারিজ করে দেওয়া হয়েছে ৷ তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, এই দাবি তুলে। আজ সকালে বেজিংয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি অফ দ্য ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস সর্বসম্মতভাবে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ বিরোধী আইন’ পাস করেছে । এবার এটি হংকংয়ের মৌলিক আইনের তালিকায় যুক্ত হবে ।

এর ফলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে এবং আমেরিকার বিদেশমন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে বেজিংয়ের নেওয়া পদক্ষেপ ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারকে "ওই এলাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বুনিয়াদ নতুন করে

সাজাতে" বাধ্য করেছে । আমেরিকা বেজিংয়ের সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রসংঘের নথিবদ্ধ "সাইনো ব্রিটিশ জয়েন্ট ডিক্লেরাশন"-র আওতায় করা নিজেদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসা বলে অভিহিত করেছে । মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও সোমবার রাতে

বলেছেন, "যদি চিন হংকংবাসী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা পুনরায় অর্জন করতে চায়, তাহলে 1984 সালে রাষ্ট্রসংঘে নথিবদ্ধ "সাইনো—ব্রিটিশ জয়েন্ট ডিক্লেরেশন"-র আওতায় হংকংবাসী এবং ব্রিটেনের কাছে করা তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতিরক্ষা করতেই হবে।" ব্রিটেন এবং তাইওয়ান এর আগে বলেছিল যে নতুন আইন লাগু হলে চারদিকে যে কড়াকড়ি চলবে, সেই পরিস্থিতিতে তারা মানবাধিকারকর্মী এবং গণতন্ত্রের দাবিতে প্রতিবাদকারীদের আশ্রয় পেতে সাহায্য করবে।

  • হংকংয়ে মানুষ কেন রাস্তায় নেমেছিলেন?

গত বছর জুন মাসে প্রথম সর্বসমক্ষে আনা হয়েছিল প্রত্যর্পণ বিল । আর তার পরই অন্তত দশ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে। তাদের প্রতিবাদ ছিল বিলে প্রস্তাবিত "পলাতক’দের চিনের মূল ভূখণ্ডে নির্বাসিত করার বিরুদ্ধে । এই বিলকে হংকংয়ের "এক দেশ, দুই সিস্টেম" পরিকাঠামোর আওতায় দেওয়া বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতার আশ্বাসে সরাসরি ভান বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। পরে সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু সামাজিক অচলাবস্থা সেখানে চলতেই থাকে । এই নেতাহীন প্রতিবাদ আন্দোলন তখন ধাক্কা খায় যখন এরইমধে্য নভেম্বরে আয়োজিত স্থানীয় 18টি কাউন্সিলের মধে্য ভোটে 17টিই দখল করে নেন গণতন্ত্রপন্থী নেতারা । 2019 সালের জুন মাসে শুরু হওয়া গণতন্ত্রপন্থী এই প্রতিবাদ আন্দোলন এবং পরে চলতি বছরের মে মাসে "জাতীয় নিরাপত্তা আইন"-র খসড়া পেশের পর আন্দোলনের তীব্র আকার ধারণ করাকে বেজিং "পরাভব বিমূর্তকারী কাজকারবার যা বিনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে" এবং প্ররোচনামূলক এই ধরনের হিংসার ঘটনায় "বিদেশি শক্তি"-র হাত আছে বলে জানিয়েছে ।

  • প্রতিবাদকারীদের দাবি কী?

হংকংয়ের মানুষ রাস্তায় নেমে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ দেখিয়েছিলেন এই দাবিতে যে তাদের অধিকার যেন কখনওই মূল ভূখণ্ডের তরফে লঙ্ঘন করা না হয়। তারা জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে "না" করে দিয়েছে, যাকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। তারা চেয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার, যাতে তা গোটা জনজাতিকে তাদের নিজস্ব চিফ এগজ়িকিউটিভ নির্বাচন করার অধিকার দেয়। প্রতিবাদকারীদের এটাও দাবি ছিল যে নাগরিক বিক্ষোভকারীদের উপর হওয়া পুলিশি বর্বরতার ঘটনার

নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক। মূল ভূখণ্ড থেকে সরে আসার দাবি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবাদকারীদের ছিল না। নয়া নিরাপত্তা আইনের একটি সরকারি বয়ানের অপেক্ষা সাধারণ মানুষ এখনও করছে যদিও কিছু কিছু রিপোর্টে দাবি, এই আইনে মূল ভূখণ্ডের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে যেমন হংকংয়ের স্কুলগুলিতে জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে কোনও শিক্ষা বা পাঠ না দেওয়া । এই আইন লাগু করতে পারে কেবলমাত্র হংকং সরকার কিন্তু শি চিনপিংয়ের শাসনে কিছু কিছু

বিষয়ে হংকং কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদেরই প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হতে পারে। "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" অতীতে ব্রিটিশদের উপনিবেশ থাকা হংকংকে চিনের হাতে 1997 সালে পুনরায় তুলে দেওয়া হয়েছিল 1997 সালে "এক দেশ দুই ব্যবস্থা" পদক্ষেপের মাধ্যমে, বিশেষ কিছু অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে । "হংকং স্পেশাল অটোনোমাস রিজিয়ন" (HKSAR)- এর নিজস্ব বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনি ব্যবস্থা আছে, যা চিনের মূল ভূখণ্ডের থেকে আলাদা । চিন জনসমাবেশ করা এবং বক্তৃতা দেওয়ার স্বাধীনতার অধিকার দেয়। হংকং একটি মৌলিক আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা অনেকটা নিজস্ব একটি ক্ষুদ্র সংবিধানে মতোই চলে। এতে নিজস্ব আইনকানুন আছে, এমনকী জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও। প্রত্যর্পণের পর দু’দশকেরও বেশি সময় পর হংকংয়ে ফ্রি প্রেস আছে, স্বাধীন আদালত আছে এবং এমন কিছু আইন প্রণীত আছে, যা মূল ভূখণ্ডের সীমান্ত এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে মানা হয় না। প্রর্ত্যপণ বিলকে স্বৈরাচারী শি চিনপিং এবং তার দল, কমিউনিস্ট পার্টির তরফে স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলির বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসাবেই দেখা হয়েছিল এবং এর ফলে তাদের উপরও প্রভাব পড়ার প্রবল আশঙ্কা ছিল, যারা বেজিংয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। কিন্তু এখন জাতীয় নিরাপত্তা আইনকে দেখা হচ্ছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে যারা আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন চেয়েছে, তাদের প্রতি চিনের পালটা দেখে নেওয়ার বার্তা হিসাবে। বিশেষ করে অ্যামেরিকাকে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে, নতুন এই আইন বুধবার কার্যকরী হচ্ছে, যা ব্রিটেনের তরফে চিনের হাতে হংকংকে তুলে দেওয়ার বার্ষিক উদযাপদেনর আগেই হচ্ছে ।

  • কেন এবং কীভাবে আমেরিকা পালটা জবাব দিয়েছে?

আন্তর্জাতিক শহর হিসাবে হংকংয়ের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সম্পর্ক রয়েছে যেমন ভারত এবং অ্যামেরিকা। হংকং পলিসি অ্যাক্টের আওতায় 1992 সালে অ্যামেরিকা তাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে। এই আইনের আওতায় হংকংকে অ্যামেরিকার তরফে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয় কারণ "এক দেশ, দুই ব্যবস্থা" পরিকাঠামোর আওতায় এটি অভিনব স্বীকৃতি পেয়েছে । চিন যেহেতু নয়া আইন এনে জটিলতা তৈরির চেষ্টা করছে, তাই ট্রাম্প প্রশাসন পালটা জবাবে সেখানে সংবেদনশীল অ্যামেরিকাজাত প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি বন্ধ করে দিচ্ছে এবং এও ঘোষণা করছে যে চিনের ক্ষেত্রে তারা যেমন করে, তেমনই হংকংয়ের ক্ষেত্রেও তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আনবে । সোমবার মাইক পম্পেও বলেছেন, "আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপ নিতে । আমরা চিনের মূল ভূখণ্ড আর হংকংয়ে নিয়ন্ত্রিত পণে্যর রফতানিতে ফারাক করতে পারব না। আমরা চাই না, এই সব পণ্য গিয়ে পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে পড়ুক, যাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল যেনতেন প্রকারেণ CCP-এর আধিপত্য বজায় রাখা ।"

চিন হুমকি দিয়েছে মার্কিন নাগরিকদের ভিসা আটকে দেওয়া হবে। এতে দু’দেশের মধে্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা কয়েক দশকের মধে্য সবচেয়ে খারাপ স্তরে এসে পৌঁছেছে । অবস্থা এতটাই জটিল যে মনে হচ্ছে ছোটখাটো বাণিজ্য

যুদ্ধই শুরু হয়ে গিয়েছে । পম্পেও জানিয়েছেন, "আমাদের পদক্ষেপ শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে । চিনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয় । কিন্তু যেহেতু চিন এখন হংকংকে "এক দেশ, এক ব্যবস্থা" হিসাবে ধরে নিয়েছে, তাই আমাদেরও তা করা উচিত। অ্যামেরিকা অন্যান্য দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গি খতিয়ে দেখছে এবং হংকংয়ে বর্তমানে যা চলছে, তা বিশ্লেষণ করে আর যা যা করণীয়, তা ভবিষ্যতে করবে।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.